ঢাকা ০৫:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
টঙ্গী ফ্লাইওভারে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১ কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় বিপাকে ৪ কর্মকর্তা  নোয়াখালীতে ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু নিস্পত্তির মাধ্যমে মামলা জট কমিয়ে বিচার কাজ এগিয়ে নিতে হবে আদালত থেকে হাতকড়াসহ লাফ দিয়ে হত্যা মামলার আসামির পালানোর চেষ্টা নয় বছর পর ফিরছে ‘ব্রিকলেন কারি ফ্যাস্টিভ্যাল’ ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতির সম্মানে প্রধান বিচারপতির নৈশভোজ চাইলেই দেড় বছরে সংস্কার সম্ভব নয়: উপদেষ্টা রিজওয়ানা টিভি দেখতে দেখতেই ব্রেন স্ট্রোক করলেন অভিনেত্রী সায়ন্তনী যেদিন রাস্তায় নামব, বন্দুকও কিছু করতে পারবে না : কাদের সিদ্দিকী

কালিহাতীতে বালু ব্যবসা নিয়ে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কা!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৩:২০:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৯ Time View

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নিউ ধলেশ্বরী নদীর হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া অংশে বালু ব্যবসায়ীদের বাল্কহেড আনা-নেওয়ায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ওই তিন গ্রামের প্রায় ৪০টি বাড়ি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা বালু পরিবহনে ব্যবহৃত বড় বড় বাল্কহেড চলাচলে বাধা দিচ্ছে। একারণে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রভাশালী বালুখোকোরা ওই তিন গ্রামের যেসব সাধারণ ব্যবসায়ী উপ-শহর এলেঙ্গায় নানা ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের ১২ দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, যমুনার শাখা নিউ ধলেশ্বরী নদী দিয়ে বালু ব্যবসায়ীদের ভারি বাল্কহেড চলাচলের কারণে নদীতীরের হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয়রা নদী দিয়ে বাল্কহেড চলাচলে বার বার নিষেধ করলেও কেউ কর্ণপাত করেনি। ফলে গত দুইমাসে ওই তিন গ্রামের ৪০টি বসতবাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে।

ভারি বাল্কহেড চলাচলের কারণে বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলো হচ্ছে- দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের জুব্বার মুন্সির ছেলে আনোয়ার হোসেন, হাফেজের ছেলে মোহাম্মদ আলী, মহরের ছেলে আশান আলী, পাষান আলী, শাহাদৎ, মুছা, আকেজ আলীর ছেলে সাহেব আলী, কাদের মন্ডলের ছেলে বারেক, মুল্লুকচানের স্ত্রী ফিরোজা, কোরবানের ছেলে ছাত্তার, নায়েব আলীর ছেলে বক্কার, মেছের মন্ডলের ছেলে সোনা মিয়া, আজিমুদ্দিনের ছেলে আ. রশিদ, জাকের আলীর ছেলে আতর আলী, ছোবহানের ছেলে রবি, মামুনের ছেলে ইনছান, আজগর আলীর ছেলে আবুবকর, রমজান আলীর ছেলে গাজী, খাদেম ভাড়ারীর ছেলে আজিমুদ্দিন, খালেকের ছেলে মিনহাজ, মোন্তাজের ছেলে সুরমান ও একাব্বর, বারেকের ছেলে শাহালম, মুইচা শেখের ছেলে মাজেদ আলী, মোগল মন্ডলের ছেলে আব্দুর রহমান, ইনছুর ছেলে কোরবান আলী ও মালেকের ছেলে ইদ্রিছ আলী। এছাড়া হাতিয়া গ্রামের হাতেমের ছেলে মুজাম, ও মোকাদ্দেছ, মটরের ছেলে আজাহার, হযরতের ছেলে বারেক ও নয়ান আলী, শামছু তাতির ছেলে আব্দুল গনি, মোহম্মদের ছেলে ছানোয়ার, জলিল ও সুলতান, নবার ছেলে লিয়াকত, বাহেজের ছেলে রাজ্জাক ও ফজল, জুরান মোল্লার ছেলে হাছান, সালাম মোল্লার ছেলে উজ্জল, মাহমুদ মোল্লার ছেলে আবুল মোল্লা, আসোক আলীর স্ত্রী রমেছা, লালচানের ছেলে মুকু মোল্লা ও আজমত, আজগরের ছেলে রাজ্জাক ও শহিদ, গফুরের ছেলে আলামিন, ভোমর মোল্লার ছেলে পিয়ার আলী ও শহুরুদ্দি, মোগল সরকারের ছেলে  রফিকুল এবং সালামের ছেলে তুলা মিয়ার বাড়ি-ঘর ভেঙে নদীতে চলে গেছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এসব পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। উপায়ান্তর না পেয়ে ওই তিন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বিক্ষুব্ধ মানুষ গত ২৭ আগস্ট থেকে নদীতে বালু পরিবহনকারী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দেয়। স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে ধলাটেংগর, পাথাইলকান্দি, এলেঙ্গা ও পৌলি এলাকায় ২০টি বালু ঘাটে নদীপথে বালু পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের সাত্তার কমিশনারের বালু মহাল থেকে প্রতিদিন শতাধিক বাল্কহেড এ নদী পথে যাতায়াত করে থাকে। এসব ভারি ভারি বালুবাহী বাল্কহেডের সৃষ্ট ঢেউ নদীর দু’তীরে ভাঙনের সৃষ্টি করে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ২৭ আগস্ট নদী দিয়ে বাল্কহেড দিয়ে বালু পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় বালু ব্যবসায়ীরা ওই তিন গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার, কামরুল ইসলাম, হায়দার আলী, হাবিবুর রহমান, শাহিন আলম, আমিনুর সহ ১২ জনের এলেঙ্গাস্থ ১২টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা দোকান গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকাল থেকে জবরদস্তি বন্ধ করে দেয়। এছাড়া ওই তিন গ্রামের যেকোনো লোককে উপ-শহর এলেঙ্গায় পেলে গণপিটুনি দেওয়া হবে বলে হুমকী দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের এহেন কর্মকান্ডে ওই তিন গ্রামের মানুষ একতাবদ্ধ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, নিউ ধলেশ^রী নদী দিয়ে ভারি বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বালু ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের এলাকার এলেঙ্গাস্থ সাধারণ ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ করে তাড়িয়ে দিয়েছে। যেসব বালু ব্যবসায়ীরা হুমকী দিয়েছে তাদের মধ্যে মোখলেছ, জয়নাল, ফরহাদ সরকার, রাজু তালুকদার রাকিব হোসেন, সোহেল রানা, মুন্নাফ সরকার, এসকে আলম, সুখ মিয়া, আমিনুর, আনোয়ার ফকির, হযরত, উজ্জল সরকার ও ভূঞাপুরের বালু ব্যবসায়ী হালিম সরকার, তাপস অন্যতম।

এমতাবস্থায় বর্তমানে এলেঙ্গায় দোকান খুলতে না দেওয়া এবং নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, নদীতে ভারি বাল্কহেড চলাচল করলে তাদের বাড়ি-ঘরে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এজন্য তারা প্রতিবাদে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। বাড়ি-ঘর রক্ষার উদ্যোগ নেওয়ায় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রামের যারা এলেঙ্গায় দোকানপাট করে জীবিকা চালায়- তারা সেসব দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী জানায়, নদী পথে ছোট-বড় সব ধরনের নৌ-যান চলাচল করবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তুহাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের কতিপয় ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা না দেওয়ায় নদীতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা ইজারা ঘাট থেকে বালু কিনে বাল্কহেডযোগে এনে আনলোডের পর বিক্রি করে থাকেন। তাদের বৈধ ব্যবসায় বাধা দেওয়ার কারণে ছোট ছোট ছেলেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন দোকানদারকে শাসিয়েছে।

এ বিষয়ে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা আব্দুল হালিম সরকার জানান, কয়েকদিন আগে কয়েকজন তরুণ সমিতির হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া এলাকার সদস্যদের দোকান বন্ধ করেছিল। কিন্তু তিনি সেগুলো খুলে ব্যবসা পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কালিহাতী থানার অফিসাপর ইনচার্জ(ওসি) মো. মাহবুব হোসেন জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। খোঁজখবর নিয়ে পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খায়রুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে তিনি ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, নদী পথে নৌযান চলাচলে বাধা দেওয়ার কোন কারণ নেই। তবে নিউ ধলেশ্বরী নদীর যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেসব এলাকার ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

কালিহাতীতে বালু ব্যবসা নিয়ে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কা!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
Update Time : ০৩:২০:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নিউ ধলেশ্বরী নদীর হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া অংশে বালু ব্যবসায়ীদের বাল্কহেড আনা-নেওয়ায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ওই তিন গ্রামের প্রায় ৪০টি বাড়ি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা বালু পরিবহনে ব্যবহৃত বড় বড় বাল্কহেড চলাচলে বাধা দিচ্ছে। একারণে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রভাশালী বালুখোকোরা ওই তিন গ্রামের যেসব সাধারণ ব্যবসায়ী উপ-শহর এলেঙ্গায় নানা ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের ১২ দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, যমুনার শাখা নিউ ধলেশ্বরী নদী দিয়ে বালু ব্যবসায়ীদের ভারি বাল্কহেড চলাচলের কারণে নদীতীরের হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয়রা নদী দিয়ে বাল্কহেড চলাচলে বার বার নিষেধ করলেও কেউ কর্ণপাত করেনি। ফলে গত দুইমাসে ওই তিন গ্রামের ৪০টি বসতবাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে।

ভারি বাল্কহেড চলাচলের কারণে বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলো হচ্ছে- দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের জুব্বার মুন্সির ছেলে আনোয়ার হোসেন, হাফেজের ছেলে মোহাম্মদ আলী, মহরের ছেলে আশান আলী, পাষান আলী, শাহাদৎ, মুছা, আকেজ আলীর ছেলে সাহেব আলী, কাদের মন্ডলের ছেলে বারেক, মুল্লুকচানের স্ত্রী ফিরোজা, কোরবানের ছেলে ছাত্তার, নায়েব আলীর ছেলে বক্কার, মেছের মন্ডলের ছেলে সোনা মিয়া, আজিমুদ্দিনের ছেলে আ. রশিদ, জাকের আলীর ছেলে আতর আলী, ছোবহানের ছেলে রবি, মামুনের ছেলে ইনছান, আজগর আলীর ছেলে আবুবকর, রমজান আলীর ছেলে গাজী, খাদেম ভাড়ারীর ছেলে আজিমুদ্দিন, খালেকের ছেলে মিনহাজ, মোন্তাজের ছেলে সুরমান ও একাব্বর, বারেকের ছেলে শাহালম, মুইচা শেখের ছেলে মাজেদ আলী, মোগল মন্ডলের ছেলে আব্দুর রহমান, ইনছুর ছেলে কোরবান আলী ও মালেকের ছেলে ইদ্রিছ আলী। এছাড়া হাতিয়া গ্রামের হাতেমের ছেলে মুজাম, ও মোকাদ্দেছ, মটরের ছেলে আজাহার, হযরতের ছেলে বারেক ও নয়ান আলী, শামছু তাতির ছেলে আব্দুল গনি, মোহম্মদের ছেলে ছানোয়ার, জলিল ও সুলতান, নবার ছেলে লিয়াকত, বাহেজের ছেলে রাজ্জাক ও ফজল, জুরান মোল্লার ছেলে হাছান, সালাম মোল্লার ছেলে উজ্জল, মাহমুদ মোল্লার ছেলে আবুল মোল্লা, আসোক আলীর স্ত্রী রমেছা, লালচানের ছেলে মুকু মোল্লা ও আজমত, আজগরের ছেলে রাজ্জাক ও শহিদ, গফুরের ছেলে আলামিন, ভোমর মোল্লার ছেলে পিয়ার আলী ও শহুরুদ্দি, মোগল সরকারের ছেলে  রফিকুল এবং সালামের ছেলে তুলা মিয়ার বাড়ি-ঘর ভেঙে নদীতে চলে গেছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এসব পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। উপায়ান্তর না পেয়ে ওই তিন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বিক্ষুব্ধ মানুষ গত ২৭ আগস্ট থেকে নদীতে বালু পরিবহনকারী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দেয়। স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে ধলাটেংগর, পাথাইলকান্দি, এলেঙ্গা ও পৌলি এলাকায় ২০টি বালু ঘাটে নদীপথে বালু পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের সাত্তার কমিশনারের বালু মহাল থেকে প্রতিদিন শতাধিক বাল্কহেড এ নদী পথে যাতায়াত করে থাকে। এসব ভারি ভারি বালুবাহী বাল্কহেডের সৃষ্ট ঢেউ নদীর দু’তীরে ভাঙনের সৃষ্টি করে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ২৭ আগস্ট নদী দিয়ে বাল্কহেড দিয়ে বালু পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় বালু ব্যবসায়ীরা ওই তিন গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার, কামরুল ইসলাম, হায়দার আলী, হাবিবুর রহমান, শাহিন আলম, আমিনুর সহ ১২ জনের এলেঙ্গাস্থ ১২টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা দোকান গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকাল থেকে জবরদস্তি বন্ধ করে দেয়। এছাড়া ওই তিন গ্রামের যেকোনো লোককে উপ-শহর এলেঙ্গায় পেলে গণপিটুনি দেওয়া হবে বলে হুমকী দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের এহেন কর্মকান্ডে ওই তিন গ্রামের মানুষ একতাবদ্ধ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, নিউ ধলেশ^রী নদী দিয়ে ভারি বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বালু ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের এলাকার এলেঙ্গাস্থ সাধারণ ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ করে তাড়িয়ে দিয়েছে। যেসব বালু ব্যবসায়ীরা হুমকী দিয়েছে তাদের মধ্যে মোখলেছ, জয়নাল, ফরহাদ সরকার, রাজু তালুকদার রাকিব হোসেন, সোহেল রানা, মুন্নাফ সরকার, এসকে আলম, সুখ মিয়া, আমিনুর, আনোয়ার ফকির, হযরত, উজ্জল সরকার ও ভূঞাপুরের বালু ব্যবসায়ী হালিম সরকার, তাপস অন্যতম।

এমতাবস্থায় বর্তমানে এলেঙ্গায় দোকান খুলতে না দেওয়া এবং নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, নদীতে ভারি বাল্কহেড চলাচল করলে তাদের বাড়ি-ঘরে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এজন্য তারা প্রতিবাদে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। বাড়ি-ঘর রক্ষার উদ্যোগ নেওয়ায় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রামের যারা এলেঙ্গায় দোকানপাট করে জীবিকা চালায়- তারা সেসব দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী জানায়, নদী পথে ছোট-বড় সব ধরনের নৌ-যান চলাচল করবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তুহাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের কতিপয় ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা না দেওয়ায় নদীতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা ইজারা ঘাট থেকে বালু কিনে বাল্কহেডযোগে এনে আনলোডের পর বিক্রি করে থাকেন। তাদের বৈধ ব্যবসায় বাধা দেওয়ার কারণে ছোট ছোট ছেলেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন দোকানদারকে শাসিয়েছে।

এ বিষয়ে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা আব্দুল হালিম সরকার জানান, কয়েকদিন আগে কয়েকজন তরুণ সমিতির হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া এলাকার সদস্যদের দোকান বন্ধ করেছিল। কিন্তু তিনি সেগুলো খুলে ব্যবসা পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কালিহাতী থানার অফিসাপর ইনচার্জ(ওসি) মো. মাহবুব হোসেন জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। খোঁজখবর নিয়ে পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খায়রুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে তিনি ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, নদী পথে নৌযান চলাচলে বাধা দেওয়ার কোন কারণ নেই। তবে নিউ ধলেশ্বরী নদীর যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেসব এলাকার ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।