ঢাকা ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ইসরাইলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেবো না: ট্রাম্প শাহরুখ-আরিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা, আদালতে খারিজ শাহরুখ-আরিয়ানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করলেন সমীর ওয়াংখেড়ে চেন্নাইয়ে থালাপতি বিজয়ের সমাবেশে পদপিষ্ট হয়ে ৩৪ জনের মৃত্যু জনগণ যেভাবে চায়, আমাদের সেভাবে চলতে হবে : তারেক রহমান বাদামতলীতে ঢাকা ৭ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মনি’র গণসংযোগ দোলনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের ঢাকা ৭ আসনের মানুষের খাদেম হতে চাই – আলহাজ্ব আব্দুর রহমান টঙ্গীর কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শনে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক

কল-রেডি ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ

নাইমুর রহমান
  • Update Time : ১২:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২১০ Time View

কল-রেডি, এক সময় যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এখন সেই কিংবদন্তি প্রতিষ্ঠানটি নীরব হয়ে গেছে। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের যে দোকানে একসময় এর কার্যক্রম চলত, সেটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যবসায় মন্দার কারণে তারা দোকানটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, যদিও নতুন জায়গায় এটি আবার চালু করার চেষ্টা চলছে।

​মাইক্রোফোন দিয়ে যখনই কেউ কোনো সভা-সমাবেশে ভাষণ দিতেন, তার সামনে একটি ছোট সাইনবোর্ডে লেখা থাকত “কল-রেডি”। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে শুরু করে জাতির ইতিহাসের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এই নামটি সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। ছবিগুলোতে সেই সব মাইক্রোফোন নীরব সাক্ষী হয়ে আছে।

​কল-রেডির যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৮ সালে, যখন বিক্রমপুরের শ্রীনগরের দুই ভাই দয়াল ঘোষ এবং হরিপদ ঘোষ ‘আই অ্যাম অলওয়েজ রেডি, অন কল অ্যাট ইওর সার্ভিস’ নামে লক্ষ্মীবাজারে একটি ব্যবসা শুরু করেন, যা পরে সংক্ষেপে ‘আরজু ইলেকট্রনিক্স’ নামে পরিচিত হয়। শুরুতে তারা আলো, সাজসজ্জা এবং গ্রামোফোন ভাড়া দিত। পরে হরিপদ ঘোষ নিজেই বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে মাইক্রোফোন তৈরি করতে শুরু করেন।

​পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক আন্দোলন জোরদার হলে মাইক্রোফোনের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন—সব ধরনের জনসভায় কল-রেডি-র মাইক্রোফোন ব্যবহৃত হতো।
​বঙ্গবন্ধু ছাড়াও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইন্দিরা গান্ধী, বিল ক্লিনটন এবং প্রণব মুখার্জীর মতো বিশ্বনেতারাও কল-রেডি-র মাইক্রোফোনে ভাষণ দিয়েছেন।

​১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ জন কর্মী কাজ করতেন। তাদের নাম ‘কল-রেডি’ থেকেই বোঝা যেত যে ডাকলেই তাদের মাইক্রোফোন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
​সম্প্রতি যখন একজন সাংবাদিক সেই দোকান পরিদর্শনে যান, তখন সেখানে কোনো সাইনবোর্ডও ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা শিবাল সরকার জানান, “দোকানটা গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে বন্ধ।” আরেক বাসিন্দা তারিক আজিজ বলেন, “এই দোকানটা দেখতে দেখতেই আমরা বড় হয়েছি। আমাদের ইতিহাসের ছবিগুলোতে এই মাইকগুলো আছে। কিন্তু এখন এটা এক বছর ধরে বন্ধ।”

​আধুনিক প্রযুক্তির পোর্টেবল সাউন্ড সিস্টেম বাজারে আসার ফলে কল-রেডি নতুন সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নতুন প্রযুক্তির প্রসারে আমাদের ব্যবসা কমে গিয়েছিল। তাই আমরা এখন দোকানটি বন্ধ করে দিয়েছি এবং ঢাকায় অন্য কোথাও আবার চালু করার চেষ্টা করব।”

Please Share This Post in Your Social Media

কল-রেডি ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ

নাইমুর রহমান
Update Time : ১২:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কল-রেডি, এক সময় যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এখন সেই কিংবদন্তি প্রতিষ্ঠানটি নীরব হয়ে গেছে। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের যে দোকানে একসময় এর কার্যক্রম চলত, সেটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যবসায় মন্দার কারণে তারা দোকানটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, যদিও নতুন জায়গায় এটি আবার চালু করার চেষ্টা চলছে।

​মাইক্রোফোন দিয়ে যখনই কেউ কোনো সভা-সমাবেশে ভাষণ দিতেন, তার সামনে একটি ছোট সাইনবোর্ডে লেখা থাকত “কল-রেডি”। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে শুরু করে জাতির ইতিহাসের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এই নামটি সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। ছবিগুলোতে সেই সব মাইক্রোফোন নীরব সাক্ষী হয়ে আছে।

​কল-রেডির যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৮ সালে, যখন বিক্রমপুরের শ্রীনগরের দুই ভাই দয়াল ঘোষ এবং হরিপদ ঘোষ ‘আই অ্যাম অলওয়েজ রেডি, অন কল অ্যাট ইওর সার্ভিস’ নামে লক্ষ্মীবাজারে একটি ব্যবসা শুরু করেন, যা পরে সংক্ষেপে ‘আরজু ইলেকট্রনিক্স’ নামে পরিচিত হয়। শুরুতে তারা আলো, সাজসজ্জা এবং গ্রামোফোন ভাড়া দিত। পরে হরিপদ ঘোষ নিজেই বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে মাইক্রোফোন তৈরি করতে শুরু করেন।

​পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক আন্দোলন জোরদার হলে মাইক্রোফোনের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন—সব ধরনের জনসভায় কল-রেডি-র মাইক্রোফোন ব্যবহৃত হতো।
​বঙ্গবন্ধু ছাড়াও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইন্দিরা গান্ধী, বিল ক্লিনটন এবং প্রণব মুখার্জীর মতো বিশ্বনেতারাও কল-রেডি-র মাইক্রোফোনে ভাষণ দিয়েছেন।

​১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ জন কর্মী কাজ করতেন। তাদের নাম ‘কল-রেডি’ থেকেই বোঝা যেত যে ডাকলেই তাদের মাইক্রোফোন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
​সম্প্রতি যখন একজন সাংবাদিক সেই দোকান পরিদর্শনে যান, তখন সেখানে কোনো সাইনবোর্ডও ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা শিবাল সরকার জানান, “দোকানটা গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে বন্ধ।” আরেক বাসিন্দা তারিক আজিজ বলেন, “এই দোকানটা দেখতে দেখতেই আমরা বড় হয়েছি। আমাদের ইতিহাসের ছবিগুলোতে এই মাইকগুলো আছে। কিন্তু এখন এটা এক বছর ধরে বন্ধ।”

​আধুনিক প্রযুক্তির পোর্টেবল সাউন্ড সিস্টেম বাজারে আসার ফলে কল-রেডি নতুন সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নতুন প্রযুক্তির প্রসারে আমাদের ব্যবসা কমে গিয়েছিল। তাই আমরা এখন দোকানটি বন্ধ করে দিয়েছি এবং ঢাকায় অন্য কোথাও আবার চালু করার চেষ্টা করব।”