কুমিল্লা ইপিজেডে রপ্তানিতে নতুন মাইলফলক

- Update Time : ১০:১৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ৯৯ Time View
রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়া এলাকা (ইপিজেড)। সম্প্রতি বিদায় হওয়া অর্থবছরে (২০২৪- ২৫) কুমিল্লা ইপিজেড থেকে ৯০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যা অতীতের যে কোনো অর্থ বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে কুমিল্লা ইপিজেডের এই সম্ভাবনা আরও বাড়তে পারে।
২০০০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্দেশে ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয় কুমিল্লা ইপিজেড। এই ইপিজেডে মোট প্লট সংখ্যা ২৪৩টি। দেশি-বিদেশি ৪৬টি কোম্পানি উৎপাদন করছে বিভিন্ন পণ্য। যা ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকার ১৭টি দেশে এখানে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, তাইওয়ান, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান উল্লেখযোগ্য।
বেপজা সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে কুমিল্লা ইপিজেডে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৬১.০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, রপ্তানি হয়েছে ৫৬৫.৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিনিয়োগ ৬৭.৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, রপ্তানি ৮১৪.৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিনিয়োগ ৫০ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, রপ্তানি ৭৯০ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, রপ্তানি ৭১১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ ২৫ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার, রপ্তানি ৯০১ দশমিক ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে পারে বলে আশা ইপিজেড কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কুমিল্লা ইপিজেডের কর্মচঞ্চলতা। হাজার হাজার শ্রমিকের ব্যস্ত পদচারণায় মুখর কুমিল্লা ইপিজেড। কলকারখানাগুলোতে মেশিনের শব্দে মুখর। শ্রমিকদের প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর ইপিজেডে কাজ করছেন ৫০ হাজার নিয়মিত শ্রমিক। এর বাইরে দিনমজুর, লোড-আনলোড, পরিবহন, নিরপাত্তাকর্মীসহ আরও হাজারো শ্রমিকের কর্মসংস্থান এই ইপিজেডে।
শ্রমিকদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী। প্রতি মাসে এখানকার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাবদ খরচ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। যা স্থানীয় অর্থনীতিকেও চাঙা করছে, কমেছে বেকারত্ব। এখানে কর্মসংস্থান পেয়ে পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন হাজারো শ্রমিক।
সালমা আক্তার নামের এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, আমি গত ৬ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। কাজের পরিবেশ খুবই ভালো। এখান থেকে রোজগার করে পরিবার চালাচ্ছি। আগে খুবই অর্থসংকটে ছিলাম। এখানে চাকরি নেওয়ার পর ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা করাতে পারছি। খুব ভালোভাবে সংসার চলছে।
শ্রুতি চাকমা নামের এক নারী শ্রমিক বলেন, আমার বাড়ি খাগড়াছড়ি। এখানে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। চাকরি করে বাবা-মাকে সহযোগিতা করতে পারছি। খুবই ভালো লাগছে।
সঞ্জয় চক্রবর্তী নামের এক শ্রমিক বলেন, এখানে চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে পেরেছি। এখানে কাজের মান খুবই ভালো, সবাই খুবই হেল্পফুল।
কুমিল্লা ইপিজেডে দেশি শ্রমিকদের পাশাপাশি ২৮৫ জন বিদেশিও কর্মরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। বিদেশি এসব শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই চীন ও তাইওয়ানের।
মেবেল নামের এক চাইনিজ নারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে বিদেশিদের জন্য কাজের পরিবেশ বেশ ভালো। এখানে নিরাপদে কাজ করা যায়। বাংলাদেশের শ্রমিকরা অনেক ইয়াং এবং এনার্জিটিক। বাংলাদেশে কাজ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।
হেলিক নামের এক চাইনিজ নারী বলেন, আমি এখানে ৪ বছরের মতো কাজ করছি। এখানে কাজ খুব ভালো হয়।
দেশি-বিদেশি শ্রমিকদের প্রতি কোম্পানিগুলোরও বেশ আন্তরিকতা রয়েছে। বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা যথাসময়ে প্রদানের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে নজর রয়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
পিওয়াই নামের একটি মার্কিন বিনিয়োগকারী আন্ডার গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম বলেন, এখানে ওয়ার্কারের ওয়ার্কফ্রেন্ডলি একটা এনভায়রনমেন্ট দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা শ্রমিকদের ওয়েলবিয়িং নিয়ে কাজ করছি। আমাদের ম্যানেজমেন্ট যথেষ্ট কনসার্ন আছে। শ্রমিকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সতর্ক।
কুমিল্লা ইপিজেড দেশের অর্থনীতিতে যেমন ভূমিকা রাখছে একইভাবে স্থানীয়ভাবে কুমিল্লার অর্থনীতিতেও বড় একটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। প্রতিমাসে শ্রমিকরা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা বেতন পাচ্ছেন। ৫০ হাজার শ্রমিকের প্রায় সবাই ইপিজেডের আশপাশের এলাকায় ভাড়ায় থাকছেন। দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আয়ের একটি অংশ কুমিল্লায় খরচ করছেন। এটা কুমিল্লার জন্য একটি অন্যরকম অর্থনীতির চালিকা শক্তি, দাবি করছে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, কুমিল্লা ইপিজেডে দেশের অন্যতম একটি ইপিজেড। সম্প্রতি বিদায় হওয়া অর্থবছরে কুমিল্লা ইপিজেডে ৯.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি হয়েছে। যা একটি রেকর্ড। ইপিজেডের ৪৬টি কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানিই রপ্তানির গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী অর্থবছরগুলোতে রপ্তানির সাফল্য বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি। শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য কুমিল্লা ইপিজেডে মেডিকেল সেন্টার করা হয়েছে। এখানে বিনামূল্যে শ্রমিকদের চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান করা হয়। আবার বেপজা স্কুল কলেজ রয়েছে। যেখানে শ্রমিক এবং কর্মচারীদের সন্তানরা ৫০ ভাগ ডিসকাউন্টে লেখাপড়া করতে পারছে। আমরা এই ধরনের কল্যাণমূলক কাজগুলো অব্যাহত রাখব।