ঢাকা ০৪:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় দেবে গেছে সেতুর পিলার

মাইদুল ইসলাম,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : ১২:১৮:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪
  • / ১০ Time View

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট এলাকায় কাজ শেষ না হতেই দেবে গেছে সেতু। মঙ্গলবার বিকেলে তোলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট এলাকায় কাজ শেষ না হতেই দেবে গেছে সেতু।

সোমবার (২৪ জুন) রাতে সেতুর মাঝখানে চারটি সিসি পিলার দেবে যায়।

মঙ্গলবার (২৫জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে লোকজন চলাচল করছেন। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। স্রোত বাড়লেই সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর গাফিলতিতে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই মাঝখানের অংশ দেবে গেছে। সঠিক নিয়মে কাজ করলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতো না।

 

এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট থেকে নৌকাযোগে নদী পারাপার হতেন। দুই পাশের ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা। স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেলকা ঘাট এলাকায় একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে।

 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা। ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে এই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ।

 

এ পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সিসি পিলারের ওপর দুই পাশে ঢালাই দেওয়া হয়। সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্ল্যাবের পরিবর্তে কাঠ দেওয়া হয়েছে। সেতুর দুই পাশে নিরাপত্তামূলক প্রাচীর দেওয়া হয়নি। প্রায় চার ফুট উচ্চতার পিলার দেওয়া আছে। এ অবস্থায় সেতুর ওপর দিয়ে স্থানীয় লোকজন যাতায়াত শুরু করেন। সাইকেল ও রিকশা পারাপার হতে থাকে।

বেলকা এলাকার স্কুলশিক্ষক লেলিন মিয়া বলেন, ‘আগে এখানে কোনো সেতু ছিল না। নৌকা দিয়ে পার হতে হতো। এতে সাধারণের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এবার একটি কাঠের সেতু নির্মিত হচ্ছে জেনে খুশি হয়েছিলাম। এখন দেখছি, নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেবে পড়েছে।’

 

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজের মালিক ছানা মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

 

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে। তাই কাজটি শেষ করতে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে বারবার জানালেও কোন সুফল হয়নি।

 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মান্নাফ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

সচেতন মহল বলছেন, সরকার যেখানে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে কতিপয়শ্রেণীর লোভীদের কারণে উন্নয়ন কাজে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে কাজের ক্ষতি করে। আমরা চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে উন্নয়ন কাজে ফাঁকি দিতে না পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

গাইবান্ধায় দেবে গেছে সেতুর পিলার

Update Time : ১২:১৮:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট এলাকায় কাজ শেষ না হতেই দেবে গেছে সেতু। মঙ্গলবার বিকেলে তোলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট এলাকায় কাজ শেষ না হতেই দেবে গেছে সেতু।

সোমবার (২৪ জুন) রাতে সেতুর মাঝখানে চারটি সিসি পিলার দেবে যায়।

মঙ্গলবার (২৫জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে লোকজন চলাচল করছেন। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। স্রোত বাড়লেই সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর গাফিলতিতে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই মাঝখানের অংশ দেবে গেছে। সঠিক নিয়মে কাজ করলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতো না।

 

এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট থেকে নৌকাযোগে নদী পারাপার হতেন। দুই পাশের ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা। স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেলকা ঘাট এলাকায় একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে।

 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা। ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে এই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ।

 

এ পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সিসি পিলারের ওপর দুই পাশে ঢালাই দেওয়া হয়। সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্ল্যাবের পরিবর্তে কাঠ দেওয়া হয়েছে। সেতুর দুই পাশে নিরাপত্তামূলক প্রাচীর দেওয়া হয়নি। প্রায় চার ফুট উচ্চতার পিলার দেওয়া আছে। এ অবস্থায় সেতুর ওপর দিয়ে স্থানীয় লোকজন যাতায়াত শুরু করেন। সাইকেল ও রিকশা পারাপার হতে থাকে।

বেলকা এলাকার স্কুলশিক্ষক লেলিন মিয়া বলেন, ‘আগে এখানে কোনো সেতু ছিল না। নৌকা দিয়ে পার হতে হতো। এতে সাধারণের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এবার একটি কাঠের সেতু নির্মিত হচ্ছে জেনে খুশি হয়েছিলাম। এখন দেখছি, নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেবে পড়েছে।’

 

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজের মালিক ছানা মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

 

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে। তাই কাজটি শেষ করতে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে বারবার জানালেও কোন সুফল হয়নি।

 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মান্নাফ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

সচেতন মহল বলছেন, সরকার যেখানে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে কতিপয়শ্রেণীর লোভীদের কারণে উন্নয়ন কাজে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে কাজের ক্ষতি করে। আমরা চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে উন্নয়ন কাজে ফাঁকি দিতে না পারে।