ঢাকা ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়া মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:৩১:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৭ Time View

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরে। এখন মূল সমস্যা হচ্ছে, একটির জটিলতা কেটে গেলে নতুন করে আরেকটি জটিলতা দেখা দেয়। দীর্ঘদিনের পুরোনো লিভারের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি নিয়ে উদ্বিগ্ন মেডিকেল বোর্ড।

মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে খালেদা জিয়ার জন্য প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক তাঁর সঙ্গে আছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা ও শর্মিলা রহমান, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা এবং স্টাফ রূপা আক্তার। বিএনপির চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা সার্বক্ষণিক পাশে আছেন। তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া।

শারীরিক অবস্থা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসার কথা ভাবছে না বোর্ড। গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর তাঁকে নেওয়া হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দেশি-বিদেশি দুই ডজনের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনছে।

সোমবার সন্ধ্যায় বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, ‘ম্যাডামের উন্নতি আছে। তবে আহামরি বলা যাবে না। বয়সজনিত কারণে সেরে উঠতে সময় লাগবে। এই দফায় তাঁর উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। তাঁর মাল্টিপল ডিজিজ (বহুমুখী জটিলতা) থাকায় একটি রোগ থেকে সেরে উঠলে আরেকটি দেখা দেয়। লিভার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি জটিলতায় বেশ ভুগছেন। কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বর্ডার লাইন অতিক্রম করেছে বেশ আগেই। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখাই কষ্ট হচ্ছে। এখানে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। প্রতিনিয়ত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই কিডনির অবস্থা অবনতি হয়।’

তিনি বলেন, সিসিইউতে নেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্যারামিটারগুলো খারাপ আসছে না, তবে একেবারে ঝুঁকিমুক্তও হচ্ছেন না। সিসিইউতে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ড প্রতি রাতে বৈঠকে বসে, যেখানে প্রত্যেক চিকিৎসক আলাদা রোগ নিয়ে আলোচনা করেন।

ওই চিকিৎসক আরও জানান, দেশে ফেরার পর বোর্ডে সশরীরে অংশ নেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। দিনের বেশির ভাগ সময় হাসপাতালে শাশুড়ির শয্যাপাশে কাটান। চিকিৎসার বিষয়গুলো তিনি সমন্বয় করেন। তিনি বেশ কয়েক দিন দেশেই থাকবেন।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের এক ডজন চিকিৎসক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারক করছে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ মঙ্গলবার আসছে না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সকালে তাদের ঢাকায় নামার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটর গতকাল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে মঙ্গলবারের ওই স্লট বাতিল করার আবেদন করেছে বলে শাহজালাল বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তাঁর লন্ডনযাত্রার বিষয়টি নির্ভর করছে শারীরিক অবস্থার ওপর। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তাঁর চিকিৎসক দল।

Please Share This Post in Your Social Media

খালেদা জিয়া মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১০:৩১:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরে। এখন মূল সমস্যা হচ্ছে, একটির জটিলতা কেটে গেলে নতুন করে আরেকটি জটিলতা দেখা দেয়। দীর্ঘদিনের পুরোনো লিভারের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি নিয়ে উদ্বিগ্ন মেডিকেল বোর্ড।

মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে খালেদা জিয়ার জন্য প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক তাঁর সঙ্গে আছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা ও শর্মিলা রহমান, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা এবং স্টাফ রূপা আক্তার। বিএনপির চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা সার্বক্ষণিক পাশে আছেন। তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া।

শারীরিক অবস্থা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসার কথা ভাবছে না বোর্ড। গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর তাঁকে নেওয়া হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দেশি-বিদেশি দুই ডজনের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনছে।

সোমবার সন্ধ্যায় বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, ‘ম্যাডামের উন্নতি আছে। তবে আহামরি বলা যাবে না। বয়সজনিত কারণে সেরে উঠতে সময় লাগবে। এই দফায় তাঁর উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। তাঁর মাল্টিপল ডিজিজ (বহুমুখী জটিলতা) থাকায় একটি রোগ থেকে সেরে উঠলে আরেকটি দেখা দেয়। লিভার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি জটিলতায় বেশ ভুগছেন। কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বর্ডার লাইন অতিক্রম করেছে বেশ আগেই। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখাই কষ্ট হচ্ছে। এখানে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। প্রতিনিয়ত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই কিডনির অবস্থা অবনতি হয়।’

তিনি বলেন, সিসিইউতে নেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্যারামিটারগুলো খারাপ আসছে না, তবে একেবারে ঝুঁকিমুক্তও হচ্ছেন না। সিসিইউতে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ড প্রতি রাতে বৈঠকে বসে, যেখানে প্রত্যেক চিকিৎসক আলাদা রোগ নিয়ে আলোচনা করেন।

ওই চিকিৎসক আরও জানান, দেশে ফেরার পর বোর্ডে সশরীরে অংশ নেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। দিনের বেশির ভাগ সময় হাসপাতালে শাশুড়ির শয্যাপাশে কাটান। চিকিৎসার বিষয়গুলো তিনি সমন্বয় করেন। তিনি বেশ কয়েক দিন দেশেই থাকবেন।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের এক ডজন চিকিৎসক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারক করছে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ মঙ্গলবার আসছে না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সকালে তাদের ঢাকায় নামার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটর গতকাল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে মঙ্গলবারের ওই স্লট বাতিল করার আবেদন করেছে বলে শাহজালাল বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তাঁর লন্ডনযাত্রার বিষয়টি নির্ভর করছে শারীরিক অবস্থার ওপর। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তাঁর চিকিৎসক দল।