খবর প্রকাশ করায় ‘মিডল ইস্ট আই’ ব্লক
গাজায় ত্রাণ ঢুকতে মোটা অঙ্কের ফি নিচ্ছে জর্ডান

- Update Time : ০৮:৫২:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
- / ৪২ Time View
গাজায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সরবরাহের জন্য জর্ডান কর্তৃপক্ষের মোটা অঙ্কের ফি আদায় নিয়ে রিপোর্ট করার কয়েকদিন পর সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’সহ ১২টি ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, গাজায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সরবরাহ তদারকি করার সময় ‘হাশেমাইট কিংডম’ অতিরিক্ত ফি আদায় করেছে বলে অভিযোগ করে একটি তদন্ত প্রকাশ করা হয়। এর কয়েকদিন পরই মিডল ইস্ট আইয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয় জর্ডান কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, গাজায় প্রবেশকারী প্রতিটি ত্রাণ ট্রাকের জন্য এনজিওগুলোকে ২ হাজার ২০০ ডলার দিতে হচ্ছে। গাজার ওপর দিয়ে বিমান থেকে ত্রাণ ফেলতে জর্ডান কর্তৃপক্ষ ২ লাখ ডলার থেকে ৪ লাখ ডলার পর্যন্ত চার্জ করছে।
সূত্র অনুসারে, প্রতিটি বিমান আধ ট্রাকেরও কম সাহায্য বহন করলেও, সেগুলো এলোমেলোভাবে নিচে ফেলের জন্য প্রায় ২০০,০০০ ডলার এবং নির্দিষ্টভাবে ফেলার জন্য ৪০০,০০০ ডলার চার্জ করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার একদিন পর জর্ডান হাশেমাইট চ্যারিটি অর্গানাইজেশন (জেএইচসিও) মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে। জেএইচসিও মূলত দেশটির মধ্য দিয়ে সাহায্য পাঠানোর একমাত্র পথ হিসেবে কাজ করে।
তবে জেএইচসিও’র মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার খরচ মিডল ইস্ট আইয়ের রিপোর্টে উল্লেখিত খরচের চেয়ে কিছুটা বেশি। এলোমেলোভাবে ফেললে ২ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং নির্দিষ্টভাবে ফেলার জন্য ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত নিচ্ছে।
গত বুধবার গভীর রাতে জর্ডানের আল-দুস্তুর সংবাদপত্র জানিয়েছে, দেশটির মিডিয়া কমিশন ‘মিডিয়া বিষ ছড়ানো এবং জর্ডান ও এর জাতীয় প্রতীকগুলোকে আক্রমণ করার’ অভিযোগে মিডল ইস্টসহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট ব্লক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোট ১২টি ওয়েবসাইট ব্লক করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আরাবি পোস্ট, রাসিফ২২ এবং কায়রো-ভিত্তিক ‘রাসড’।
ব্লকের কারণ সম্পর্কে মিডল ইসট আইকে অবহিত করা হয়নি এবং জর্ডানের মিডিয়া কমিশন সংবাদমাধ্যমটির ফোনকল বা ই-মেইলের জবাব দেয়নি।
মিডল ইস্ট আইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান সম্পাদক ডেভিড হার্স্ট এই প্রবন্ধটির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, এটি একটি অনবদ্যভাবে সংগৃহীত এবং গবেষণামূলক প্রতিবেদন, যা গাজায় সাহায্য প্রদানকারী যে কোনো দাতার জন্য আগ্রহের বিষয় এবং তাই এটি জনসাধারণের জন্য তীব্র তাৎপর্যপূর্ণ। জর্ডান সরকার মিডল ইস্ট সাই-এর ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ব্লক করে নিজের কোনো উপকার করছে না। কারণ জর্ডানবাসীরা এখনো আমাদের বিষয়বস্তু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাবে এবং আমরা তাদের সরকারের কাছে সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকব।
৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর থেকে জর্ডান ফিলিস্তিনিপন্থী হামাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু করেছে,। শত শত মানুষকে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, জর্ডান কর্তৃপক্ষ কমপক্ষে ১,৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভে পুলিশকে লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে দেখা গেছে।
সেই সঙ্গে জর্ডানের বিতর্কিত সাইবার অপরাধ আইনের অধীনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিলিস্তিনপন্থী বক্তব্য পোস্ট করার জন্য বহু লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছর, জর্ডানের কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক হিবা আবু তাহাকে সাইবার অপরাধ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়।
আরেকটি বিষয় উঠেছে একটি তদন্ত প্রতিবেদন থেকে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, জর্ডানের কোম্পানিগুলো গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সময় জর্ডানের ভূখণ্ড দিয়ে ইসরায়েলে পণ্য পরিবহন করছিল।
২০১৪ সালে চালু হওয়া এই ‘মিডল ইস্ট আই’ বারবার মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু সরকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে, যার মধ্যে মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত।