গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে আজ
- Update Time : ১১:২৫:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
- / ৩৩৪ Time View
বহুলপ্রত্যাশিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ঘোষণা আজই আসতে পারে। এ উদ্দেশ্যে বেলা ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংবাদ সম্মেলন থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘোষণাও আসবে। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ঘোষণা ছাড়াও আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট করার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। এছাড়া গণভোট ও জুলাই সনদ নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কয়েকদিন ধরে যে বিরোধ দেখা দিয়েছে, এরও নাটকীয় সমাধান মিলতে পারে আজ। পর্দার আড়ালে এমন আশার আলো দৃশ্যমান হচ্ছে। যুগান্তরের কাছে এমনটিই দাবি করে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।
এদিকে গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে রোববারও বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতাদের একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে দেখা গেছে। কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলেননি। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে। এই যখন অবস্থা, তখন মূল দ্বন্দ্ব হয়ে দেখা দিয়েছে নোট অব ডিসেন্ট (বিভিন্ন দলের আপত্তি)। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এমন কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আপত্তি দিয়েছে। জুলাই সনদের ৮৪টি প্রস্তারের মধ্যে ৬১টি প্রস্তাবেই কোনো না কোনো দলের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে মৌলিক ২০টি প্রস্তাবের ৯টিতেই বিএনপির আপত্তি আছে।
এছাড়া সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জামায়াত জোরালো আপত্তি ও যুক্তি উপস্থাপন করলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট মেনে নেবে।
জনস্বার্থের ইস্যুতে নোট অব ডিসেন্ট : নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া ৬১টি প্রস্তাবের কোনোটিতে পূর্ণাঙ্গ এবং কোনোটিতে আংশিক নোট অব ডিসেন্ট আছে। যেমন: আগামী সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবে সব দল রাজি। কিন্তু কমিশনের সিদ্ধান্ত উচ্চকক্ষ গঠন হবে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে। তবে পিআরের ব্যাপারে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। সনদে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্যের কথা বলা হয়েছে। সেখানে কমিশনের সিদ্ধান্ত-বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, কম্পোট্রলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, আইন কমিশন ও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নিয়োগ সরকারের হাতে থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়াই বিশেষ সার্চ কমিটির মাধ্যমে এগুলো রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। বিএনপি এখানে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত একই ব্যক্তি সরকারপ্রধান, দলীয় প্রধান এবং সংসদনেতা থাকতে পারবেন না। এছাড়াও আইনজীবীরা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। এ দুই প্রস্তাবে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকারের আর্থিক স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। এখানে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে জামায়াত। যেসব সরকারি কর্মচারী স্থানীয় প্রশাসনের অধীনে কাজ করেন, তারা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন। এখানে আপত্তি দিয়েছে জামায়াত। সংসদে নারী আসন নিয়ে একটি প্রস্তাবে চরমোনাই ও খেলাফত নেজামে ইসলামের আপত্তি আছে। তবে এনসিপি কোনো প্রস্তাবে আপত্তি দেয়নি।
বিএনপির যত অভিযোগ : সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন দেশ-জাতির সঙ্গে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কারণ, তারা যে সনদে স্বাক্ষর করেছেন, সুপারিশে ঐকমত্য কমিশন কিছু বদলে দিয়েছে। বিএনপিসহ অন্যান্য দলের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট জুলাই সনদে রাখা নেই। অফিস-আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রাখার বিধানটি বিলুপ্ত করার বিষয়ে সব দল একমত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কমিশনের সুপারিশে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর বিধানটি বিলুপ্ত করার বিষয় সনদে রাখা হয়নি। এছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সুপারিশে যুক্ত করা হয়েছে-এমন বিষয়গুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করা হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে পরবর্তী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে। এখানে তাদের সম্মতি ছিল না।
জামায়াত যা বলছে : জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, জুলাই সনদে বিএনপি যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, এর মাধ্যমে দলটির স্বৈরাচার হওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তারা ভেতরে ভেতরে আবার স্বৈরাচার হওয়ার একটা খায়েশ পোষণ করছে। যে কারণে স্বৈরাচার হওয়ার যে রাস্তা আমরা বন্ধ করতে চাচ্ছিলাম, তারা করতে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, বিএনপি আজ কী নিয়ে লড়াই করছে। ৩১টি দল মিলে আমরা সংস্কারের একটি জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। বিএনপি সনদে সই করেছে।
তিনি বলেন, ওনাদের কেউ ধরে-বেঁধে এনেছেন, জোর করে সই করিয়েছে-এমন নয়। ওনারা ঈদের মতো খুশি মনে সনদে সই করেছেন। এখন এটি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন না। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্য সংস্কার অনিবার্য। এখানে আমরা কোনো আপস মানি না। এছাড়াও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় দলটি।
তবু দ্বন্দ্ব চায় না এনসিপি : রোববার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতকে উদ্দেশ করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এক দল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের শুরু থেকেই মৌলিক বিষয়গুলোয় নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছে। ফলে সংস্কারের পক্ষে তারা কতটুকু আছে, এ বিষয়ে জনগণের ভেতর প্রশ্ন আছে-আমাদের কাছেও প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে জামায়াতের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে, নির্বাচনকে পেছানোর কোনো দুরভিসন্ধি তাদের আছে কি না। এছাড়াও গণভোট আগে হবে, না নির্বাচনের দিন হবে-এ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত আবার একটা দ্বন্দ্বে চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘সনদে কী কী সংস্কার হবে, কী কী প্রস্তাব থাকবে এবং সেটার আইনি ভিত্তিটা কীভাবে হবে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আদেশ জারি করবেন কি না-এগুলো প্রধান ইস্যু। এ জায়গাগুলোয় একমত হলে গণভোট আমরা নির্বাচনের দিনও করতে পারি, আগেও করতে পারি। তবে এ ইস্যুতে দুই দল বিএনপি ও জামায়াত দ্বন্দ্বে জড়াক, তাও আমরা চাই না।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্র সংস্কারে জুলাই সনদে ৮৪টি প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধান সংশোধনে রয়েছে ৪৮টি প্রস্তাব। আর এ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতসহ ২৫টি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। এরপর ২৮ অক্টোবর সনদ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ করেছে ঐকমত্য কমিশন। সুপারিশগুলো তিন ভাগে বাস্তবায়ন হবে। ৯টি নির্বাহী আদেশে, ২৭টি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এবং সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাব গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। এছাড়াও পরবর্তী সংসদ দুটি দায়িত্ব পালন করবে। প্রথমত সংবিধান সংস্কার পরিষদ, দ্বিতীয়ত নিয়মিত আইনসভা। সুপারিশে আরও বলা হয়, আগামী সংসদে নির্বাচিত সদস্যরা প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই অনুসারে সংবিধান সংশোধন করবেন। এ সময়ের মধ্যে তারা সংবিধান সংশোধনে ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জুলাই সনদের প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। এরপর ৪৫ দিনের মধ্যে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। এক্ষেত্রে কোনো দলের নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) আমলে নেওয়া হয়নি। সুপারিশে আরও বলা হয়, সনদ বাস্তবায়নে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে সরকার একটি আদেশ জারি করবে। আদেশের নাম হবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়
























































































































































