ঢাকা ০২:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ

‘কক্সবাজারে বিআরটিএ চলছে দালাল দিয়ে, ঘুষ না দিলে হয়রানি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:২৩:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৪৪ Time View

গত ২৮ জুলাই দৈনিক কক্সবাজার-এ ‘কক্সবাজারে বিআরটিএ চলছে দালাল দিয়ে, ঘুষ না দিলে হয়রানি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রতিবেদনটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত নং-২, কক্সবাজার-এর গোচরীভূত হয়। প্রকাশিত সংবাদের তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় নিম্নোক্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়-‘আবদুল করিম, কক্সবাজার শহরের পেশকার পাড়ায় বসবাস করেন। তিনি টানা ১০ বছর ধরেই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম চলাচলকারি একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক। গত ডিসেম্বর মাসে তার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। শেষ হওয়ার আগেই তিনি নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর কক্সবাজার কার্যালয়ে নবায়নের আবেদন করেন। কিন্তু তিনি লাইসেন্সটি হাতে পেতে ৬ মাসের বেশি সময় লেগেছে। আর এর জন্য সরকারের নির্ধারিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আর হয়রাণী ও ভোগান্তিতে ছিলেন টানা ৬ মাস ।

আবদুল করিম জানান, যাত্রীবাহী বাস চালক হওয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে না থাকলে পথে পথে নানা সমস্যা ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নভেম্বরেই নবায়নের আবেদনটি জমা দেন। লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত আড়াই হাজারের কম টাকা জমার রশিদসহ আবেদনটি করা হয়। কিন্তু আবেদন জমা দেয়ার পর শুরু হয় নানা ভোগান্তি ও হয়রানী। দফায় দফায় বিআরটিএ কার্যালয়ে যাওয়ার পরও তাকে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া শুরু করে। এমন কি আঙ্গুলের ছাপ দিতে সময় লেগেছে ৩ মাস। ছাপ প্রদানের দিন অফিসের এক সহকারিকে দিতে হয়েছে ঘুষও। এরপর লাইসেন্সটির জন্য ঘুরতে হয়েছে এপ্রিল পর্যন্ত।

আবদুল করিমের দফায় দফায় বিআরটিএ কার্যালয়ে আসা-যাওয়া দেখে এক ব্যক্তি তাকে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গনের রশিদ উল্লাহ নামের এক যুবকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আর ওই যুবককে ৫ হাজার টাকা দেয়ার ৩ দিন পরই হাতে পান লাইসেন্সটি ।

আবদুল করিমের কথার সূত্র ধরেই বিআরটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ,পরিবহণ সংশ্লিষ্ট মালিক চালকদের সাথে আলাপকালে তথ্য মিলেছে এই কার্যালয় ঘিরে অনিয়ম- দুর্নীতির।

সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য বলছে, বিআরটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরী ও মোটর যান পরিদর্শক মো. মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে একটি দালাল চক্রের দ্বারাই চলছে কার্যালয়ের ঘুষ আদায়ের কাজটি। জেলা জুড়ে ১৫/২০ জনের দালাল চক্র দিয়ে লাইসেন্স থেকে শুরু করে পরিবহন রেজিস্ট্রেশনের ঘুষ আদায় করে থাকেন তারা। আর দালালের ইংগিত না পেলে এই কার্যালয়ে গিয়ে কোন আলাপ পর্যন্ত করা হয় না। এমনকি নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে দালালকে টাকা দিলে অংশ দিতে হয় না পরীক্ষায়ও। আর টাকা না দিলে পরীক্ষায় ভালো করলেও মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। আর দালালরাই মাঠপর্যায়ে বিচরণ করে পরিবহণ মালিক ও চালকদের তাদের পরিবহণটির রেজিস্ট্রেশন, নতুন লাইন্সেস তৈরি, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনে ঘুষের বিনিময়ে ফিটনেস সনদ প্রদান ও নবায়নসহ সব কাজ করে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে লাইসেন্স বাবদ ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

নতুন লাইসেন্স নিতে আসা কক্সবাজার রামু উপজেলার একটি এনজিও কর্মী (নাম গোপন রাখার শর্তে) জানিয়েছেন, লাইসেন্স নিতে আসা পরীক্ষার্থীকে দুভাগে ভাগ করা হয় । এক ভাগ দালাল চক্রের সাথে কথা বলা। অন্যরা পাশ করে লাইসেন্স দিতে চাওয়া। আর দালাল চক্রের পরীক্ষার্থীরা কোনো রকম গাড়িতে বসে স্টিয়ারিং ধরতে পারলেই পাশ। আর দিতে হয় না কোনো পরীক্ষা। এরপর লাইসেন্সের জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা। তারপর মেলে লাইসেন্স। অন্যদের পড়তে হয় ভোগান্তির কবলে।

রফিকুল ইসলাম নামের চকরিয়ার এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তার নিজস্ব অটোরিকশার নতুন লাইসেন্স নিতে দালালদের দিতে হয়েছে ৯ হাজার টাকা। টাকা দেয়ার দেড় বছর পরই পেয়েছেন লাইসেন্সটি।

সৌদি আরব যাওয়ার জন্য লাইসেন্স নিতে আসা রামুর রাজ্জাক আলী জানান, এক বছর আগে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। বিআরটিএ কার্যালয়ে গেছেন অনেকবার। পরীক্ষাও দিয়েছেন দুবার। এখনও হাতে পাননি লাইসেন্স। এর মধ্যে এক যুবককে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ওই অফিসের একজন কর্মচারি । আর ওই যুবক এখন ১৬ হাজার টাকা দাবি করছেন। টাকা দিলে কয়েক দিনের মধ্যে লাইসেন্স দেয়ার কথা বলছেন। তবে এখনও টাকা দেননি তিনি।

বিআরটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরী এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, নানাভাবে কয়েকজন দালাল সক্রিয় হওয়ার তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু আমার কার্যালয়ে কোন দালাল নেই। এরা কারা শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিআরটিএ-এর সকল সেবা অনলাইন নির্ভর, এখানে ঘুষ গ্রহণ বা হয়রানীর কোন সুযোগ নেই’- মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।”

‘দৈনিক কক্সবাজার’ পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনাক্রমে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত নং-২, কক্সবাজার-এর নিকট প্রতিয়মান হয় কক্সবাজার বিআরটিএ অফিসে দালাল চক্র সক্রিয় থাকায় সাধারণ নাগরিকদের ড্রাইভিং লাইন্সেস প্রাপ্তিতে ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। উক্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বুঝা যায় ইতোপূর্বে বহু মানুষ সঠিক সময়ে ড্রাইভিং লাইন্সেস না পাওয়ার বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেছেন। নিম্নস্বাক্ষরকারীর যথেষ্ট সন্দেহ যে, বিআরটিএ- কক্সবাজার অফিসে সক্রিয় দালাল চক্রের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ ভোগান্তিতে পড়ছে। এ ধরনের কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের হয়রানির পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।

সংবাদটি ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৯০ (১)(সি) ধারায় আমলে নেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট-এর নজরে আসে। উক্ত প্রতিবেদনে বর্ণিত ঘটনা পর্যালোচনায় দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৪১৭/৪২০ সহ অন্যান্য কিছু ধারায় অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে মর্মে সন্দেহের কারণ রয়েছে যা তদন্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু উপরোক্ত অপরাধসমূহ সুনির্দিষ্টভাবে আরো কার কার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে তাদের বিস্তারিত নাম, ঠিকানা ‘দৈনিক কক্সবাজার’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট নয়। কয়েকজন ভুক্তভোগীর নাম থাকলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা প্রতিবেদনে নাই। অধিকন্তু উক্ত পত্রিকার উক্ত সংবাদে, বিআরটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরীকে কোড করে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘তিনি এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেছেন, নানাভাবে কয়েকজন দালাল সক্রিয় হওয়ার তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু আমার কার্যালয়ে কোন দালাল নেই। এরা কারা শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিআরটিএ-এর সকল সেবা অনলাইন নির্ভর এখানে ঘুষ গ্রহণ বা হয়রানী করার কোন সুযোগ নেই।’ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে সহকারী পরিচালকও বিষয়টি সনাক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।এই প্রেক্ষিতে অপরাধটি কাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে তা প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ করা প্রয়োজন এবং কোন সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী তাতে জড়িত আছে কি-না সেই বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে তাদেরও সনাক্ত করা প্রয়োজন । অধিকন্তু প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর লাইসেন্স প্রস্তুত হয়ে তা ডাকযোগে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় ইস্যু হওয়া সত্ত্বেও ডাক বিভাগের কিছু অসাধু পিয়ন/কর্মচারী সেগুলো বিলি না করে প্রার্থীর নিকট হতে উৎকোচ দাবী করে এবং উৎকোচ ব্যতিত লাইসেন্স হস্তান্তর না করে হয়রানী করে। এক্ষেত্রে ডাক বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী তাতে জড়িত আছে কি-না সেই বিষয়েও তদন্তের মাধ্যমে তাদেরও সনাক্ত করা প্রয়োজন মর্মে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত নং-২, কক্সবাজার মনে করে।

এমতাবস্থায়, ‘দৈনিক কক্সবাজার’ পত্রিকার প্রতিবেদকসহ অপরাপর সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও মুচলেকা গ্রহণপূর্বক আগামি ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অফিসার ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখা, কক্সবাজার-কে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

Please Share This Post in Your Social Media

১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ

‘কক্সবাজারে বিআরটিএ চলছে দালাল দিয়ে, ঘুষ না দিলে হয়রানি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি
Update Time : ০৭:২৩:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪

গত ২৮ জুলাই দৈনিক কক্সবাজার-এ ‘কক্সবাজারে বিআরটিএ চলছে দালাল দিয়ে, ঘুষ না দিলে হয়রানি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রতিবেদনটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত নং-২, কক্সবাজার-এর গোচরীভূত হয়। প্রকাশিত সংবাদের তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় নিম্নোক্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়-‘আবদুল করিম, কক্সবাজার শহরের পেশকার পাড়ায় বসবাস করেন। তিনি টানা ১০ বছর ধরেই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম চলাচলকারি একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক। গত ডিসেম্বর মাসে তার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। শেষ হওয়ার আগেই তিনি নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর কক্সবাজার কার্যালয়ে নবায়নের আবেদন করেন। কিন্তু তিনি লাইসেন্সটি হাতে পেতে ৬ মাসের বেশি সময় লেগেছে। আর এর জন্য সরকারের নির্ধারিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আর হয়রাণী ও ভোগান্তিতে ছিলেন টানা ৬ মাস ।

আবদুল করিম জানান, যাত্রীবাহী বাস চালক হওয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে না থাকলে পথে পথে নানা সমস্যা ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নভেম্বরেই নবায়নের আবেদনটি জমা দেন। লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত আড়াই হাজারের কম টাকা জমার রশিদসহ আবেদনটি করা হয়। কিন্তু আবেদন জমা দেয়ার পর শুরু হয় নানা ভোগান্তি ও হয়রানী। দফায় দফায় বিআরটিএ কার্যালয়ে যাওয়ার পরও তাকে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া শুরু করে। এমন কি আঙ্গুলের ছাপ দিতে সময় লেগেছে ৩ মাস। ছাপ প্রদানের দিন অফিসের এক সহকারিকে দিতে হয়েছে ঘুষও। এরপর লাইসেন্সটির জন্য ঘুরতে হয়েছে এপ্রিল পর্যন্ত।

আবদুল করিমের দফায় দফায় বিআরটিএ কার্যালয়ে আসা-যাওয়া দেখে এক ব্যক্তি তাকে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গনের রশিদ উল্লাহ নামের এক যুবকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আর ওই যুবককে ৫ হাজার টাকা দেয়ার ৩ দিন পরই হাতে পান লাইসেন্সটি ।

আবদুল করিমের কথার সূত্র ধরেই বিআরটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ,পরিবহণ সংশ্লিষ্ট মালিক চালকদের সাথে আলাপকালে তথ্য মিলেছে এই কার্যালয় ঘিরে অনিয়ম- দুর্নীতির।

সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য বলছে, বিআরটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরী ও মোটর যান পরিদর্শক মো. মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে একটি দালাল চক্রের দ্বারাই চলছে কার্যালয়ের ঘুষ আদায়ের কাজটি। জেলা জুড়ে ১৫/২০ জনের দালাল চক্র দিয়ে লাইসেন্স থেকে শুরু করে পরিবহন রেজিস্ট্রেশনের ঘুষ আদায় করে থাকেন তারা। আর দালালের ইংগিত না পেলে এই কার্যালয়ে গিয়ে কোন আলাপ পর্যন্ত করা হয় না। এমনকি নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে দালালকে টাকা দিলে অংশ দিতে হয় না পরীক্ষায়ও। আর টাকা না দিলে পরীক্ষায় ভালো করলেও মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। আর দালালরাই মাঠপর্যায়ে বিচরণ করে পরিবহণ মালিক ও চালকদের তাদের পরিবহণটির রেজিস্ট্রেশন, নতুন লাইন্সেস তৈরি, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনে ঘুষের বিনিময়ে ফিটনেস সনদ প্রদান ও নবায়নসহ সব কাজ করে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে লাইসেন্স বাবদ ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

নতুন লাইসেন্স নিতে আসা কক্সবাজার রামু উপজেলার একটি এনজিও কর্মী (নাম গোপন রাখার শর্তে) জানিয়েছেন, লাইসেন্স নিতে আসা পরীক্ষার্থীকে দুভাগে ভাগ করা হয় । এক ভাগ দালাল চক্রের সাথে কথা বলা। অন্যরা পাশ করে লাইসেন্স দিতে চাওয়া। আর দালাল চক্রের পরীক্ষার্থীরা কোনো রকম গাড়িতে বসে স্টিয়ারিং ধরতে পারলেই পাশ। আর দিতে হয় না কোনো পরীক্ষা। এরপর লাইসেন্সের জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা। তারপর মেলে লাইসেন্স। অন্যদের পড়তে হয় ভোগান্তির কবলে।

রফিকুল ইসলাম নামের চকরিয়ার এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তার নিজস্ব অটোরিকশার নতুন লাইসেন্স নিতে দালালদের দিতে হয়েছে ৯ হাজার টাকা। টাকা দেয়ার দেড় বছর পরই পেয়েছেন লাইসেন্সটি।

সৌদি আরব যাওয়ার জন্য লাইসেন্স নিতে আসা রামুর রাজ্জাক আলী জানান, এক বছর আগে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। বিআরটিএ কার্যালয়ে গেছেন অনেকবার। পরীক্ষাও দিয়েছেন দুবার। এখনও হাতে পাননি লাইসেন্স। এর মধ্যে এক যুবককে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ওই অফিসের একজন কর্মচারি । আর ওই যুবক এখন ১৬ হাজার টাকা দাবি করছেন। টাকা দিলে কয়েক দিনের মধ্যে লাইসেন্স দেয়ার কথা বলছেন। তবে এখনও টাকা দেননি তিনি।

বিআরটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরী এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, নানাভাবে কয়েকজন দালাল সক্রিয় হওয়ার তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু আমার কার্যালয়ে কোন দালাল নেই। এরা কারা শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিআরটিএ-এর সকল সেবা অনলাইন নির্ভর, এখানে ঘুষ গ্রহণ বা হয়রানীর কোন সুযোগ নেই’- মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।”

‘দৈনিক কক্সবাজার’ পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনাক্রমে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত নং-২, কক্সবাজার-এর নিকট প্রতিয়মান হয় কক্সবাজার বিআরটিএ অফিসে দালাল চক্র সক্রিয় থাকায় সাধারণ নাগরিকদের ড্রাইভিং লাইন্সেস প্রাপ্তিতে ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। উক্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বুঝা যায় ইতোপূর্বে বহু মানুষ সঠিক সময়ে ড্রাইভিং লাইন্সেস না পাওয়ার বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেছেন। নিম্নস্বাক্ষরকারীর যথেষ্ট সন্দেহ যে, বিআরটিএ- কক্সবাজার অফিসে সক্রিয় দালাল চক্রের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ ভোগান্তিতে পড়ছে। এ ধরনের কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের হয়রানির পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।

সংবাদটি ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৯০ (১)(সি) ধারায় আমলে নেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট-এর নজরে আসে। উক্ত প্রতিবেদনে বর্ণিত ঘটনা পর্যালোচনায় দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৪১৭/৪২০ সহ অন্যান্য কিছু ধারায় অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে মর্মে সন্দেহের কারণ রয়েছে যা তদন্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু উপরোক্ত অপরাধসমূহ সুনির্দিষ্টভাবে আরো কার কার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে তাদের বিস্তারিত নাম, ঠিকানা ‘দৈনিক কক্সবাজার’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট নয়। কয়েকজন ভুক্তভোগীর নাম থাকলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা প্রতিবেদনে নাই। অধিকন্তু উক্ত পত্রিকার উক্ত সংবাদে, বিআরটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরীকে কোড করে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘তিনি এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেছেন, নানাভাবে কয়েকজন দালাল সক্রিয় হওয়ার তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু আমার কার্যালয়ে কোন দালাল নেই। এরা কারা শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিআরটিএ-এর সকল সেবা অনলাইন নির্ভর এখানে ঘুষ গ্রহণ বা হয়রানী করার কোন সুযোগ নেই।’ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে সহকারী পরিচালকও বিষয়টি সনাক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।এই প্রেক্ষিতে অপরাধটি কাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে তা প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ করা প্রয়োজন এবং কোন সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী তাতে জড়িত আছে কি-না সেই বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে তাদেরও সনাক্ত করা প্রয়োজন । অধিকন্তু প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর লাইসেন্স প্রস্তুত হয়ে তা ডাকযোগে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় ইস্যু হওয়া সত্ত্বেও ডাক বিভাগের কিছু অসাধু পিয়ন/কর্মচারী সেগুলো বিলি না করে প্রার্থীর নিকট হতে উৎকোচ দাবী করে এবং উৎকোচ ব্যতিত লাইসেন্স হস্তান্তর না করে হয়রানী করে। এক্ষেত্রে ডাক বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী তাতে জড়িত আছে কি-না সেই বিষয়েও তদন্তের মাধ্যমে তাদেরও সনাক্ত করা প্রয়োজন মর্মে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত নং-২, কক্সবাজার মনে করে।

এমতাবস্থায়, ‘দৈনিক কক্সবাজার’ পত্রিকার প্রতিবেদকসহ অপরাপর সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও মুচলেকা গ্রহণপূর্বক আগামি ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অফিসার ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখা, কক্সবাজার-কে নির্দেশ প্রদান করা হলো।