এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী নেবে জাপান

- Update Time : ০৫:০৬:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
- / ৯৩ Time View
শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে জাপান সরকার ও সেদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
আজ বৃহস্পতিবার টোকিওর তোশি কাইকান কনফারেন্স হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’-এ এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে প্রধান পরামর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি আমার জীবনের অন্যতম আনন্দের এবং অনুপ্রেরণার দিন। এই উদ্যোগ শুধু চাকরির সুযোগ নয়, বরং জাপানকে জানার দরজাও খুলে দেবে বাংলাদেশিদের জন্য।’
এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি সংস্থা ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেইনিং (বিএমইটি) দুটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করে।
একটি স্বাক্ষর হয় বাংলাদেশ-জাপান যৌথ উদ্যোগ কাইকম ড্রিম স্ট্রিট (কেডিএস)-এর সঙ্গে, আরেকটি হয় জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কোঅপারেটিভস (এনবিসিসি) ও জাপান-বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি (জেবিবিআরএ)-র সঙ্গে।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ, যার অর্ধেকই ২৭ বছরের নিচে। এই তরুণদের জন্য দরজা খুলে দেওয়াই সরকারের দায়িত্ব।’
জাপানের শিজুওকা ওয়ার্কপ্লেস এনভায়রনমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট কোঅপারেটিভ-এর প্রতিনিধি মিৎসুরু মাতসুশিতা বলেন, ‘জাপানি অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যে বাংলাদেশিদের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমি মনে করি এই ধারা চলমান থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি কর্মীদের সম্ভাবনা অনেক। তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।’
জাপানের এনবিসিসি’র চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা স্মরণ করেন, ‘প্রফেসর ইউনূস ১৪ বছর আগে জাপানে এসে নারীদের সহায়তায় মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রমের গল্প শুনিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ব্যবসার প্রথম তিন দশকে দক্ষ কর্মী সংগ্রহে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। এখন বাংলাদেশের তরুণ, কর্মক্ষম শ্রমিকদের দিকে তাকিয়ে আছি। তারা বাংলাদেশ ও জাপান—উভয় দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।’
তিনি জানান, ‘আগামী পাঁচ বছরে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিককে আমরা স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।’
জাপানের ওয়াতামি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মিকি ওয়াতানাবে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুল বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়। আমরা সেই সংখ্যা ৩ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রসার হলে সেখানকার শিক্ষার্থীরা সহজেই জাপানের শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারবে।’
জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনি অ্যান্ড স্কিল্ড ওয়ার্কার কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (জেটকো)-এর চেয়ারম্যান হিরোয়াকি ইয়াগি বলেন, ‘জাপানের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের সম্ভাবনা অনেক, তবে ভাষা শিক্ষকের অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিকি হিরোবুমি বলেন, ‘জাপানে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, জাপানের জন্যও আশাব্যঞ্জক।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী বলেন, ‘২০২৪ সালের মধ্যে জাপানে শ্রমিক সংকট ১ কোটি ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারে।’
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বক্তারা মনে করেন, এই সেমিনার এবং সমঝোতা স্মারকগুলো জাপান-বাংলাদেশ শ্রমবাজারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়