কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় বিপাকে ৪ কর্মকর্তা

- Update Time : ০১:৫২:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২১ Time View
টাঙ্গাইলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে মাদক উদ্ধারের চাঞ্চল্যকর ঘটনায়, সাময়িকভাবে সাসপেন্ড হয়ে তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে ৪ কর্মকর্তা। এ কারণে ভুঞাপুর উপজেলার ওই এলাকায় পরবর্তীতে কোন অভিযান না হওয়ায় মাদকের তৎপরতা বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ছালেহা বেগম (৫৭) ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার অভিযোগে, ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়।
ওই অভিযোগ থেকে জানা যায়, এলাকায় হেরোইন, ফেনসিডিল ও ইয়াবা বিক্রির কারণে কিশোর কিশোরী’সহ যুবসমাজ সহজেই মাদকের চক্রে জড়িয়ে পড়ছে। যা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৮ জুন টাঙ্গাইল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম এর নেতৃত্বে ৮-১০ সদস্যের একটি টিম ভূঞাপুর উপজেলার বাহাদীপুর গ্রামের ছালেহা বেগমের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় তাদের বাড়ি থেকে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।
অভিযানের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ছালেহা বেগম নিজেই মাদক উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করেন এবং তল্লাশির সময় কিছু খোয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেন। কিন্তু অভিযানের এক সপ্তাহ পর তিনি অভিযোগ করেন, ঘর তল্লাশির নামে কর্মকর্তারা আলমারি, শোকেস ও ড্রয়ার ভেঙে তার ও তার ছেলের জমানো ৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
তিনি আরও দাবি করেন, তিন ঘণ্টার তল্লাশির পর মাত্র ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখানো হয়েছে এবং জোড়পূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি ভিডিও করা হয়েছে। পরবর্তীতে ২ জুলাই তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
তদন্ত শেষে জেলা পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম’সহ ৪ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। গত ৭ জুলাই রাতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাসান মারুফ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ফোনালাপের অডিও রেকর্ড ও নতুন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, অভিযোগকারী অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ডিংয়ে তিনি বলেছেন, ১০ লাখ টাকা দিলে অভিযোগ প্রত্যাহার করবেন। এলাকাবাসীর দাবি, ছালেহা বেগমের ছেলে রনি দীর্ঘদিন ধরে তার মামা দুলাল চকদারের প্রভাব খাটিয়ে মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন। তারা বলেন, ছালেহার বাড়িতে মাদক পাওয়া গেছে এটি সত্য। তবে এতগুলো টাকার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এত টাকা একসাথে কোন উৎস থেকে কিভাবে এলো? হয়তো দোষ ঢাকতে, উল্টো কর্মকর্তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। মাদক ব্যবসার কারণে এলাকার যুব সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অথচ ভয়ের কারণে অনেকেই মুখ খুলতে পারছেন না।
অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা সেদিন শুধুমাত্র ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছি, যা এলাকাবাসীর সামনে প্রমাণিত। কিন্তু আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং তার ছেলে রনিকে মাদক মামলা থেকে বাঁচাতে ছালেহা বেগম মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপ পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, আমি টাঙ্গাইলে এ বছর ১৬ জুলাই যোগদান করেছি। এখানে এসে আমি জানতে পেরেছি ভুঞাপুরের ওই ঘটনাটি। সাবেক মহিলা মেম্বারের অভিযোগের পর যে ৪ জন সাসপেন্ড হয়েছে, এখনো সেই তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে সাময়িকভাবে তাদের বরখাস্ত করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া, আইনগত পদ্ধতিতেই এগুবে। সেখানে ওই ঘটনা ঘটার পর থেকে, ইন্টেলিজেন্স কার্যক্রম চলমান রয়েছে, আমাদের স্টাফদের বিরুদ্ধে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তাকে উপজীব্য করে যদি, ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা আরো উৎসাহিত হতে পারে। এজন্য আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এই ঘটনার পর থেকে আমাদের লোকজন ওখানে আভিযানিক তৎপরতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দে রয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি, যে বিষয়ে তদন্ত চলছে, সেটা আমি যোগদানের পূর্বের ঘটনা। নতুনভাবে যেই ঘটনা ঘটুক না কেন, মাদক ব্যবসার কোন প্রসার ঘটতে দেয়া যাবে না। যেহেতু ওখানে একটি মামলা হয়েছে, তদন্ত কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতেই আইনগত ভাবে চলবে। ওই ঘটনা ঘটছে বলেই মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করি না। আইন বিধি-বিধান অনুসারে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত কার্যক্রম চলবে। আমরা অবশ্যই আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেব।
ফোনালাপ রেকর্ড থেকে জানা যায়, অভিযোগকারী মীমাংসার লক্ষ্যে টাকা দাবি করেছে, এ বিষয়ে কিছু জানেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা, এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল, টাকা দাবি করার যদি কোন বিষয় থেকে থাকে তাহলে, সেটা অবশ্যই আরো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, টাকা কেন দাবি করবে যে ঘটনা ঘটেছে, এ ধরনের টাকা পয়সা দাবি করাও তো ন্যায় সঙ্গত নয়। এটা আরও ব্যাপকভাবে তদন্ত হবে। কোন অবস্থাতেই কোন জায়গায় যেন মাদকের ব্যবসা প্রসারিত হতে না পারে সেটা ভুঞাপুরই হোক যে কোন জায়গায় হোক। সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়েই সর্বোচ্চ সাহস ও সততা নিয়ে সকলকে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়