কবিরাজি চিকিৎসার নামে বন্ধ্যা নারীদেরকে টার্গেট করে প্রতারণা, প্রতারক গ্রেফতার

- Update Time : ০৯:৩৯:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩
- / ৩০১ Time View
আসামী মোঃ জুয়েল শিকদার(২৫), পিতা- মনি শিকদার, সাং- দুর্গাপুর নতুন পাড়া , থানা- আমিনপুর, জেলা- পাবনা নিজেকে কবিরাজ বলে পরিচয় দেয়। উক্ত আসামী বাদীকে জানায় যে সকল মহিলাদের দীর্ঘদিন বাচ্চা হয় না তাদের চিকিৎসা করে থাকে এবং তার কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করলে বাচ্চা হয়।
বাদীর বৈবাহিক জীবন ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও বাচ্চা না হওয়ায়। তখন বাদী আসামীর কথায় বিশ্বাস করে। আসামী জুয়েল শিকদারকে বাদী তার বাসায় আসতে বলে। পরবর্তীতে গত ১২/১০/২০২৩ খ্রিঃ সকাল অনুমান ১১:৩০ ঘটিকার সময় আসামী বাদীর চিকিৎসার জন্য তার বাসায় আসে। তখন আসামী (কবিরাজ) বাদীকে তাবিজ কবজ ও ভারনের মাধ্যমে(জিনের মাধ্যমে)সন্তান সম্ভবা করে দিবে মর্মে বিভিন্ন কথা বলে এবং বাদীর কাছে স্বর্ণের গহনা ও রুপার গহনা চেয়ে বলে যে, “স্বর্ণের গহনা ও রুপার গহনায় সে মন্ত্র পড়ে ফুক দিয়ে দিবে সেটা পানিতে ভিজিয়ে ঐ পানি পান করতে হবে এবং গোসল করতে হবে”।
এমতাবস্থায় বাদী আসামী মোঃ জুয়েল শিকদার এর কথায় বিশ্বাস করে তার ব্যবহৃত ৩টি স্বর্ণের আংটি, ১টি স্বর্ণের চেইন ও ২ ভরি রূপার চেইন গহনা আসামীকে দেয়। উক্ত আসামী বাদীর নিকট থেকে গহনা নিয়ে পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে বিভিন্ন ঝাড় ফুক করে। এরপর আসামী গহনা ভিজানো পানি বাদীকে দিয়ে বলে “এই পানি পান করতে হবে এবং গোসল করতে হবে”। এক পর্যায়ে আসামী কৌশলে বাদীর কাছ থেকে উক্ত স্বর্ণের গহনা পাল্টিয়ে নেয় এবং আসামীর কাছে থাকা ইমিটেশনের গহনা পানির মধ্যে রেখে দিয়ে বাদীর স্বর্ণলংকার নিয়ে পালিয়ে যায়।
বাদী তখন বুঝতে পারে আসামী জুয়েল শিকদার তার সাথে প্রতারণা করেছে। উক্ত প্রতারণা করার বিষয়ে বাদী গত ১৫/১০/২০২৩ খ্রিঃ পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর বরাবরে আবেদন করলে পুলিশ সুপার মহোদয় আবেদনটি ছায়া তদন্তের জন্য এসআই(নিঃ) রতন মিয়া, পিবিআই, যশোর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়,আসামী জুয়েল শিকদার বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে মোটর শ্রমিক পরিচয় দিয়ে হোটেলে রুম ভাড়া নেয়। এরপর ঐ এলাকায় নিজেকে কবিরাজ পরিচয় দিয়ে জানায় সে প্যারালাইস রুগীসহ যেসব নারীদের বাচ্চা হয় না তাদের চিকিৎসা করে থাকে। বিশেষ করে যেসব নারীদের দীর্ঘদিন যাবৎ বাচ্চা হয় না তাদের টার্গেট করে চিকিৎসার নামে নারীদের নিকট থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা প্রতারণার মাধ্যমে গ্রহণ করে গাঁ ঢাকা দেয়। সে একজন বড় মাপের প্রতারক বলে জানা যায়।
উক্ত বিষয়ে অনুসন্ধানকালে আসামী জুয়েল শিকদার ঘটনার সহিত জড়িত মর্মে সত্যতা পাওয়া গেলে পিবিআই প্রধান জনাব বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম, অ্যাডিশনাল আইজি, বাংলাদেশ পুলিশ এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্তে¡ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আজিজুল হক, এসআই(নিঃ) রতন মিয়া, এসআই(নিঃ) গোলাম আলী সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স সহ যশোর জেলার আভিযানিক দল কর্তৃক গত ১৯/১০/২০২৩ খ্রিঃ ১৫.৪০ ঘটিকায় পাবনা জেলার আমিনপুর থানাধীন তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকালে আসামীর নিকট থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ও বাদীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রহণকৃত দুটি রুপার চেইন উক্ত আসামীর বসত বাড়ী থেকে উদ্ধার করে। উক্ত আসামীকে বাদীর কাছে থেকে নেওয়া একটি স্বর্ণের চেইন ও তিনটি স্বর্ণের আংটির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় উক্ত স্বর্ণের জিনিস গুলো স্থানীয় চব্বিশ মাইল বাজারস্থ রিফাত জুয়েলার্স এ বিক্রি করেছে। পরবর্তীতে উক্ত আসামীর দেখানো মতে চব্বিশ মাইল বাজারের রিফাত জুয়েলার্স দোকান থেকে বাদীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া স্বর্ণালঙ্কার জব্দতালিকা মোতাবেক সাক্ষীদের সম্মুখে জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে আসামীর বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করলে কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৭৮, তারিখঃ ১৯/১০/২০২৩ খ্রিঃ, ধারাঃ ৪০৬/৪২০ পেনাল কোড রুজু হয়।
উক্ত মামলাটি পিবিআই, যশোর জেলা স্ব-উদ্দ্যোগে গ্রহণ করে মামলার তদন্তভার এসআই (নিঃ) রতন মিয়া এর উপর অর্পণ করা হয়। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই(নিঃ) রতন মিয়া ঘটনা সংক্রান্তে জড়িত আসামীকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামি ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকার করলে ২০/১০/২০২৩ খ্রিঃ জনাব গোলাম কিবরিয়া, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী আদালত, যশোর আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তদন্ত অব্যহত রয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়