ঢাকা ০৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কারামুক্ত শহিদুল আলম, গেলেন তুরস্কে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৬:২০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫৬ Time View

আলোকচিত্রী, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম (ফাইল ফটো)

ইসরায়েলের কেৎজিয়েত কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন আলোকচিত্রী, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। মুক্তি পেয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গেছেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শহিদুল আলমের মুক্তি এবং ইসরায়েল থেকে তাঁকে দেশে ফেরাতে সহযোগিতার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তায়িপ এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এর আগে সকালে অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছিল যে, শহিদুল আলমকে তুরস্কের সহায়তায় ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শুক্রবার সকালে এক পোস্টে বলা হয়, ‌তুরস্কের কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করছে, আজই শহিদুল আলমকে বিশেষ বিমানযোগে আঙ্কারায় নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে তুর্কি কর্তৃপক্ষ শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। আঙ্কারায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমানুল হক বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে আটক করার পর জর্ডান, মিসর ও তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহকে ওই সব দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে মুক্ত করার দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলা হয়। দূতাবাসগুলো শহিদুল আলমের মুক্তির বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।

পোস্টে আরও বলা হয়, শহিদুল আলম ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দ্বারা অবৈধভাবে আটক হওয়ার পর জর্ডান, মিসর ও তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে সেসব দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তাঁকে মুক্ত করার জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলা হয়। দূতাবাসগুলো শহিদুল আলমের মুক্তির বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, ডঃ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে সন্ধার  পর (বাংলাদেশ সময়) শহিদুল আলম তার ফেসবুক প্রফাইলে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন যা নওরোজের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

তিনি লিখেন, “ডঃ ইউনূস, সবকিছুর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ! এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আপনার এই বার্তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ, “পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে।”

এর আগে, শহিদুল আলম গাজা অভিমুখী ফ্রিডম ফ্লোটিলার কনশেনস নামের জাহাজটি মাঝসমুদ্রে ৮ অক্টোবর আটকে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে জানান শহিদুল আলম নিজেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমি শহিদুল আলম, বাংলাদেশের একজন আলোকচিত্রী ও লেখক। আপনারা যদি এই ভিডিও দেখে থাকেন, তাহলে শুনুন, আমাদের সাগরে আটকে দেওয়া হয়েছে এবং আমাকে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী অপহরণ করেছে। এরা সেই দেশের বাহিনী, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা নিয়ে গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে আমি আমার সব সহযোদ্ধা ও বন্ধুর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে এই ভিডিও বার্তাটি পোস্ট করেন তিনি। শহিদুল আলম কনশেনস নামের যে জাহাজে আছেন, তা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) নৌবহরের একটি জাহাজ। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীবাহী এই জাহাজ ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছিল।

মঙ্গলবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শহিদুল জানিয়েছিলেন, তাঁরা মঙ্গলবার ভোরে রেড জোনে পৌঁছে যেতে পারেন। ইসরায়েলি সেনারা সম্প্রতি সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর যেখান থেকে আটকে দিয়ে অধিকারকর্মীদের আটক করেছিলেন সেই জায়গাটিকে বুঝিয়েছেন তিনি। সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের নৌযানগুলোও ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজায় ঢোকার চেষ্টা করেছিল।

এর আগে রোববার শহিদুল আলম তাঁর ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিওতে জানিয়েছিলেন, গাজার বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়া তাদের জাহাজের ওপর সামরিক বিমানের চক্কর দেখা গেছে। মনে করা হচ্ছে, বিমানটি ইসরায়েলি সামরিক বিমান। তারা তথ্য সংগ্রহ অথবা ভয় দেখানোর জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করেন জাহাজটিতে থাকা কর্মীরা।

জাহাজটি থেকে করা ফেসবুক লাইভে সমুদ্রের আকাশে বিমানটিকে দেখা যায়। লাইভটি করেন অধিকারকর্মী উইলিয়াম আলেকজান্ডার। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের চারপাশে কয়েকবার ঘোরার পর একটি বড় সামরিক বিমান এইমাত্র সরাসরি আমাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল। নিঃসন্দেহে এটা অপ্রয়োজনীয়। তারা আমাদের ওপর একটি চক্কর দিয়েই সম্ভবত সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারত। এরপর তারা থাউজেন্ড ম্যাডলিন ফ্লিটের দিকে চলে গেছে। সম্ভবত তথ্য সংগ্রহের জন্য এ কাজ করেছে তারা। আমার ধারণা, তারা আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।’

বিমানটি উড়ে যাওয়ার সময় লাইভ ভিডিওতে কনসায়েন্সের আরেক যাত্রী সতর্কবার্তা দেন, ‘সতর্ক থাকুন। খুব ধীরে ধীরে এগোবেন। স্বাভাবিক থাকুন। তাদেরকে আমাদের সঙ্গে খেলতে দেবেন না।’ পরে উইলিয়াম জাহাজের ভেতরের ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম দেখিয়ে বলেন, ‘আমার পেছনে প্রচুর ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম রয়েছে। এগুলো আমরা কনশানস জাহাজে করে গাজায় নিয়ে যাচ্ছি।’

জাহাজের ক্যাপ্টেন ম্যাডেলেইন হাবিব বলেন, ‘আমি সত্যিই আশা করছি, এবার আমরা গাজায় পৌঁছাব। সত্যিকারে একটি শান্তি প্রক্রিয়ার আশা করছি এবং আমাদের আটকানো হবে না। আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্থায়ী করিডোর চাই, যাতে তারা সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করতে পারে।’

ভিডিওতে ওই জাহাজে থাকা মার্কিন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা টম হায়েস বলেন, ‘একজন আমেরিকান হিসেবে আমাদের এখন কী করা উচিত? আমাদের অবশ্যই প্রতিটি ফোরামে ও সম্ভাব্য প্রতিটি উপায়ে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে, যাতে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের পথ সুগম হয়।’

কনসায়েন্স জাহাজটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)’ ও ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি)’ নৌবহরের অংশ, যা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে এবং ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে চেষ্টা করছে।

এর আগে আরেক পোস্টে তিনি ঠিক তিনি কোথায় আছেন, গাজায় পৌঁছাতে আর কত সময়ইবা লাগবে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব দেন। শহিদুল আলম লেখেন, ট্র্যাকার ব্যবহার করে আমাদের যাত্রাপথ অনুসরণ করা সবচেয়ে ভালো উপায় হবে। ‘ফরেনসিক আর্কিটেকচার’ সাইটের মাধ্যমে কনসায়েন্স ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস উভয় নৌবহরের যাত্রাপথ ট্র্যাক করা হচ্ছে।

দুই বছর ধরে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। এ সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ দজনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, অনেকে আটক ও কারাগারে বন্দী আছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

কারামুক্ত শহিদুল আলম, গেলেন তুরস্কে

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৬:২০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েলের কেৎজিয়েত কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন আলোকচিত্রী, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। মুক্তি পেয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গেছেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শহিদুল আলমের মুক্তি এবং ইসরায়েল থেকে তাঁকে দেশে ফেরাতে সহযোগিতার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তায়িপ এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এর আগে সকালে অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছিল যে, শহিদুল আলমকে তুরস্কের সহায়তায় ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শুক্রবার সকালে এক পোস্টে বলা হয়, ‌তুরস্কের কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করছে, আজই শহিদুল আলমকে বিশেষ বিমানযোগে আঙ্কারায় নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে তুর্কি কর্তৃপক্ষ শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। আঙ্কারায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমানুল হক বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে আটক করার পর জর্ডান, মিসর ও তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহকে ওই সব দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে মুক্ত করার দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলা হয়। দূতাবাসগুলো শহিদুল আলমের মুক্তির বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।

পোস্টে আরও বলা হয়, শহিদুল আলম ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দ্বারা অবৈধভাবে আটক হওয়ার পর জর্ডান, মিসর ও তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে সেসব দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তাঁকে মুক্ত করার জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলা হয়। দূতাবাসগুলো শহিদুল আলমের মুক্তির বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, ডঃ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে সন্ধার  পর (বাংলাদেশ সময়) শহিদুল আলম তার ফেসবুক প্রফাইলে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন যা নওরোজের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

তিনি লিখেন, “ডঃ ইউনূস, সবকিছুর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ! এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আপনার এই বার্তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ, “পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে।”

এর আগে, শহিদুল আলম গাজা অভিমুখী ফ্রিডম ফ্লোটিলার কনশেনস নামের জাহাজটি মাঝসমুদ্রে ৮ অক্টোবর আটকে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে জানান শহিদুল আলম নিজেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমি শহিদুল আলম, বাংলাদেশের একজন আলোকচিত্রী ও লেখক। আপনারা যদি এই ভিডিও দেখে থাকেন, তাহলে শুনুন, আমাদের সাগরে আটকে দেওয়া হয়েছে এবং আমাকে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী অপহরণ করেছে। এরা সেই দেশের বাহিনী, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা নিয়ে গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে আমি আমার সব সহযোদ্ধা ও বন্ধুর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে এই ভিডিও বার্তাটি পোস্ট করেন তিনি। শহিদুল আলম কনশেনস নামের যে জাহাজে আছেন, তা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) নৌবহরের একটি জাহাজ। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীবাহী এই জাহাজ ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছিল।

মঙ্গলবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শহিদুল জানিয়েছিলেন, তাঁরা মঙ্গলবার ভোরে রেড জোনে পৌঁছে যেতে পারেন। ইসরায়েলি সেনারা সম্প্রতি সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর যেখান থেকে আটকে দিয়ে অধিকারকর্মীদের আটক করেছিলেন সেই জায়গাটিকে বুঝিয়েছেন তিনি। সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের নৌযানগুলোও ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজায় ঢোকার চেষ্টা করেছিল।

এর আগে রোববার শহিদুল আলম তাঁর ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিওতে জানিয়েছিলেন, গাজার বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়া তাদের জাহাজের ওপর সামরিক বিমানের চক্কর দেখা গেছে। মনে করা হচ্ছে, বিমানটি ইসরায়েলি সামরিক বিমান। তারা তথ্য সংগ্রহ অথবা ভয় দেখানোর জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করেন জাহাজটিতে থাকা কর্মীরা।

জাহাজটি থেকে করা ফেসবুক লাইভে সমুদ্রের আকাশে বিমানটিকে দেখা যায়। লাইভটি করেন অধিকারকর্মী উইলিয়াম আলেকজান্ডার। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের চারপাশে কয়েকবার ঘোরার পর একটি বড় সামরিক বিমান এইমাত্র সরাসরি আমাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল। নিঃসন্দেহে এটা অপ্রয়োজনীয়। তারা আমাদের ওপর একটি চক্কর দিয়েই সম্ভবত সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারত। এরপর তারা থাউজেন্ড ম্যাডলিন ফ্লিটের দিকে চলে গেছে। সম্ভবত তথ্য সংগ্রহের জন্য এ কাজ করেছে তারা। আমার ধারণা, তারা আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।’

বিমানটি উড়ে যাওয়ার সময় লাইভ ভিডিওতে কনসায়েন্সের আরেক যাত্রী সতর্কবার্তা দেন, ‘সতর্ক থাকুন। খুব ধীরে ধীরে এগোবেন। স্বাভাবিক থাকুন। তাদেরকে আমাদের সঙ্গে খেলতে দেবেন না।’ পরে উইলিয়াম জাহাজের ভেতরের ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম দেখিয়ে বলেন, ‘আমার পেছনে প্রচুর ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম রয়েছে। এগুলো আমরা কনশানস জাহাজে করে গাজায় নিয়ে যাচ্ছি।’

জাহাজের ক্যাপ্টেন ম্যাডেলেইন হাবিব বলেন, ‘আমি সত্যিই আশা করছি, এবার আমরা গাজায় পৌঁছাব। সত্যিকারে একটি শান্তি প্রক্রিয়ার আশা করছি এবং আমাদের আটকানো হবে না। আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্থায়ী করিডোর চাই, যাতে তারা সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করতে পারে।’

ভিডিওতে ওই জাহাজে থাকা মার্কিন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা টম হায়েস বলেন, ‘একজন আমেরিকান হিসেবে আমাদের এখন কী করা উচিত? আমাদের অবশ্যই প্রতিটি ফোরামে ও সম্ভাব্য প্রতিটি উপায়ে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে, যাতে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের পথ সুগম হয়।’

কনসায়েন্স জাহাজটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)’ ও ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি)’ নৌবহরের অংশ, যা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে এবং ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে চেষ্টা করছে।

এর আগে আরেক পোস্টে তিনি ঠিক তিনি কোথায় আছেন, গাজায় পৌঁছাতে আর কত সময়ইবা লাগবে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব দেন। শহিদুল আলম লেখেন, ট্র্যাকার ব্যবহার করে আমাদের যাত্রাপথ অনুসরণ করা সবচেয়ে ভালো উপায় হবে। ‘ফরেনসিক আর্কিটেকচার’ সাইটের মাধ্যমে কনসায়েন্স ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস উভয় নৌবহরের যাত্রাপথ ট্র্যাক করা হচ্ছে।

দুই বছর ধরে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। এ সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ দজনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, অনেকে আটক ও কারাগারে বন্দী আছেন।