ঢাকা ০৮:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

একুশে পদক পাচ্ছেন অভ্র কিবোর্ডের আবিষ্কারক মেহেদী হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৮:২৭:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১৮৪ Time View

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদক পাচ্ছেন অভ্র কিবোর্ডের আবিষ্কারক মেহেদী হাসান খান। বাংলা ভাষায় লেখাকে সহজতর করার জন্য তার অবদান অবিস্মরণীয়।

‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’— এমন একটি ট্যাগলাইন আজকাল অনেকেরই কম্পিউটার বা ল্যাপটপ চালু করলেই পর্দায় দেখতে পাওয়া যায়। লাইনটি ‘অভ্র’ নামের একটি সফটওয়্যারের স্বাগত বার্তা। বিশ্বায়নের এই যুগে ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা ভাষায় লেখতে পারার জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার ‘অভ্র’ কিবোর্ড। আর এটির আবিষ্কারক একজন চিকিৎসক, যার নাম মেহেদী হাসান খান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে ২০২৫ সালের একুশে পদক পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একুশে পদক প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

অভ্র উদ্ভাবনের ফলে খুব সহজেই ভার্চুয়ালি বাংলা ভাষায় লেখালেখি করতে পারছেন অনেকে। কিন্তু দীর্ঘসময় মেহেদী হাসানের এই অবিস্মরণীয় অবদান নিয়ে আলোচনা হলেও স্বীকৃতি মেলেনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

মেহেদী হাসান খান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রতি ঝোঁক ছিল তার। ২০০৩ সালের বইমেলায় বায়োস নামক একটি সংগঠনের প্রদর্শনী দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মেহেদী হাসান। তখনই তার মনে উদ্ভব হয় একটি সহজতর বাংলা লেখার সফটওয়্যার তৈরির চিন্তা।

শুরুর দিকে, ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য উপযুক্ত সফটওয়্যার না থাকায় তিনি নিজেই একটি সমাধান তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

প্রথমে মাইক্রোসফট ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেন। কিন্তু সেটি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। অবশেষে, ক্লাসিক ভিজ্যুয়াল বেসিকের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি সংস্করণ তৈরি করেন, যা বাংলা লেখার জন্য আদর্শ হয়ে ওঠে।

এক স্বাধীনতা দিবসে, ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ প্রথমবারের মতো অভ্র কী-বোর্ড উন্মুক্ত করা হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ওমিক্রনল্যাব থেকে এটি মুক্তি দেয়া হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে অভ্র।

উল্লেখ্য, অভ্র কী-বোর্ডের জন্য ২০১১ সালে মেহেদী হাসান খান তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বেসিস পুরস্কার পান। এবার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক দেয়া হচ্ছে।

মেহেদী হাসান খানের জন্ম ঢাকায়। তিনি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।

তার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রতি ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। ২০০৩ সালে তিনি ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার জন্য ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড তৈরি করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) একুশে পদকের জন্য মনোনীতদের নাম প্রকাশ করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

একুশে পদকের জন্য মনোনীতরা হলেন- চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে উস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) ও ফেরদৌস আরা, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন, চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লা (মরণোত্তর), সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে মাহমুদুর রহমান, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ড. শহীদুল আলম, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহেদী হাসান খান (অভ্র’র জনক), সমাজসেবায় মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্যে হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) ও শহীদুল জহির (মো. শহীদুল হক) (মরণোত্তর) এবং গবেষণায় মঈদুল হাসান।

এছাড়া, ক্রীড়ায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ

শুধু মেহদী নয়, একুশে পদক পাবে অভ্রর পুরো দল: ফারুকী

Please Share This Post in Your Social Media

একুশে পদক পাচ্ছেন অভ্র কিবোর্ডের আবিষ্কারক মেহেদী হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৮:২৭:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদক পাচ্ছেন অভ্র কিবোর্ডের আবিষ্কারক মেহেদী হাসান খান। বাংলা ভাষায় লেখাকে সহজতর করার জন্য তার অবদান অবিস্মরণীয়।

‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’— এমন একটি ট্যাগলাইন আজকাল অনেকেরই কম্পিউটার বা ল্যাপটপ চালু করলেই পর্দায় দেখতে পাওয়া যায়। লাইনটি ‘অভ্র’ নামের একটি সফটওয়্যারের স্বাগত বার্তা। বিশ্বায়নের এই যুগে ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা ভাষায় লেখতে পারার জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার ‘অভ্র’ কিবোর্ড। আর এটির আবিষ্কারক একজন চিকিৎসক, যার নাম মেহেদী হাসান খান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে ২০২৫ সালের একুশে পদক পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একুশে পদক প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

অভ্র উদ্ভাবনের ফলে খুব সহজেই ভার্চুয়ালি বাংলা ভাষায় লেখালেখি করতে পারছেন অনেকে। কিন্তু দীর্ঘসময় মেহেদী হাসানের এই অবিস্মরণীয় অবদান নিয়ে আলোচনা হলেও স্বীকৃতি মেলেনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

মেহেদী হাসান খান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রতি ঝোঁক ছিল তার। ২০০৩ সালের বইমেলায় বায়োস নামক একটি সংগঠনের প্রদর্শনী দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মেহেদী হাসান। তখনই তার মনে উদ্ভব হয় একটি সহজতর বাংলা লেখার সফটওয়্যার তৈরির চিন্তা।

শুরুর দিকে, ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য উপযুক্ত সফটওয়্যার না থাকায় তিনি নিজেই একটি সমাধান তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

প্রথমে মাইক্রোসফট ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেন। কিন্তু সেটি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। অবশেষে, ক্লাসিক ভিজ্যুয়াল বেসিকের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি সংস্করণ তৈরি করেন, যা বাংলা লেখার জন্য আদর্শ হয়ে ওঠে।

এক স্বাধীনতা দিবসে, ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ প্রথমবারের মতো অভ্র কী-বোর্ড উন্মুক্ত করা হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ওমিক্রনল্যাব থেকে এটি মুক্তি দেয়া হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে অভ্র।

উল্লেখ্য, অভ্র কী-বোর্ডের জন্য ২০১১ সালে মেহেদী হাসান খান তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বেসিস পুরস্কার পান। এবার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক দেয়া হচ্ছে।

মেহেদী হাসান খানের জন্ম ঢাকায়। তিনি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।

তার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রতি ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। ২০০৩ সালে তিনি ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার জন্য ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড তৈরি করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) একুশে পদকের জন্য মনোনীতদের নাম প্রকাশ করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

একুশে পদকের জন্য মনোনীতরা হলেন- চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে উস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) ও ফেরদৌস আরা, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন, চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লা (মরণোত্তর), সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে মাহমুদুর রহমান, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ড. শহীদুল আলম, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহেদী হাসান খান (অভ্র’র জনক), সমাজসেবায় মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্যে হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) ও শহীদুল জহির (মো. শহীদুল হক) (মরণোত্তর) এবং গবেষণায় মঈদুল হাসান।

এছাড়া, ক্রীড়ায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ

শুধু মেহদী নয়, একুশে পদক পাবে অভ্রর পুরো দল: ফারুকী