বিএনপির মনোনয়নে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী শাহজাহান চৌধুরী
কে হবেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আগামীর কান্ডারি?
- Update Time : ১১:৪৮:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৫৯ Time View
কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনের উত্তাপ এখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। একদিকে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে তুঙ্গে। এরই ধারাবাহিকতায় আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনটি। প্রশ্ন একটাই—কে হবেন আগামীর কান্ডারি?
আসনের কাঠামো ও ভোটার সংখ্যা
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনটি ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী, মোট ভোটার সংখ্যা ৩,২৮,৩৮৯ জন। এর মধ্যে উখিয়া উপজেলায় ১,৪৭,৩১০ জন এবং টেকনাফ উপজেলায় ১,৮১,০৭৯ জন ভোটার রয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনটিকে “লক্ষ্মী আসন” বলা হয়—কারণ এই আসনে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, সেই দলই দেশের সরকার গঠন করেছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত।
১৯৭৯ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি দেশের কনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্বও পান। তাঁর নেতৃত্বেই কক্সবাজারে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি দৃঢ় হয়।
১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আ হ আ গফুর চৌধুরী নির্বাচিত হন।
১৯৮৮ সালে একই দলের সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল গনি বিজয়ী হন।
১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে আবারো ধানের শীষ প্রতীকে জয়ী হন শাহজাহান চৌধুরী।
১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনেও টানা তৃতীয়বার জয় পান এই বিএনপি নেতা।
একই বছরের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো শাহজাহান চৌধুরী জয় পান এবং পুনরায় বিএনপি সরকার গঠন করে।
২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহমান বদি এবং পরে তাঁর সহধর্মিণী শাহিন আকতার চৌধুরী টানা তিনবার জয়ী হন। বর্তমানে তিনিই কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য
অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান শাহজাহান চৌধুরী
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অভিজ্ঞ ও আলোচিত নাম।
তিনি একাধারে ইউপি চেয়ারম্যান, চারবারের সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ, এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্ব বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার সময় তিনি কক্সবাজার মহকুমা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন এবং পরবর্তীতে দুইবার জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিএনপির তৃণমূল পর্যায় থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত তাঁর জনপ্রিয়তা এখনো অটুট। রাজপথের লড়াইয়ে, সংগঠন গঠনে ও নেতাকর্মীদের পাশে থাকার কারণে দলের ভেতরে তিনি “নির্ভরতার প্রতীক” হিসেবে বিবেচিত।
বিএনপির মনোনয়নে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী
বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে এখনো পর্যন্ত শাহজাহান চৌধুরীর বিকল্প কোনো শক্তিশালী প্রার্থী গড়ে ওঠেনি। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, জনসংযোগ ও তৃণমূলের ভালোবাসা তাঁকে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে রেখেছে।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হয়—তাহলে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষেই।
মাঠে সরব শাহজাহান চৌধুরী
সাম্প্রতিক সময়েও উখিয়া-টেকনাফের প্রতিটি ইউনিয়নে গণসংযোগ, সমাবেশ ও দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
তাঁর নেতৃত্বে জেলা বিএনপি নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে সফল ভূমিকা রাখছে বলে দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
নেতাকর্মীদের মতে,
> “যে মানুষটি চারবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন, তিনিই আবারও ধানের শীষের কান্ডারি হতে পারেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কক্সবাজার-৪ আসনে সবসময় ব্যক্তিত্বভিত্তিক রাজনীতি বড় ভূমিকা রেখেছে। শাহজাহান চৌধুরীর নেতৃত্বগুণ, মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তা এবং ঐতিহাসিক ভূমিকা তাঁকে এখনো বিএনপির জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী করে রেখেছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রভাবও এই আসনে দৃঢ়। ফলে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে দুই শীর্ষ দলের অভিজ্ঞ নেতৃত্বের মধ্যেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে উত্তাপ বাড়ছে।
আওয়ামী লীগে যেমন চলছে নতুন মুখ নিয়ে আলোচনা, তেমনি বিএনপিতে এখনো একটিই নাম উচ্চারিত—জননেতা শাহজাহান চৌধুরী।
তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সংগঠনের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং জনগণের আস্থা—সবকিছু মিলিয়ে এখনো তিনি বিএনপির অপরিহার্য।







































































































































































































