ঢাকা ১২:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে শর্টকোড চালুর সিদ্ধান্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে বাস ট্র্যাকিং সিস্টেম ধর্ষণকারীর মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গাজীপুরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল নোয়াখালীতে নামাজ পড়তে গেলে মসজিদের শৌচাগারে শিশুকে বলৎকার বান্দরবানে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ৪ আসামীর যাবজ্জীবন, ১ লাখ টাকা জরিমানা ধর্ষণ বিরোধী স্লোগানে মুখরিত কুবি ক্যাম্পাস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কসহ ৭ জন কারাগারে মেয়েকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বাবাকে কুপিয়ে জখম কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগের টিকিট বাণিজ্য ধর্ষণের বিরুদ্ধে কুবিতে মানববন্ধন 

কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছনার ভিডিও ভাইরাল, যা জানা গেল

কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৯:০০:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১১২ Time View

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একজন মুক্তিযোদ্ধা হেনস্থার শিকার হয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাকে হেনস্থার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে ঘটনার তদন্ত ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে অবমাননার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় পুলিশকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগসহ নয়টি মামলা রয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা আইন হাতে তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

আব্দুল হাইকে লাঞ্ছনার ঘটনায় কয়েকজন জামায়াত কর্মীর নাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলেও স্থানীয় উপজেলা জামায়াতের আমির এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, তাদের দলের কেউ এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। উনআশি বছর বয়সী আব্দুল হাই বলেছেন, তিনি মনে করেন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণেই তাকে ছুরি ধরে গলায় জুতার মালা দিয়ে অসম্মান করা হয়েছে। আমি এবং আমার ছেলে নয় বছর ‘সাবেক এক মন্ত্রী’র কারণে এলাকায় থাকতে পারিনি। জামায়াতের কারও সঙ্গে কখনো আমার কোনো ঝামেলা হয়নি। এরপরেও তারা আমাকে অসম্মান করেছে মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই, বলছিলেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেছেন, তারা আব্দুল হাই ও অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

প্রসঙ্গত, কুমিল্লার এই চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগ আমলে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। আব্দুল হাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় সংসদ সদস্য ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চার নম্বর সেক্টরে একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে মৌলভীবাজার অঞ্চলে যুদ্ধ করেছিলেন চৌদ্দগ্রামের আব্দুল হাই। ওই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন চিত্তরঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত নামেই যিনি পরিচিত)। রবিবার দুপুরের দিকে স্থানীয় ১০/১২ জন সেখানকার কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাকে পেয়ে ঘিরে ধরে ও হেনস্থা করে।

এই হেনস্থার প্রায় পৌনে দুই মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে রবিবার রাত থেকেই। সেখানে দেখা যায় আব্দুল হাইয়ের গলায় জুতার মালা দিয়ে তাকে ধরে আনা হচ্ছে। লাঞ্ছনাকারীদের একজনই ভিডিওটি করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। ভিডিওতে তারা সবাই সেখানকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, লাঞ্ছনাকারীদের একজন আব্দুল হাইকে উদ্দেশ্য করে বলছেন- ‘পুরো গ্রামের মানুষের কাছে মাফ চাইতে পারবেন কি না। আরেকজন বলেন- ‘আপনি এই এলাকা থেকে চলে যাবেন। এসময় আব্দুল হাই নিজের বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে আরেকজনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায় – ‘আমরা থাকতে পারছি?’

এসময় একজনকে বলতে শোনা যায় – ‘বললে পুলিশ চলে আসবে। আব্দুল হাইকে ঘিরে ধরা অন্য একজন বলেন- ‘গত দশ বছর যেখানে ছিলেন সেখানে চলে যান। আরেকজন বলেন- ‘উনি আর এই এলাকায় থাকতে পারবেন না’। আরেকজনকে বলতে শোনা যায়-‘একদম কুমিল্লার বাইরে’। জানা যাচ্ছে ওই ঘটনার পরপরই আব্দুল হাই এলাকা ছেড়ে গেছেন। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছনার এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আবার কেউ কেউ ফেসবুকে আব্দুল হাইকে লাঞ্চনার পক্ষেও মন্তব্য করেছেন। আবার কেউ লিখেছেন, ‘তিনি বেআইনি কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে কথিত মব জাস্টিস কেন? সোমবার দুপুরে যখন আব্দুল হাইয়ের কথা হয় তখন তিনি কোন একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন চিকিৎসা নেয়ার জন্য।

আব্দুল হাই অভিযোগ করে বলেন, তাকে যারা লাঞ্ছনা করেছে তারা সবাই ‘স্থানীয় জামায়াত শিবিরের লোকজন। তিনি জানান, রোববার দুপুরে ওষুধ কেনার জন্য বাড়ির বাইরে গেলে কয়েকজন এসে স্কুলের সামনে তাকে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে জুতার মালা গলায় দিয়ে টেনে হিঁচড়ে তাকে সেখানকার শহীদ মিনারের সামনে নিয়ে যায়। তারা আমাকে টর্চার করেছে। আমাকে ছুঁড়ি ধরে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে অসম্মান করেছে। অথচ জামায়াতের কারও সাথে আমার কোন শত্রুতা ছিলো না। জামায়াত নেতা তাহের সাহেবের সঙ্গে আমি জেল খেটেছি।

আব্দুল হাই জানিয়েছেন, তার ছেলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছিলো এবং এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে তখনকার মন্ত্রী মুজিবুল হক তার (আব্দুল হাইয়ের) বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ নয়টি মামলা দিয়ে তাদের পরিবারকে এলাকা ছাড়া করেছিলো। এ ঘটনায় মামলা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা করে কী হবে? সবাই তো দেখেছে ঘটনা। সরকার চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারে। এ অসম্মানের পর আমার আর বেঁচে থেকেই লাভ কী! এ দেশের জন্যই কি যুদ্ধ করেছিলাম? চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাহফুজুর রহমান দাবি করেছেন, এ ঘটনার সাথে জামায়াতের কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করেছেন, এটি ওই এলাকার ইস্যু, সেখানকার প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে তার ঝামেলা আছে। আওয়ামী লীগের লোকেরাও আগে তার বাড়িঘর ভেঙ্গেছে। তাকে মেরেছে। এখন সম্ভবত তার আশেপাশের যারা থাকে তারাই ক্ষোভ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মাহফুজুর রহমান মনে করেন, এটা নিতান্তই ‘পারিবারিক ও সামাজিক’ সমস্যা, এবং এটি রাজনৈতিক বিষয় নয়। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলছেন, ঘটনাটি ইতোমধ্যেই তাদের নজরে এসেছে এবং এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করতে অভিযান চলছে। আমরা চেষ্টা করছি। স্থানীয় থানা পুলিশ জড়িতদের আটক করার চেষ্টা করছে। আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এর মোটিভ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো আশা করছি। আর চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন লাঞ্ছনার শিকার মুক্তিযোদ্ধার সাথে তার কথা হয়েছে।

ওনার বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ছিলো। তা না করে যেটি করা হয়েছে সেটি যে কোন মানুষের জন্যই অসম্মানজনক। আরো মুক্তিযোদ্ধারা এসেছেন। আমরা কথা বলেছি। আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে অবমাননার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

সুত্রঃ বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছনার ভিডিও ভাইরাল, যা জানা গেল

কুমিল্লা প্রতিনিধি
Update Time : ০৯:০০:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একজন মুক্তিযোদ্ধা হেনস্থার শিকার হয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাকে হেনস্থার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে ঘটনার তদন্ত ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে অবমাননার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় পুলিশকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগসহ নয়টি মামলা রয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা আইন হাতে তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

আব্দুল হাইকে লাঞ্ছনার ঘটনায় কয়েকজন জামায়াত কর্মীর নাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলেও স্থানীয় উপজেলা জামায়াতের আমির এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, তাদের দলের কেউ এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। উনআশি বছর বয়সী আব্দুল হাই বলেছেন, তিনি মনে করেন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণেই তাকে ছুরি ধরে গলায় জুতার মালা দিয়ে অসম্মান করা হয়েছে। আমি এবং আমার ছেলে নয় বছর ‘সাবেক এক মন্ত্রী’র কারণে এলাকায় থাকতে পারিনি। জামায়াতের কারও সঙ্গে কখনো আমার কোনো ঝামেলা হয়নি। এরপরেও তারা আমাকে অসম্মান করেছে মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই, বলছিলেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেছেন, তারা আব্দুল হাই ও অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

প্রসঙ্গত, কুমিল্লার এই চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগ আমলে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। আব্দুল হাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় সংসদ সদস্য ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চার নম্বর সেক্টরে একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে মৌলভীবাজার অঞ্চলে যুদ্ধ করেছিলেন চৌদ্দগ্রামের আব্দুল হাই। ওই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন চিত্তরঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত নামেই যিনি পরিচিত)। রবিবার দুপুরের দিকে স্থানীয় ১০/১২ জন সেখানকার কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাকে পেয়ে ঘিরে ধরে ও হেনস্থা করে।

এই হেনস্থার প্রায় পৌনে দুই মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে রবিবার রাত থেকেই। সেখানে দেখা যায় আব্দুল হাইয়ের গলায় জুতার মালা দিয়ে তাকে ধরে আনা হচ্ছে। লাঞ্ছনাকারীদের একজনই ভিডিওটি করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। ভিডিওতে তারা সবাই সেখানকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, লাঞ্ছনাকারীদের একজন আব্দুল হাইকে উদ্দেশ্য করে বলছেন- ‘পুরো গ্রামের মানুষের কাছে মাফ চাইতে পারবেন কি না। আরেকজন বলেন- ‘আপনি এই এলাকা থেকে চলে যাবেন। এসময় আব্দুল হাই নিজের বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে আরেকজনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায় – ‘আমরা থাকতে পারছি?’

এসময় একজনকে বলতে শোনা যায় – ‘বললে পুলিশ চলে আসবে। আব্দুল হাইকে ঘিরে ধরা অন্য একজন বলেন- ‘গত দশ বছর যেখানে ছিলেন সেখানে চলে যান। আরেকজন বলেন- ‘উনি আর এই এলাকায় থাকতে পারবেন না’। আরেকজনকে বলতে শোনা যায়-‘একদম কুমিল্লার বাইরে’। জানা যাচ্ছে ওই ঘটনার পরপরই আব্দুল হাই এলাকা ছেড়ে গেছেন। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছনার এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আবার কেউ কেউ ফেসবুকে আব্দুল হাইকে লাঞ্চনার পক্ষেও মন্তব্য করেছেন। আবার কেউ লিখেছেন, ‘তিনি বেআইনি কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে কথিত মব জাস্টিস কেন? সোমবার দুপুরে যখন আব্দুল হাইয়ের কথা হয় তখন তিনি কোন একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন চিকিৎসা নেয়ার জন্য।

আব্দুল হাই অভিযোগ করে বলেন, তাকে যারা লাঞ্ছনা করেছে তারা সবাই ‘স্থানীয় জামায়াত শিবিরের লোকজন। তিনি জানান, রোববার দুপুরে ওষুধ কেনার জন্য বাড়ির বাইরে গেলে কয়েকজন এসে স্কুলের সামনে তাকে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে জুতার মালা গলায় দিয়ে টেনে হিঁচড়ে তাকে সেখানকার শহীদ মিনারের সামনে নিয়ে যায়। তারা আমাকে টর্চার করেছে। আমাকে ছুঁড়ি ধরে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে অসম্মান করেছে। অথচ জামায়াতের কারও সাথে আমার কোন শত্রুতা ছিলো না। জামায়াত নেতা তাহের সাহেবের সঙ্গে আমি জেল খেটেছি।

আব্দুল হাই জানিয়েছেন, তার ছেলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছিলো এবং এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে তখনকার মন্ত্রী মুজিবুল হক তার (আব্দুল হাইয়ের) বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ নয়টি মামলা দিয়ে তাদের পরিবারকে এলাকা ছাড়া করেছিলো। এ ঘটনায় মামলা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা করে কী হবে? সবাই তো দেখেছে ঘটনা। সরকার চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারে। এ অসম্মানের পর আমার আর বেঁচে থেকেই লাভ কী! এ দেশের জন্যই কি যুদ্ধ করেছিলাম? চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাহফুজুর রহমান দাবি করেছেন, এ ঘটনার সাথে জামায়াতের কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করেছেন, এটি ওই এলাকার ইস্যু, সেখানকার প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে তার ঝামেলা আছে। আওয়ামী লীগের লোকেরাও আগে তার বাড়িঘর ভেঙ্গেছে। তাকে মেরেছে। এখন সম্ভবত তার আশেপাশের যারা থাকে তারাই ক্ষোভ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মাহফুজুর রহমান মনে করেন, এটা নিতান্তই ‘পারিবারিক ও সামাজিক’ সমস্যা, এবং এটি রাজনৈতিক বিষয় নয়। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলছেন, ঘটনাটি ইতোমধ্যেই তাদের নজরে এসেছে এবং এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করতে অভিযান চলছে। আমরা চেষ্টা করছি। স্থানীয় থানা পুলিশ জড়িতদের আটক করার চেষ্টা করছে। আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এর মোটিভ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো আশা করছি। আর চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন লাঞ্ছনার শিকার মুক্তিযোদ্ধার সাথে তার কথা হয়েছে।

ওনার বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ছিলো। তা না করে যেটি করা হয়েছে সেটি যে কোন মানুষের জন্যই অসম্মানজনক। আরো মুক্তিযোদ্ধারা এসেছেন। আমরা কথা বলেছি। আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে অবমাননার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

সুত্রঃ বিবিসি বাংলা