গণপূর্তে একটি অনিয়ম ঢাকতে আরেকটি অনিয়ম
- Update Time : ০৭:০০:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৬৯ Time View
প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে শামীম আখতারকে সরিয়ে ৫ জনকে ডিঙ্গিয়ে রুটিন দায়িত্ব পেলেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী
গণপূর্ত অধিদপ্তরের চলতি দায়িত্বের প্রধান প্রকৌশলী কথিত পীর মোহাম্মাদ শামীম আখতারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে তাঁর মূল পদ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে রিজার্ভে নেয়া হয়েছে। নিয়ম বহির্ভুতভাবে প্রায় পাঁচ বছর গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে চলতি দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
শামীম আখতারকে সরিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গণপূর্ত মেট্টো জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরীকে। এই দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। পাঁচজনকে ডিঙ্গিয়ে (সুপারসিড) প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব দেয়ায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বলা হচ্ছে, একটি অনিয়ম ঢাকতে আরেকটি অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
গণপূর্ত ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা খালেকুজ্জামানের চাকরিজীবনের বড় সময় কেটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। স্ত্রী-সন্তান অস্ট্রেলিয়ায় থাকায় সেখানে তিনি বহুবার যাতায়াত করেন। তবে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে উচ্চতর শিক্ষাছুটির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর লঘুদণ্ড দেয় পূর্ত মন্ত্রণালয়। তাঁর বেতন স্কেলও এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। এরপর নিজ জেলার বাসিন্দা ফরিদপুরের প্রভাবশালী সাবেক দুদক কমিশনার মোজ্জাম্মেল হক খানের মাধ্যমে জোরালো তদবির শুরু করেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী। একপর্যায়ে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা সাবেক পূর্তসচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের আমলে একটি আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন সচিব এ বিষয়ে জনপ্রশাসনের মতামত চান। জনপ্রশাসন তাদের মতামতে তাঁর জ্যেষ্ঠতা স্থগিত রাখার সুপারিশ করে। কিন্তু দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের চাপ এবং বিপুল অর্থের বিনিময়ে সাবেক সচিব ও গোপালগঞ্জের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি শহীদ উল্লা খন্দকার তাঁকে পদোন্নতি দেন।
পরবর্তীতে শহীদ উল্লাহ খন্দকারের সঙ্গে খালেকুজ্জামান চৌধুরীর এতোটাই ঘনিষ্ঠতা হয় যে, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত শহীদ উল্লা খন্দকারের ছেলেকে দেখভাল করা এবং তার ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পান তিনি। পলাতক সংসদ সদস্য শেখ জুয়েল ও বহুল আলোচিত শম্পা ভাবীর তদ্বিরে খালেকুজ্জামান চৌধুরীকে খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী করা হয়। বিগত সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় গোপালগঞ্জের উন্নয়ন প্রকল্প দেখভাল করার জন্য তাকে গোপালগঞ্জ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী করা হয়।
১৫তম বিসিএস-এ গণপূর্ত অধিদপ্তরে ১৪ জন প্রকৌশলী যোগ দেন। যার মধ্যে মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরীর অবস্থান ১৩তম। ইতিমধ্যে অনেকেই অবসরে গেছেন। কয়েকজন চলে গেছেন ক্যাডার পরিবর্তন করে। বর্তমানে মাত্র ৭ জন কর্মকর্তা রয়েছেন ১৫ ব্যাচের। এর মধ্যে ৬ষ্ঠতম হলেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী। তাকেই প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পাঁচ জনকে ডিঙ্গিয়ে।
একইভাবে বিগত সরকারের আমলে প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলমকে সরিয়ে মেধাতালিকায় আট নম্বরে থাকা মো. শামীম আখতারকে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ৭ জনকে ডিঙ্গিয়ে। বিগত সরকারের অনিয়মের পথেই হেটে অন্তবর্তীকালীন সরকার নানা অভিযোগে অভিযুক্ত খালেকুজ্জামানকে রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
২৮ অক্টোবর সকালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব তাসনিম ফারহানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মোহাম্মদ শামীম আখতারকে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রিজার্ভ) পদে পদায়ন করা হয়। একই প্রজ্ঞাপনে মো. খালেকুজ্জামন চৌধুরীকে প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়। গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী খালেকুজ্জামান চৌধুরীর আগে রয়েছেন মো. আশরাফুল আলম, ড. মো. মঈনুল ইসলাম, মো. শামছুদ্দোহা ও মো. আবুল খায়ের। কিসের জোরে তিনি সবাইকে ডিঙ্গিয়ে গেলেন সে প্রশ্ন উঠছে বার বার।
২০২৪ সালের শুরুতে রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে কঙ্কালসার হয়ে যায় গ্রিন কোজি কটেজ। সাততলার এই বাণিজ্যিক ভবনে ওই বছর প্রাণ হারিয়েছিল ৪৬ জন; দগ্ধ ও আহত হয় আরও ১৩ জন। তখন ভবনের নকশা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। রাজউকের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে এই ভবনের নকশার অনুমোদনে কাজ করেছিলেন এই খালেকুজ্জামান চৌধুরী। অপ্রশস্ত সিড়ি, জরুরি চলাচল নির্গমনের ব্যবস্থা না রেখেই বিপুল অর্থের বিনিময়ে এই নকশা অনুমোদনে কাজ করা খালেকুজ্জামান চৌধুরীই দেশের সবচেয়ে পুরাতন প্রকৌশল সংস্থার প্রধান চেয়ারে বসলেন। এর আগে তাকে গণপূর্তের টাকার খনি হিসেবে পরিচিত মেট্টো জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে পদায়ন করা হয়েছিল। এই টাকার খনির জোরেই কী তিনি সবাইকে টপকে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব পেয়েছেন কি-না তা নিয়েই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফিরোজ হাসান জানান, মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পর দুপুরে নিজ কার্যালয়ে দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন মোহাম্মদ শামীম আখতার। বিকেলে সহকর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রুটিন দায়িত্বের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরীকে।







































































































































































































