কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন

- Update Time : ০৮:৫২:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
- / ২৪৮ Time View
পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের (২৪) জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ৯টায় রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামে জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আবু সাঈদ। জানাজায় ইমামতি করেন আবু সাঈদের আত্মীয় মো. সিয়াম মিয়া।
এ সময় মানুষের ঢল নামে। এর আগে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে আবু সাঈদের মরদেহ তার গ্রামে এসে পৌঁছে। মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শোক আর কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে যায়। সেখানে অপেক্ষমাণ ছিলেন শত শত মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। অর্থাভাবে কোনো ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তিনি। আবু সাঈদ ছোট থেকেই ছিল অত্যন্ত মেধাবী। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল সাঈদ। তাকে ঘিরে আকাশসম স্বপ্ন ছিল দরিদ্র মা-বাবার।
আবু সাঈদকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির। কারণ সাঈদ তার নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদূর পর্যন্ত এসেছিলেন। মেধা ও আচরণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিল সাঈদ। সেই ছেলেকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন মা মনোয়ারা বেগম।
জানা গেছে, ছোট থেকেই আবু সাঈদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তার ব্যবহারে তার প্রতি সবাই মুগ্ধ ছিল। তিনি স্থানীয় জুনুদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। পরে এলাকার খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকেও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন আবু সাঈদ। বেঁচে থাকলে আবু সাঈদ জীবনে অনেক বড় হতেন এবং পরিবারসহ এলাকার জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যান। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার শেলসহ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে মিছিলের সম্মুখ থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, মঙ্গলবার দুপুরে বেরোবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন আবু সাঈদ। এই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। এ কারণে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী বলেন, এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া আহত অবস্থায় আরও অনেকেই এসেছে। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে নিহত শিক্ষার্থী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গেছেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়