লোহাগাড়া ইউএনও কার্যালয়ের জারিকারক
কোটায় চাকরি, এখন কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বাবুল কান্তি
- Update Time : ১০:৪৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
- / ১১৮ Time View
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী জারিকারক বাবুল কান্তি নাথ। বাবা শ্যামাচরণ নাথ মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় ২০১১ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরি পান। চাকরির বেশির ভাগ সময় পার করেছেন নিজ উপজেলা লোহাগাড়ায়। একযুগের বেশি সময় একই কর্মস্থলে চাকরির সুবাদে নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাবুল কান্তি নাথের বাড়ি উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের পশ্চিম কলাউজানে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, তিন বছর পূর্ণ হলে অন্যত্র বদলি বাধ্যতামূলক হলেও বাবুল নানা কৌশলে দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে রয়ে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব ঘুষের বিনিময়ে তিনি বদলি ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। এক পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছর তাকে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় বদলি করা হয়। সেখানে যোগদানের কিছুদিন পর সংযুক্তিতে যোগদান করেন লোহাগাড়া উপজেলায়। যোগদানের পর আবারও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
অনিয়ম, তদবির-বাণিজ্য, অবৈধ বালু, পাহাড় কাটা ও ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার মাধ্যমে গড়েছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়। তা দিয়ে করেছেন আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি, একাধিক স্থানে নামে-বেনামে জায়গা কিনে করেছেন দোকানপাট, মৎস্যখামার, গবাদিপশুর খামার, ওয়ার্কশপ ও গ্যারেজ। রয়েছে দু’টি এস্কেভেটর ও দু’টি ডাম্পার গাড়ি। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান বাবুল।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিবারটি ছিল একটি আতঙ্কের নাম। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি ও মৎস্য ঘের দখল ও মারধরের অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলায় লোহাগাড়া থানায় দায়ের করা একটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি বাবুল।
বাবুল কান্তি নাথ ইউএনও’র মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও মামলার ভয় দেখিয়ে ইটভাটা, ডাম্পার মালিক, এস্কেভেটর মালিক, বালু উত্তোলন সিন্ডিকেট ও ভূমিদস্যু চক্রের কাছ থেকে কয়েক বছরে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আর এই টাকায় নিজ গ্রামে নামে-বেনামে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি। অর্ধকোটি টাকায় করেছেন বাড়ি।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জারিকারক বাবুল কান্তি নাথ ইউএনও’র মাধ্যমে অভিযানের ভয় দেখিয়ে বালু উত্তোলন চক্র, ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট, অবৈধ ইটভাটার মালিক, ডাম্পার ও এস্কেভেটর মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করেন। এতে তারা অতিষ্ঠ বলে জানান।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন বাবুল। কয়েক মাসের মধ্যে তিনি পদায়ন হন নিজ উপজেলায়। এরপর থেকেই তিনি একযুগ ধরে নিজ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। অবশ্য এর মধ্যে দু-একবার বদলির আদেশ আসলেও অদৃশ্য কারণ ও উচ্চ মহলের তদবিরে বদলির আদেশ ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে ছিল।
স্থানীয়রা বলেন, বাবুলের পরিবার এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ। আগে কী ছিল আর এখন কী হয়েছে তা সবার জানা। দুর্নীতি না করলে কি কেউ এত সম্পদের মালিক হতে পারে? অনিয়ম ও-দুর্নীতি ছাড়া একজন সরকারি কর্মচারীর এত সম্পদ অর্জন সম্ভব নয় বলে ও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জারিকারক বাবুল কান্তি নাথ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে দেশ থেকে চলে যাবার একটা ব্যবস্থা করে দেন। আমার টাকার প্রতি সবার লোভ পড়েছে।’
বদলি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘আদেশ আসার পরেও না ছাড়ার বিষয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ ভালো জানবেন। তাদের সাথে কথা বললে বিষয়টি বুঝতে পারবেন।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলামের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।







































































































































































































