ওসমান হাদিকে গুলি: সীমান্তে যেতে ৫টি যানবাহন বদলান দুই সন্দেহভাজন
- Update Time : ১০:৩৩:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ১৮ Time View
শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলায় জড়িত দুই সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ঢাকা থেকে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে যেতে পাঁচ দফা যানবাহন বদলান। তাঁরা মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ‘নম্বর প্লেট’ বদলে ভুয়া নম্বর প্লেট লাগিয়ে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি ফেলে দিয়েছিলেন মুঠোফোন ও সিম।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রের দাবি, দুই সন্দেহভাজন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।
রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় গত শুক্রবার চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে। তিনি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাদিকে গতকাল সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে।
হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় গত রোববার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ জাবের বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ফয়সলসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। পরে মামলাটি ডিবিতে (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ) হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনা ও অর্থের জোগানদাতা পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, ফয়সল নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। আলমগীর যুবলীগের রাজনীতি করতেন।
হাদির ওপর হামলার ঘটনায় মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ফয়সলের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু ও ফয়সলের বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে আবদুল হান্নান এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তার অভিযোগে সঞ্জয় চিসিম ও সিমিরন দিও। এর মধ্যে গতকাল সামিয়া, সিপু ও মারিয়ার ৫ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।
ফয়সল করিমের সহযোগী গ্রেপ্তার
এদিকে ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদের সহযোগী মো. কবিরকে গত রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গতকাল সোমবার র্যাবের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়। র্যাবের ভাষ্যমতে, কবির ঘটনার কয়েক দিন আগে মাসুদ করিমের সঙ্গে বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন।
হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে হাদি ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে আসছিলেন। এর জেরে তাঁকে একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে।
মামলাটির তদন্ত করছে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাচেষ্টায় সরাসরি অংশ নেন ফয়সল ও আলমগীর শেখ। তবে নেপথ্যে কারা ছিলেন, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। হাদির ব্যবহৃত মুঠোফোন এখনো উদ্ধার হয়নি।
মোটরসাইকেলে নম্বর প্লেট পরিবর্তন
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হামলার আগের রাতে ১১ ডিসেম্বর সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টে ছিলেন ফয়সল ও আলমগীর। রাত ২টার দিকে ফয়সলের বান্ধবী মারিয়া তাঁর ছোট বোনকে নিয়ে সেখানে যান। তাঁরা একসঙ্গে গল্প করেন। মারিয়া আরও বলেছেন, তাঁর সঙ্গে ফয়সলের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।
১২ ডিসেম্বর সকালে সাভার থেকে একটি মোটরসাইকেলে ফয়সল ও আলমগীর ঢাকায় আসেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। সূত্র আরও বলছে, এরপর তাঁরা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ফয়সলের বোনের বাসায় গিয়ে গ্যারেজে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করেন। সেখানে অবস্থানের পর অটোরিকশা নিয়ে যান আমিন বাজার।
অটোরিকশা চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। সূত্র বলছে, চালক জানিয়েছেন আমিনবাজারে ফয়সল ও আলমগীরের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন এক তরুণী (ফয়সলের বান্ধবী মারিয়া)।
আমিনবাজারেই ফয়সল ও আলমগীর মুঠোফোন ও সিম ফেলে দেন। সূত্রের দাবি, আমিনবাজার থেকে কালামপুর হয়ে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে ময়মনসিংহে যান ফয়সল ও আলমগীর। ময়মনসিংহে একটি সেতু এলাকা থেকে আরেকটি গাড়ি নিয়ে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করেন তাঁরা। প্রাইভেটকারটি হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রল পাম্পে গিয়ে থামে। সেখান থেকে তিনজন যুবক এসে তাঁদের দুজনকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান। রাত আড়াইটার ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তাঁরা ভারতে ঢুকে পড়েন।
এদিকে গতকাল সকালে ময়মনসিংহের ৩৯ বিজিবির সেক্টর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার সরকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাদিকে গুলি করার সঙ্গে জড়িতরা হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন তারা।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবর্তন করা নম্বর প্লেট ও আসল নম্বর প্লেট উদ্ধার করা হয়েছে। এখন মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিককে খুঁজছে পুলিশ। এদিকে মোটরসাইকেল মালিক সন্দেহে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আবদুল হান্নান রোববার আদালতে বলেছিলেন, তাঁকে মোটরসাইকেলের বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেলেই সব সত্য বেরিয়ে আসবে। তিনি অনেক আগে মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিয়েছেন।


































































































































































































