ঢাকা ১০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ‘ধর্ষণের আলামত মেলেনি’: চিকিৎসক

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫২ Time View

খাগড়াছড়িতে যে মারমা কিশোরী দলবদ্ধ ‘ধর্ষণের’ শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে, ছয়দিন পর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে ‘ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি’ বলে জানিয়েছেন পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক।

আদিবাসী এ কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উত্তেজনা, অবরোধ আর সহিংসতা ছড়িয়েছে; গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারির মধ্যে গুলিতে তিনজনের প্রাণ গেছে।

মঙ্গলবার ধর্ষণের আলামত পরীক্ষায় তিন চিকিৎসক দলটির প্রধান খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) জয়া চাকমা বলেছেন, “আমরা মেডিকেলে রির্পোট জমা দিয়েছি। সবধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। কিন্তু আসলে ধর্ষণের কোনো আলামত পাইনি।”

তিনি বলেন, “আমাদের টিমে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মোশারফ হোসেন ও নাহিদা আকতার ছিলেন।”

স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে আলামত পরীক্ষার ১০টি সূচকের সবকটিতে স্বাভাবিক লেখা রয়েছে ।

প্রতিবেদনে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে সেই মারমা কিশোরীকে ‘ধর্ষণ’ করা হয় বলে ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায়। এর চার দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। আর সেটি প্রকাশ্যে আসে দুদিন পর মঙ্গলবার।

এদিন রাতে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, “প্রতিবেদন আজকে (মঙ্গলবার) পেয়েছি। ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।”ধর্ষণের অভিযোগ থেকে খাগড়াছড়িতে ছড়ানো সহিংসতাকে ‘পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, “এটা ইস্যু করে পরিকল্পিতভাবে আন্দোলন করেছে। যারা জড়িত, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। ২৪ তারিখ থেকে জেলায় মিছিল মিটিং করা হয়েছে। অবরোধ দেওয়া হয়েছে। জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে। পূজার উৎসবের আমেজ নষ্ট হল অবরোধের কারণে। পর্যটক আসতে পারেনি।”সহিংসতায় প্রাণহানির কথা তুলে ধরে আরেফিন জুয়েল বলেন, “তিনটা জীবন ঝরে গেছে, যা খুবই দুঃখজনক। তাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।”

মারমা স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সদর থানায় মামলা হয়। পরের দিন ভোরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরই মধ্যে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় খাগড়াছড়িতে, যা পরে সহিংস হয়ে ওঠে।

১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি অতিরিক্ত সেনা ও বিজিবি মোতায়েনের পরও পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। রোববার ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেখানে গুলিতে নিহত হয় তিনজন।

মঙ্গলবার গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় সহিংসতার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের তথ্য দেন জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।

এদিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব যেন শান্তিপূর্ণভাবে না হতে পারে, সেজন্যই খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

দুর্গাপূজার অষ্টমীতে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে তিনি বলেন, “কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী চেষ্টা করেছিল যাতে পূজাটা ভালোভাবে না হয়। সেই সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করে দেওয়া হয়েছে।”উপদেষ্টা বলেন, “সন্ত্রাসীরা সব জায়গায় চেষ্টা করবে। সন্ত্রাসীদের মদদদাতা দেশের বাইরে রয়েছে।”

খাগড়াছড়ির ধর্ষণ ও সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় কয়েকজনকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কথাও বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

Please Share This Post in Your Social Media

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ‘ধর্ষণের আলামত মেলেনি’: চিকিৎসক

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
Update Time : ০৭:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

খাগড়াছড়িতে যে মারমা কিশোরী দলবদ্ধ ‘ধর্ষণের’ শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে, ছয়দিন পর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে ‘ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি’ বলে জানিয়েছেন পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক।

আদিবাসী এ কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উত্তেজনা, অবরোধ আর সহিংসতা ছড়িয়েছে; গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারির মধ্যে গুলিতে তিনজনের প্রাণ গেছে।

মঙ্গলবার ধর্ষণের আলামত পরীক্ষায় তিন চিকিৎসক দলটির প্রধান খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) জয়া চাকমা বলেছেন, “আমরা মেডিকেলে রির্পোট জমা দিয়েছি। সবধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। কিন্তু আসলে ধর্ষণের কোনো আলামত পাইনি।”

তিনি বলেন, “আমাদের টিমে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মোশারফ হোসেন ও নাহিদা আকতার ছিলেন।”

স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে আলামত পরীক্ষার ১০টি সূচকের সবকটিতে স্বাভাবিক লেখা রয়েছে ।

প্রতিবেদনে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে সেই মারমা কিশোরীকে ‘ধর্ষণ’ করা হয় বলে ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায়। এর চার দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। আর সেটি প্রকাশ্যে আসে দুদিন পর মঙ্গলবার।

এদিন রাতে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, “প্রতিবেদন আজকে (মঙ্গলবার) পেয়েছি। ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।”ধর্ষণের অভিযোগ থেকে খাগড়াছড়িতে ছড়ানো সহিংসতাকে ‘পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, “এটা ইস্যু করে পরিকল্পিতভাবে আন্দোলন করেছে। যারা জড়িত, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। ২৪ তারিখ থেকে জেলায় মিছিল মিটিং করা হয়েছে। অবরোধ দেওয়া হয়েছে। জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে। পূজার উৎসবের আমেজ নষ্ট হল অবরোধের কারণে। পর্যটক আসতে পারেনি।”সহিংসতায় প্রাণহানির কথা তুলে ধরে আরেফিন জুয়েল বলেন, “তিনটা জীবন ঝরে গেছে, যা খুবই দুঃখজনক। তাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।”

মারমা স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সদর থানায় মামলা হয়। পরের দিন ভোরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরই মধ্যে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় খাগড়াছড়িতে, যা পরে সহিংস হয়ে ওঠে।

১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি অতিরিক্ত সেনা ও বিজিবি মোতায়েনের পরও পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। রোববার ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেখানে গুলিতে নিহত হয় তিনজন।

মঙ্গলবার গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় সহিংসতার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের তথ্য দেন জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।

এদিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব যেন শান্তিপূর্ণভাবে না হতে পারে, সেজন্যই খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

দুর্গাপূজার অষ্টমীতে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে তিনি বলেন, “কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী চেষ্টা করেছিল যাতে পূজাটা ভালোভাবে না হয়। সেই সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করে দেওয়া হয়েছে।”উপদেষ্টা বলেন, “সন্ত্রাসীরা সব জায়গায় চেষ্টা করবে। সন্ত্রাসীদের মদদদাতা দেশের বাইরে রয়েছে।”

খাগড়াছড়ির ধর্ষণ ও সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় কয়েকজনকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কথাও বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।