ঢাকা ০১:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল

আন্তজাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ১০:২৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫৯ Time View

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। রোববার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা লড়াই বন্ধে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর ফলে উপত্যকাটিতে স্থায়ী শান্তির আশা দেখা দিয়েছিল। তবে এ ঘটনার পর সে আশা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে। ইসরায়েল ও হামাস এ হামলার দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে।

একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে হামাস হামলা চালিয়েছে। হামলায় রকেট, গ্রেনেড ও স্নাইপার ব্যবহার করেছে তারা। এটি যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। জবাবে ইসরায়েল রাফায় বিমান হামলা চালিয়েছে।

তবে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইজ্জাত আল রিশেক বলেন, তাঁরা যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু ইসরায়েল বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে বলে তাঁর অভিযোগ।

আল রিশেক বা ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা কেউই গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে গাজার গণমাধ্যম দপ্তর গতকাল শনিবার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ইসরায়েল ৪৭ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে। তাদের কাছে রাফায় সংঘর্ষের কোনো খবর নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা চুক্তিতে থাকা সব বিষয় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গাজা উপত্যকার সব এলাকায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা। আমাদের কাছে রাফায় সংঘর্ষের কোনো খবর নেই। কারণ, এগুলো দখলদার বাহিনীর (ইসরায়েল) নিয়ন্ত্রণাধীন রেড জোন। গত মার্চ মাস থেকে সেখানে আমাদের অবশিষ্ট গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য হামাসকে অভিযুক্ত করেছেন।

এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। তিনি গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীদের স্থাপনা লক্ষ্য করে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত মিসরের সঙ্গে রাফা সীমান্ত ক্রসিংসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ফলে দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজা উপত্যকায় বড় পরিসরে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাফা সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ থাকবে। সোমবার থেকে মিসরে ফিলিস্তিনের দূতাবাস আবারও চালু হচ্ছে—এমন ঘোষণা আসার পরপরই ইসরায়েল এ কথা জানিয়ে দেয়।

তবে হামাস বলেছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় তাদের কাছে থাকা জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর করতে অনেক দেরি হতে পারে। সংগঠনটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ হলে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এর ফলে মরদেহ শনাক্তে ফরেনসিক টিমের প্রবেশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। এর জেরে ওই দিন থেকেই গাজায় নৃশংস হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ অবসানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর আগে কয়েক ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দেয় হামাস।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাসের কাছে থাকা অবশিষ্ট জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ইসরায়েলের কাছে ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়। বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এখনো হামাসের কাছে ৪৮ জিম্মি রয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

গাজায় আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল

আন্তজাতিক ডেস্ক
Update Time : ১০:২৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। রোববার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা লড়াই বন্ধে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর ফলে উপত্যকাটিতে স্থায়ী শান্তির আশা দেখা দিয়েছিল। তবে এ ঘটনার পর সে আশা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে। ইসরায়েল ও হামাস এ হামলার দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে।

একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে হামাস হামলা চালিয়েছে। হামলায় রকেট, গ্রেনেড ও স্নাইপার ব্যবহার করেছে তারা। এটি যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। জবাবে ইসরায়েল রাফায় বিমান হামলা চালিয়েছে।

তবে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইজ্জাত আল রিশেক বলেন, তাঁরা যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু ইসরায়েল বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে বলে তাঁর অভিযোগ।

আল রিশেক বা ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা কেউই গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে গাজার গণমাধ্যম দপ্তর গতকাল শনিবার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ইসরায়েল ৪৭ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে। তাদের কাছে রাফায় সংঘর্ষের কোনো খবর নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা চুক্তিতে থাকা সব বিষয় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গাজা উপত্যকার সব এলাকায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা। আমাদের কাছে রাফায় সংঘর্ষের কোনো খবর নেই। কারণ, এগুলো দখলদার বাহিনীর (ইসরায়েল) নিয়ন্ত্রণাধীন রেড জোন। গত মার্চ মাস থেকে সেখানে আমাদের অবশিষ্ট গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য হামাসকে অভিযুক্ত করেছেন।

এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। তিনি গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীদের স্থাপনা লক্ষ্য করে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত মিসরের সঙ্গে রাফা সীমান্ত ক্রসিংসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ফলে দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজা উপত্যকায় বড় পরিসরে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাফা সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ থাকবে। সোমবার থেকে মিসরে ফিলিস্তিনের দূতাবাস আবারও চালু হচ্ছে—এমন ঘোষণা আসার পরপরই ইসরায়েল এ কথা জানিয়ে দেয়।

তবে হামাস বলেছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় তাদের কাছে থাকা জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর করতে অনেক দেরি হতে পারে। সংগঠনটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ হলে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এর ফলে মরদেহ শনাক্তে ফরেনসিক টিমের প্রবেশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। এর জেরে ওই দিন থেকেই গাজায় নৃশংস হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ অবসানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর আগে কয়েক ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দেয় হামাস।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাসের কাছে থাকা অবশিষ্ট জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ইসরায়েলের কাছে ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়। বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এখনো হামাসের কাছে ৪৮ জিম্মি রয়েছেন।