ঢাকা ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার সৈকতে ‘প্লাস্টিকের দানব’

কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • Update Time : ১২:৩৩:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১২ Time View

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সীগাল পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে বিশালদেহী এক ‘প্লাস্টিক দানব’। ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বানানো হয়েছে ‘প্লাস্টিক দানব’। পরিত্যক্ত সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি বিশাল এই ভাস্কর্য যেন বিশ্বের ওপর প্লাস্টিকের হিংস্র থাবার প্রতীক।

বুধবার সন্ধ্যায় সৈকতের সুগন্ধা সীগাল পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত এই ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করা হয়েছে বলে জানান বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিল্পী আবীর কর্মকার বলেন, চারুকলার একদল শিল্পী প্রায় ৬ টন প্লাস্টিক দিয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন।

তাদের দাবি- এটাই ওসান-প্লাস্টিক দিয়ে বানানো বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ‘প্লাস্টিক মনস্টার’।

সরেজমিনে দেখা যায়, বালিয়াড়ির উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বহু টন প্লাস্টিক বর্জ্যে গড়া বিশাল ভাস্কর্যটি। মাঝখানে যেন দু’ভাগ হয়ে যাওয়া পৃথিবী, যার বুক চিরে বেরিয়ে আসছে প্লাস্টিক।

আয়োজকেরা বলছেন, মানবজাতি যে প্লাস্টিক দূষণের চাপে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে-এ ভাস্কর্য তারই রূপক।

ভাস্কর্যটি দেখতে বুধবার সন্ধ্যায় উপচে পড় ভীড় দেখা যায় সৈকতে। পর্যটকদের কেউ প্রথম দেখায় ভয় পেলেও কাছে গেলে বোঝা যায়, এই ভাস্কর্য নয়- বরং প্রকৃত দানব হলো মানুষের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক, যা প্রতিনিয়ত আঘাত করছে প্রকৃতি, মানুষের স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যকে।

বিদ্যানন্দের দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক বলেন, “পর্যটকরা এখানে এসে শুধু ছবি তুলবেন না, প্লাস্টিকের ক্ষতি সম্পর্কে জানবেন। পুরো মৌসুম জুড়ে পথনাটক, সংগীতানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলবে।”

পর্যটকদের মতে, এই দানব দেখে প্লাস্টিকের ভয়ংকর পরিণতি বোঝা যায় সহজেই।

পর্যটকরা বলেন, মানুষ সচেতন না হলে এই অদৃশ্য দানবই একদিন পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করবে।

সৈকত থেকেই ৮০ টন প্লাস্টিক সংগ্রহ

বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্লাস্টিকবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারাদেশ থেকে তারা ইতোমধ্যে ৫০০ টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছেন।

কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতে চলমান অভিযানে গত চার মাসে সংগৃহীত হয়েছে আরও ৮০ টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য। তার একটি অংশ দিয়েই তৈরি হয়েছে এই দানব ভাস্কর্য।

ভাস্কর্য তৈরিতে প্লাস্টিক ছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ, পেরেক ও অ্যাডহেসিভসহ অন্যান্য উপকরণ।

ভাস্কর্য নির্মাণে সৃষ্টিশীল সহযোগিতা দিয়েছে পপ-ফাইভ অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেড।

বিদ্যানন্দের উদ্যোগে গত ৩ আগস্ট ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ ও ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ মার্কেট’ থেকে এতদিনে বহু প্লাস্টিক সংগ্রহ হয়েছে।

প্লাস্টিকের বিনিময়ে চাল–ডাল–তেলসহ নিত্যপণ্য এবং পর্যটকদের জন্য উপহারও দেওয়া হয়। এতে মানুষ ইতিবাচকভাবে বর্জ্য জমা দিতে উৎসাহিত হয়েছে বলেই জানায় সংগঠনটি।

প্লাস্টিক দূষণ কমেনি, বরং বেড়েছে

২০২২ সালে প্রথমবার কক্সবাজারে প্লাস্টিক দানব প্রদর্শন করে জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ। এবার সেই দানব ফিরেছে আরও ভয়ংকর রূপ নিয়ে ফলে প্রতীকী বার্তাটি স্পষ্ট- ‘প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা কমেনি; বরং আরও বাড়ছে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, “সমুদ্রসৈকতকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষায় বিদ্যানন্দের এই উদ্যোগ অত্যন্ত কার্যকর ও টেকসই। ভাস্কর্য ও প্রদর্শনী পর্যটকদের সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

৫০০ মেট্রিক টন বর্জ্য রিসাইকেল

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বেচ্ছাশ্রমে প্লাস্টিক সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহারের কাজ চলছে অনেক দিন ধরেই। আমরা সারাদেশে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। এতে যেমন সরকারি ব্যয় কমছে, তেমনি মানুষও বুঝতে পারছে—বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়।

তিনি আরও জানান, আগামী ছয় মাস কক্সবাজারে প্লাস্টিক দূষণ রোধে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবে বিদ্যানন্দ।

‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্লাস্টিক ভাস্কর্য’ দাবি

ভাস্কর্যটি নির্মাণে যুক্ত শিল্পীরা দাবি করছেন—এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্লাস্টিক ভাস্কর্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর আবীর কর্মকার বলেন, ছয় মেট্রিক টন ওশান প্লাস্টিক দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠ, পেরেক, গামসহ কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে কাঠামো স্থিতিশীল রাখতে।

তিনি বলেন, নোংরা প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করে শিল্পে রূপ দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে এই ভাস্কর্য সাধারণ মানুষকে প্লাস্টিক দূষণের বাস্তব ক্ষতি বুঝতে সহায়তা করবে।

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক বলেন, গত চার মাসে উপকূলের বিভিন্ন অংশ থেকে যে প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে, তা বাছাই ও পরিশোধন করে ভাস্কর্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি জানান, পুরো পর্যটন মৌসুমে ভাস্কর্যটির পাশে থাকবে পথনাটক, সংগীতানুষ্ঠানসহ প্লাস্টিকবিরোধী বিভিন্ন আয়োজন। পর্যটকদের চোখের সামনে বার্তাটা স্পষ্ট করে দিতে চাই—আপনি একটি প্লাস্টিক ফেললে ক্ষতি শুধু সমুদ্রের নয়, আপনার ভবিষ্যতেরও।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভাস্কর্য

উদ্বোধনের পর থেকেই সীগাল পয়েন্টে উৎসুক মানুষের ভিড় বেড়েছে। অনেকে মোবাইলে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন।স্থানীয়রা বলছেন, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরির এমন সৃজনশীল উদ্যোগ কক্সবাজারে এবারই প্রথম।

পরিবেশবিদদের মতে, প্লাস্টিকের ভয়াবহতা প্রচারণা বা লিফলেট নয়—এ ধরনের বাস্তব ও দৃশ্যমান শিল্পই সবচেয়ে দ্রুত মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আনে। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে পরিবেশ রক্ষায় ‘প্লাস্টিক দানব’ এখন হয়ে উঠেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

Please Share This Post in Your Social Media

কক্সবাজার সৈকতে ‘প্লাস্টিকের দানব’

কক্সবাজার প্রতিনিধি
Update Time : ১২:৩৩:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বানানো হয়েছে ‘প্লাস্টিক দানব’। পরিত্যক্ত সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি বিশাল এই ভাস্কর্য যেন বিশ্বের ওপর প্লাস্টিকের হিংস্র থাবার প্রতীক।

বুধবার সন্ধ্যায় সৈকতের সুগন্ধা সীগাল পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত এই ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করা হয়েছে বলে জানান বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিল্পী আবীর কর্মকার বলেন, চারুকলার একদল শিল্পী প্রায় ৬ টন প্লাস্টিক দিয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন।

তাদের দাবি- এটাই ওসান-প্লাস্টিক দিয়ে বানানো বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ‘প্লাস্টিক মনস্টার’।

সরেজমিনে দেখা যায়, বালিয়াড়ির উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বহু টন প্লাস্টিক বর্জ্যে গড়া বিশাল ভাস্কর্যটি। মাঝখানে যেন দু’ভাগ হয়ে যাওয়া পৃথিবী, যার বুক চিরে বেরিয়ে আসছে প্লাস্টিক।

আয়োজকেরা বলছেন, মানবজাতি যে প্লাস্টিক দূষণের চাপে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে-এ ভাস্কর্য তারই রূপক।

ভাস্কর্যটি দেখতে বুধবার সন্ধ্যায় উপচে পড় ভীড় দেখা যায় সৈকতে। পর্যটকদের কেউ প্রথম দেখায় ভয় পেলেও কাছে গেলে বোঝা যায়, এই ভাস্কর্য নয়- বরং প্রকৃত দানব হলো মানুষের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক, যা প্রতিনিয়ত আঘাত করছে প্রকৃতি, মানুষের স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যকে।

বিদ্যানন্দের দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক বলেন, “পর্যটকরা এখানে এসে শুধু ছবি তুলবেন না, প্লাস্টিকের ক্ষতি সম্পর্কে জানবেন। পুরো মৌসুম জুড়ে পথনাটক, সংগীতানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলবে।”

পর্যটকদের মতে, এই দানব দেখে প্লাস্টিকের ভয়ংকর পরিণতি বোঝা যায় সহজেই।

পর্যটকরা বলেন, মানুষ সচেতন না হলে এই অদৃশ্য দানবই একদিন পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করবে।

সৈকত থেকেই ৮০ টন প্লাস্টিক সংগ্রহ

বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্লাস্টিকবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারাদেশ থেকে তারা ইতোমধ্যে ৫০০ টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছেন।

কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতে চলমান অভিযানে গত চার মাসে সংগৃহীত হয়েছে আরও ৮০ টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য। তার একটি অংশ দিয়েই তৈরি হয়েছে এই দানব ভাস্কর্য।

ভাস্কর্য তৈরিতে প্লাস্টিক ছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ, পেরেক ও অ্যাডহেসিভসহ অন্যান্য উপকরণ।

ভাস্কর্য নির্মাণে সৃষ্টিশীল সহযোগিতা দিয়েছে পপ-ফাইভ অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেড।

বিদ্যানন্দের উদ্যোগে গত ৩ আগস্ট ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ ও ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ মার্কেট’ থেকে এতদিনে বহু প্লাস্টিক সংগ্রহ হয়েছে।

প্লাস্টিকের বিনিময়ে চাল–ডাল–তেলসহ নিত্যপণ্য এবং পর্যটকদের জন্য উপহারও দেওয়া হয়। এতে মানুষ ইতিবাচকভাবে বর্জ্য জমা দিতে উৎসাহিত হয়েছে বলেই জানায় সংগঠনটি।

প্লাস্টিক দূষণ কমেনি, বরং বেড়েছে

২০২২ সালে প্রথমবার কক্সবাজারে প্লাস্টিক দানব প্রদর্শন করে জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ। এবার সেই দানব ফিরেছে আরও ভয়ংকর রূপ নিয়ে ফলে প্রতীকী বার্তাটি স্পষ্ট- ‘প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা কমেনি; বরং আরও বাড়ছে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, “সমুদ্রসৈকতকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষায় বিদ্যানন্দের এই উদ্যোগ অত্যন্ত কার্যকর ও টেকসই। ভাস্কর্য ও প্রদর্শনী পর্যটকদের সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

৫০০ মেট্রিক টন বর্জ্য রিসাইকেল

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বেচ্ছাশ্রমে প্লাস্টিক সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহারের কাজ চলছে অনেক দিন ধরেই। আমরা সারাদেশে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। এতে যেমন সরকারি ব্যয় কমছে, তেমনি মানুষও বুঝতে পারছে—বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়।

তিনি আরও জানান, আগামী ছয় মাস কক্সবাজারে প্লাস্টিক দূষণ রোধে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবে বিদ্যানন্দ।

‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্লাস্টিক ভাস্কর্য’ দাবি

ভাস্কর্যটি নির্মাণে যুক্ত শিল্পীরা দাবি করছেন—এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্লাস্টিক ভাস্কর্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর আবীর কর্মকার বলেন, ছয় মেট্রিক টন ওশান প্লাস্টিক দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠ, পেরেক, গামসহ কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে কাঠামো স্থিতিশীল রাখতে।

তিনি বলেন, নোংরা প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করে শিল্পে রূপ দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে এই ভাস্কর্য সাধারণ মানুষকে প্লাস্টিক দূষণের বাস্তব ক্ষতি বুঝতে সহায়তা করবে।

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক বলেন, গত চার মাসে উপকূলের বিভিন্ন অংশ থেকে যে প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে, তা বাছাই ও পরিশোধন করে ভাস্কর্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি জানান, পুরো পর্যটন মৌসুমে ভাস্কর্যটির পাশে থাকবে পথনাটক, সংগীতানুষ্ঠানসহ প্লাস্টিকবিরোধী বিভিন্ন আয়োজন। পর্যটকদের চোখের সামনে বার্তাটা স্পষ্ট করে দিতে চাই—আপনি একটি প্লাস্টিক ফেললে ক্ষতি শুধু সমুদ্রের নয়, আপনার ভবিষ্যতেরও।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভাস্কর্য

উদ্বোধনের পর থেকেই সীগাল পয়েন্টে উৎসুক মানুষের ভিড় বেড়েছে। অনেকে মোবাইলে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন।স্থানীয়রা বলছেন, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরির এমন সৃজনশীল উদ্যোগ কক্সবাজারে এবারই প্রথম।

পরিবেশবিদদের মতে, প্লাস্টিকের ভয়াবহতা প্রচারণা বা লিফলেট নয়—এ ধরনের বাস্তব ও দৃশ্যমান শিল্পই সবচেয়ে দ্রুত মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আনে। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে পরিবেশ রক্ষায় ‘প্লাস্টিক দানব’ এখন হয়ে উঠেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।