ঢাকা ০৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা অসফল নাটক মঞ্চস্থ; তদন্তে অনেক গোঁজামিল

আবদুল গাফফার মাহমুদ ও শাহ মনওয়ার জাহান
  • Update Time : ০৫:০৫:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২৬ Time View

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত দুই যুগে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা প্রায়শ রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠে। এসব নিয়ে চায়ের টেবিলে, আড্ডায় আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। এমনই এক হৃদয়-বিদারক, মর্মান্তিক ঘটনা ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে সংঘটিত গ্রেনেড হামলা। এই ঘটনায় মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২জন মারা যান। আহত হন অনেকে। শরীরে অসংখ্য বোমার স্প্লিন্টার নিয়ে ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আজও বেঁচে আছেন অনেকে।

এই ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় সে সময় দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে। এদিকে ২০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও মামলাটি এখনো উচ্চ আদালতে অনিষ্পন্ন আছে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলে তা দু’দফায় তদন্ত করে চার্জশীট দেয়া হয়। মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন সিআইডির অতিরিক্ত এসপি ফজলুল কবির। তিনি আদালতে চার্জশীট দাখিল করার পর মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারের জন্য চলে যায়। যথারীতি বিচার শুরুও হয়। কিন্তু হঠাৎ করে মাঝপথে বিচারকার্য থামিয়ে দেয়া হয়।

পরবর্তীতে কয়েক বছর আগে অবসরে যাওয়া এসপি আবদুল কাহহার আকন্দকে ফিরিয়ে এনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় গ্রেনেড হামলা মামলা পুনঃতদন্তের। তিনি পুনঃতদন্তের নামে একটি সাপ্লিমেন্টারী চার্জশীট প্রদান করেন আদালতে। এই চার্জশীট সম্পূর্ণ ফরমায়েশী বলেই জানা যায়। এই পুনঃতদন্তে অনেককে আসামী হিসেবে সংযুক্ত করা হয়। এসব আসামীর মধ্যে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফসহ অনেকে। প্রথম চার্জশীটে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তথ্য উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেককে আসামী করা হয়। এর মধ্যে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার (পরবর্তীতে আইজিপি) আশরাফুল হুদা, আইজিপি খোদা বখশ চৌধুরী (ঘটনার সময় ছিলেন সিআইডি প্রধান), আইজিপি শহিদুল হক প্রমুখ।

ঘটনার সময় আশরাফুল হুদা ছিলেন নিউইয়র্কে। ভারপ্রাপ্ত কমিশনার ছিলেন মিজানুর রহমান। জানা যায়, আশরাফুল হুদাকে চাপ দেয়া হচ্ছিল তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে। তিনি রাজী না হওয়ায় তাকে আসামী করা হয়। সাক্ষী বানানো হয় মিজানুর রহমানকে। এতদিন এই ঘটনা নিয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করছিলেন না। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর অনেকেই মুখ খুলছেন।

বিশেষজ্ঞকদের মতে, অনেক ‘অঘটন ঘটন পটিয়সী’ শেখ হাসিনার কূটকৌশলে এটিও একটি ‘নাটক মঞ্চায়ন’। এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে একটি নাটক মঞ্চায়নের চিত্রই ফুটে উঠে।

অভিজ্ঞমহলের জিজ্ঞাসা, একবার মামলার চার্জশীট প্রদানের পর তা স্থগিত করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দিয়ে এই মামলার তদন্তভার দেয়া হলো কেন? আর কোনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কী সিআইডিতে ছিল না? কারণ কাহহার আকন্দ এতটাই বিশ্বস্ত যে, পুরস্কার স্বরূপ তাকে পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের একটি আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর উপর সিলেটে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করে। ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে এই সমাবেশের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ। পল্টন এলাকার মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার এবং মাইক ব্যবহারের জন্য মহানগর পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন থেকে দলটি অনুমতি নেয়। এ অনুযায়ী পুলিশ মুক্তাঙ্গন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেত্রী। ট্রাক দিয়ে তৈরী মঞ্চ ছিল মুক্তাঙ্গনে। দুপুর তিনটার পর পর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু করে। এটা করার জন্য দলটি কোনো অনুমতি নেয়নি। হুট করেই মুক্তাঙ্গন থেকে সমাবেশের স্থান বদল করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। বিরোধী দলীয় নেত্রী তার বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নামেন। নিজ গাড়িতে উঠার মুহূর্তে ঘটে গ্রেনেড হামলা।

বিকেল পাঁচটার পর পর মাত্র দেড় মিনিটে তেরোটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। গ্রেনেডগুলোর একটিও মঞ্চে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি। বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে দাঁড়ানো ছিলেন সেখানেও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি। তিনি গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান। বলা হয়েছিল গাড়ীতে গুলি করা হয়। এতে গাড়ির ক্ষতি হয়। এ মর্মান্তিক ঘটনায় আইভি রহমানসহ অনেকেই নিহত হন। গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর পরই দেশি বিদেশী সংস্থা তদন্ত শুরু করে। এ ঘটনায় একটা রায় হয়েছে। মামলা তদন্তকারী ব্যক্তি বা সংস্থা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুকৌশলে এড়িয়ে যান। আবার অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে তার কোনো প্রমাণ উল্লেখ করতে ব্যর্থ হন। গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি তদন্ত কর্মকর্তা সংঘবদ্ধ হত্যার ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।

আদালত এই ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিস চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেককে সাজা দেন। মামলাটি এখনো বিচারাধীন। এই সময়ে কয়েকজন মারা গেছেন। চাকরি হারিয়েছেন অনেকে।

গত ষোলো বছর চাঞ্চল্যকর গ্রেনেড হামলার মামলার তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি। এখন সরব হয়েছেন তারা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনার তদন্তের কয়েকটি দিক তুলে ধরেন। তারা বলেন, একুশ আগস্ট সমাবেশের স্থান কেন হুট করে পরিবর্তন করা হলো। স্থান পরিবর্তন করার আগে জানানো হয়নি কেন। আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা সমাবেশস্থল পরিবর্তন করেন তাকে বা তাদের চিহ্নিত করা হয়নি কেন। বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে থাকাকালে গ্রেনেড হামলা হলোনা কেন। বক্তৃতা শেষে তিনি গাড়িতে ওঠার জন্য কয়েক মিনিট দাঁড়িয়েছিলেন, ফটোসেশনও করেন, তখনও কেন গ্রেনেড হামলা হয়নি। মঞ্চের উপরে একটা গ্রেনেডও কেন বিস্ফোরিত হলো না। মঞ্চ থেকে নামার পর হামলা হলো কেন। তার দেহরক্ষী ল্যান্স নায়েক মাহবুব পিস্তল বা রিভলবারের গুলিতে নিহত হলো কিভাবে। বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যবহৃত গাড়িতে গুলি করা হয়েছে এতে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। অথচ গাড়ি প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান তখনই দাবি করে তাদের তৈরিকৃত গাড়ি বুলেট প্রুফ। গুলিতে ক্ষতি হওয়ার কারণ নেই। তাদের দাবি অনুযায়ী গুলিতে গাড়িটির ক্ষতি হলেও দেশি-বিদেশি তদন্ত সংস্থাকে কেন সেটি পরীক্ষা করতে দেয়া হলো না। তাদের দাবি অনুযায়ী যদি কেউ গাড়িতে গুলি করে থাকে এই গুলি কারা করলো। একইভাবে তারেক রহমানের কার্যালয়ে ‘হাওয়া ভবন’ এবং তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে গ্রেনেড হামলাকারীরা আগস্টের পৃথক পৃথক তারিখে বৈঠক করে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন। কোন কোন তারিখে তারা বৈঠক করেছেন এই কথা তারা উল্লেখ করতে পারেনি।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন গ্রেনেড হামলার আগে আঠারো ও উনিশ আগস্ট হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের স্থান পরিদর্শন বা রেকি করেন। তবে হামলাকারী গোষ্ঠী কি আগেই সমাবেশস্থল পরিবর্তন হবে বলে জানতো। আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার সঙ্গে হামলাকারীদের সম্পর্ক ছিল। এই বর্বর ও নিষ্ঠুর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সুবিধাভোগী কারা। সুবিধাভোগীদের নেপথ্যে থেকে কারা কলকাঠি নেড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন্ মন্তব্য করেন, ‘লেডি হিটলারখ্যাত শেখ হাসিনার চরিত্র ও মন-মানসিকতা সম্পর্কে ইদানিং যে সব বিষয়গুলো বেরিয়ে আসছে, তাতে এ ধরনের নাটক মঞ্চায়ন খুব মামুলী ব্যাপার।’

Please Share This Post in Your Social Media

একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা অসফল নাটক মঞ্চস্থ; তদন্তে অনেক গোঁজামিল

আবদুল গাফফার মাহমুদ ও শাহ মনওয়ার জাহান
Update Time : ০৫:০৫:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত দুই যুগে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা প্রায়শ রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠে। এসব নিয়ে চায়ের টেবিলে, আড্ডায় আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। এমনই এক হৃদয়-বিদারক, মর্মান্তিক ঘটনা ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে সংঘটিত গ্রেনেড হামলা। এই ঘটনায় মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২জন মারা যান। আহত হন অনেকে। শরীরে অসংখ্য বোমার স্প্লিন্টার নিয়ে ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আজও বেঁচে আছেন অনেকে।

এই ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় সে সময় দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে। এদিকে ২০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও মামলাটি এখনো উচ্চ আদালতে অনিষ্পন্ন আছে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলে তা দু’দফায় তদন্ত করে চার্জশীট দেয়া হয়। মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন সিআইডির অতিরিক্ত এসপি ফজলুল কবির। তিনি আদালতে চার্জশীট দাখিল করার পর মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারের জন্য চলে যায়। যথারীতি বিচার শুরুও হয়। কিন্তু হঠাৎ করে মাঝপথে বিচারকার্য থামিয়ে দেয়া হয়।

পরবর্তীতে কয়েক বছর আগে অবসরে যাওয়া এসপি আবদুল কাহহার আকন্দকে ফিরিয়ে এনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় গ্রেনেড হামলা মামলা পুনঃতদন্তের। তিনি পুনঃতদন্তের নামে একটি সাপ্লিমেন্টারী চার্জশীট প্রদান করেন আদালতে। এই চার্জশীট সম্পূর্ণ ফরমায়েশী বলেই জানা যায়। এই পুনঃতদন্তে অনেককে আসামী হিসেবে সংযুক্ত করা হয়। এসব আসামীর মধ্যে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফসহ অনেকে। প্রথম চার্জশীটে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তথ্য উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেককে আসামী করা হয়। এর মধ্যে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার (পরবর্তীতে আইজিপি) আশরাফুল হুদা, আইজিপি খোদা বখশ চৌধুরী (ঘটনার সময় ছিলেন সিআইডি প্রধান), আইজিপি শহিদুল হক প্রমুখ।

ঘটনার সময় আশরাফুল হুদা ছিলেন নিউইয়র্কে। ভারপ্রাপ্ত কমিশনার ছিলেন মিজানুর রহমান। জানা যায়, আশরাফুল হুদাকে চাপ দেয়া হচ্ছিল তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে। তিনি রাজী না হওয়ায় তাকে আসামী করা হয়। সাক্ষী বানানো হয় মিজানুর রহমানকে। এতদিন এই ঘটনা নিয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করছিলেন না। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর অনেকেই মুখ খুলছেন।

বিশেষজ্ঞকদের মতে, অনেক ‘অঘটন ঘটন পটিয়সী’ শেখ হাসিনার কূটকৌশলে এটিও একটি ‘নাটক মঞ্চায়ন’। এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে একটি নাটক মঞ্চায়নের চিত্রই ফুটে উঠে।

অভিজ্ঞমহলের জিজ্ঞাসা, একবার মামলার চার্জশীট প্রদানের পর তা স্থগিত করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দিয়ে এই মামলার তদন্তভার দেয়া হলো কেন? আর কোনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কী সিআইডিতে ছিল না? কারণ কাহহার আকন্দ এতটাই বিশ্বস্ত যে, পুরস্কার স্বরূপ তাকে পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের একটি আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর উপর সিলেটে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করে। ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে এই সমাবেশের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ। পল্টন এলাকার মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার এবং মাইক ব্যবহারের জন্য মহানগর পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন থেকে দলটি অনুমতি নেয়। এ অনুযায়ী পুলিশ মুক্তাঙ্গন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেত্রী। ট্রাক দিয়ে তৈরী মঞ্চ ছিল মুক্তাঙ্গনে। দুপুর তিনটার পর পর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু করে। এটা করার জন্য দলটি কোনো অনুমতি নেয়নি। হুট করেই মুক্তাঙ্গন থেকে সমাবেশের স্থান বদল করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। বিরোধী দলীয় নেত্রী তার বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নামেন। নিজ গাড়িতে উঠার মুহূর্তে ঘটে গ্রেনেড হামলা।

বিকেল পাঁচটার পর পর মাত্র দেড় মিনিটে তেরোটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। গ্রেনেডগুলোর একটিও মঞ্চে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি। বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে দাঁড়ানো ছিলেন সেখানেও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি। তিনি গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান। বলা হয়েছিল গাড়ীতে গুলি করা হয়। এতে গাড়ির ক্ষতি হয়। এ মর্মান্তিক ঘটনায় আইভি রহমানসহ অনেকেই নিহত হন। গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর পরই দেশি বিদেশী সংস্থা তদন্ত শুরু করে। এ ঘটনায় একটা রায় হয়েছে। মামলা তদন্তকারী ব্যক্তি বা সংস্থা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুকৌশলে এড়িয়ে যান। আবার অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে তার কোনো প্রমাণ উল্লেখ করতে ব্যর্থ হন। গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি তদন্ত কর্মকর্তা সংঘবদ্ধ হত্যার ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।

আদালত এই ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিস চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেককে সাজা দেন। মামলাটি এখনো বিচারাধীন। এই সময়ে কয়েকজন মারা গেছেন। চাকরি হারিয়েছেন অনেকে।

গত ষোলো বছর চাঞ্চল্যকর গ্রেনেড হামলার মামলার তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি। এখন সরব হয়েছেন তারা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনার তদন্তের কয়েকটি দিক তুলে ধরেন। তারা বলেন, একুশ আগস্ট সমাবেশের স্থান কেন হুট করে পরিবর্তন করা হলো। স্থান পরিবর্তন করার আগে জানানো হয়নি কেন। আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা সমাবেশস্থল পরিবর্তন করেন তাকে বা তাদের চিহ্নিত করা হয়নি কেন। বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে থাকাকালে গ্রেনেড হামলা হলোনা কেন। বক্তৃতা শেষে তিনি গাড়িতে ওঠার জন্য কয়েক মিনিট দাঁড়িয়েছিলেন, ফটোসেশনও করেন, তখনও কেন গ্রেনেড হামলা হয়নি। মঞ্চের উপরে একটা গ্রেনেডও কেন বিস্ফোরিত হলো না। মঞ্চ থেকে নামার পর হামলা হলো কেন। তার দেহরক্ষী ল্যান্স নায়েক মাহবুব পিস্তল বা রিভলবারের গুলিতে নিহত হলো কিভাবে। বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যবহৃত গাড়িতে গুলি করা হয়েছে এতে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। অথচ গাড়ি প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান তখনই দাবি করে তাদের তৈরিকৃত গাড়ি বুলেট প্রুফ। গুলিতে ক্ষতি হওয়ার কারণ নেই। তাদের দাবি অনুযায়ী গুলিতে গাড়িটির ক্ষতি হলেও দেশি-বিদেশি তদন্ত সংস্থাকে কেন সেটি পরীক্ষা করতে দেয়া হলো না। তাদের দাবি অনুযায়ী যদি কেউ গাড়িতে গুলি করে থাকে এই গুলি কারা করলো। একইভাবে তারেক রহমানের কার্যালয়ে ‘হাওয়া ভবন’ এবং তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে গ্রেনেড হামলাকারীরা আগস্টের পৃথক পৃথক তারিখে বৈঠক করে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন। কোন কোন তারিখে তারা বৈঠক করেছেন এই কথা তারা উল্লেখ করতে পারেনি।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন গ্রেনেড হামলার আগে আঠারো ও উনিশ আগস্ট হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের স্থান পরিদর্শন বা রেকি করেন। তবে হামলাকারী গোষ্ঠী কি আগেই সমাবেশস্থল পরিবর্তন হবে বলে জানতো। আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার সঙ্গে হামলাকারীদের সম্পর্ক ছিল। এই বর্বর ও নিষ্ঠুর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সুবিধাভোগী কারা। সুবিধাভোগীদের নেপথ্যে থেকে কারা কলকাঠি নেড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন্ মন্তব্য করেন, ‘লেডি হিটলারখ্যাত শেখ হাসিনার চরিত্র ও মন-মানসিকতা সম্পর্কে ইদানিং যে সব বিষয়গুলো বেরিয়ে আসছে, তাতে এ ধরনের নাটক মঞ্চায়ন খুব মামুলী ব্যাপার।’