ঢাকা ১১:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কী থাকছে জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে, মঞ্চে থাকছেন কারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:৪৭:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১১৫৯ Time View

জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল চারটায়

আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানিয়েছে- জাতীয় সংগীত, শহীদদের প্রতি শোক জ্ঞাপনের পর শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। সেটি খুব বড় হবে না। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা সনদের অঙ্গীকারনামা অংশে সই করবেন। সবার শেষে সনদে সই করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে। অনুষ্ঠানের শুরুর আগে জুলাই সনদ তৈরির প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হবে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার, বিশিষ্ট নাগরিক, সামরিক-বেসামরিক আমলা, সাংবাদিক, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রায় তিন হাজার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা গত রাতে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন।

মূল অনুষ্ঠান হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় (সিঁড়ির মাঝামাঝি স্থানে হবে মঞ্চ)। আমন্ত্রিত অতিথিরা থাকবেন দক্ষিণ প্লাজার সামনে উন্মুক্ত জায়গায়। আর সাধারণ মানুষ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পাবেন। প্রধান উপদেষ্টা জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সব টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রাতে এক বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।

বুধবার সন্ধ্যায় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় আয়োজন জুলাই সনদ নিজে। কারণ, এই সনদ বাস্তবায়ন করা গেলে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। তিনি জানান, সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সনদ তৈরির প্রেক্ষাপট এবং এর ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা বিষয়ে ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হবে। আগামী দুই মাসে এটা নিয়ে আরও কাজ করা হবে।

যা আছে সনদে
সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসনে সংস্কারের ৮৪টি প্রস্তাব আছে জুলাই সনদে। এর মধ্যে ৪৭টির বাস্তবায়নে বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন করতে হবে। বাকি ৩৭টি প্রস্তাব আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দলগুলোর মধ্যে মূলত সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। জুলাই সনদে বেশ কিছু মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব আছে। সেগুলোর মধ্যে আছে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কিছুটা কমানো, কিছু প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো, এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন এবং একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না—এমন বিধান করা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত বাছাই কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের বিধান করা, কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে দেওয়া, আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা, উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন, আস্থাভোট ও অর্থবিল ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে আইনসভায় সংসদ সদস্যদের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ইত্যাদি। অবশ্য এর মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তাবে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের ভিন্নমত আছে। কোন প্রস্তাবে কার ভিন্নমত আছে, তা সনদে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে এই কমিশনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়। সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপর কমিশন প্রস্তাবগুলো নিয়ে এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনার ভিত্তিতে মোট ৮৪টি প্রস্তাব (ভিন্নমতসহ) নিয়ে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে ঐকমত্য কমিশন।

Please Share This Post in Your Social Media

কী থাকছে জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে, মঞ্চে থাকছেন কারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০২:৪৭:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানিয়েছে- জাতীয় সংগীত, শহীদদের প্রতি শোক জ্ঞাপনের পর শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। সেটি খুব বড় হবে না। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা সনদের অঙ্গীকারনামা অংশে সই করবেন। সবার শেষে সনদে সই করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে। অনুষ্ঠানের শুরুর আগে জুলাই সনদ তৈরির প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হবে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার, বিশিষ্ট নাগরিক, সামরিক-বেসামরিক আমলা, সাংবাদিক, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রায় তিন হাজার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা গত রাতে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন।

মূল অনুষ্ঠান হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় (সিঁড়ির মাঝামাঝি স্থানে হবে মঞ্চ)। আমন্ত্রিত অতিথিরা থাকবেন দক্ষিণ প্লাজার সামনে উন্মুক্ত জায়গায়। আর সাধারণ মানুষ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পাবেন। প্রধান উপদেষ্টা জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সব টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রাতে এক বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।

বুধবার সন্ধ্যায় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় আয়োজন জুলাই সনদ নিজে। কারণ, এই সনদ বাস্তবায়ন করা গেলে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। তিনি জানান, সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সনদ তৈরির প্রেক্ষাপট এবং এর ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা বিষয়ে ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হবে। আগামী দুই মাসে এটা নিয়ে আরও কাজ করা হবে।

যা আছে সনদে
সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসনে সংস্কারের ৮৪টি প্রস্তাব আছে জুলাই সনদে। এর মধ্যে ৪৭টির বাস্তবায়নে বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন করতে হবে। বাকি ৩৭টি প্রস্তাব আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দলগুলোর মধ্যে মূলত সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। জুলাই সনদে বেশ কিছু মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব আছে। সেগুলোর মধ্যে আছে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কিছুটা কমানো, কিছু প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো, এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন এবং একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না—এমন বিধান করা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত বাছাই কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের বিধান করা, কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে দেওয়া, আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা, উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন, আস্থাভোট ও অর্থবিল ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে আইনসভায় সংসদ সদস্যদের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ইত্যাদি। অবশ্য এর মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তাবে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের ভিন্নমত আছে। কোন প্রস্তাবে কার ভিন্নমত আছে, তা সনদে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে এই কমিশনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়। সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপর কমিশন প্রস্তাবগুলো নিয়ে এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনার ভিত্তিতে মোট ৮৪টি প্রস্তাব (ভিন্নমতসহ) নিয়ে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে ঐকমত্য কমিশন।