ঢাকা ১১:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
রাকসু নির্বাচন ঘিরে নানা অভিযোগ করলেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দল ঘোষণা, অভিষেক হচ্ছে মাহিদুলের ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন গ্রেপ্তার কারচুপি হলে বাংলাদেশ অচল করে দেবে ছাত্রদল: রাকিব খালেদা জিয়া হাসপাতালে নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না : সালাহউদ্দিন আহমদ রূপগঞ্জে পেট্রল পাম্পে বিস্ফোরণে দগ্ধ শ্রমিকের মৃত্যু ব্যাংককে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে থাইল্যান্ডের বিচারমন্ত্রীর বৈঠক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলের যাবজ্জীবন জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের সভায় ডিইউজে নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ প্যানেলের সিদ্ধান্ত গৃহীত

এইচএসসির ফল বিপর্যয়কে কীভাবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:২৯:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৯৪ Time View

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ

এ বছর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১২ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। সারা দেশে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ যা গত বছরের তুলনায় ১৮.৯৫ শতাংশ কম।

অন্যদিকে এবার সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সেই হিসেবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন। ২০০৪ সালের ফলাফলের তুলনায় এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। এমন কি ২০২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজনও এবার পাস করতে পারেনি।

এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কেন উত্তীর্ণ হতে পারলো না কিংবা জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কেন কমলো তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর আগে ২০০৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে গড় পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০ বছর পর এবার তার চেয়েও কম পাস করলো।

এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, পরীক্ষার খাতায় শিক্ষার্থীরা য লিখেছে, সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে গড় রেজাল্টে। সব শিক্ষা বোর্ডের ফল বৃহস্পতিবার একযোগে প্রকাশ করেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির। এই ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন পুরুষ ও ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন নারী শিক্ষার্থী। সারা দেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৬৪.৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯.৪০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৪৮.৮৬ শতাংশ, যশোরে ৫০.২০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২.৫৭ শতাংশ, বরিশালে ৬২.৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১.৮৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭.৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১.৫৪ শতাংশ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৬১ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৬২.৫৭ শতাংশ।

গত ২০ বছর ধরে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৬০ শতাংশের ওপরে ছিল। সেই মানদণ্ডে এবারের ফলকে অনেকে ‘বিপর্যয়’ মনে করছেন। এই সময়ের মধ্যে পাসের হার ও জিপিএ-৫ সংখ্যা বৃদ্ধির যে ধারা দেখা গিয়েছিল কেন তাতে ছেদ পড়লো এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ তৎকালীন আওয়ামী সরকারের আমলে দিকে তীর ছুড়ে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে, গ্রেস মার্কিয়ের মাধ্যমে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ভালো ফলাফল দেখানো হতো।’ তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে- এখন কি সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে?

এ দুটো বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষাবিদরা যে বিষয়টি সামনে আনছেন সেটি হলো- শিক্ষার্থীদের যা শেখার কথা তারা কি সেটি আদৌ শিখছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলছেন, ‘এর পেছনে কেবল রাজনৈতিক কারণ খুঁজলেই চলবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া কতটা হচ্ছে, শিক্ষকরা আসলে ক্লাসে পড়ান কিনা, এগুলোও দেখা দরকার।’

দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজনও পাস না করার কারণ কী? কেন তারা অকৃতকার্য হলো- জানতে চাইলে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন কুমিল্লার হোমনা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক তবারক উল্লাহ। তাঁর মতে; বারবার শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা এবং দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি এবং পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ও খাতা দেখার ক্ষেত্রে বাড়তি কড়াকড়ি আরোপের প্রভাব পড়েছে এবারের ফলাফলে। তিনি বলেন, এবার ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি অকৃতকার্য হওয়ার প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলের ওপর।

মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং এআই নির্ভর সংক্ষিপ্ত বা টোটকা লেখাপড়ার সুযোগ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সক্ষমতা ও মনোযোগে ঘাটতি- ফেল করার অন্যতম আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন মাগুরার বনশ্রী রবীন্দ্র স্মরণী কলেজের শিক্ষক আশিষ কুমার বিশ্বাস। তাঁর মতে; আগের মতো পাস করানোর জন্য গ্রেস মার্ক বন্ধ করে দেওয়ায়ও অনেক শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি।

এ নিয়ে কি বলছে সরকার। জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, ‘চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্য নম্বরই পেয়েছে। এখন থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা যেটুকু খাতায় লিখবে, তার ভিত্তিতেই নম্বর দেওয়া হবে। কাউকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেওয়া হবে না।’

ফল বিপর্যয়ের এমন একই ভাষ্য আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবিরেরও। তিনি বলছেন, ওভারমার্কিং করার জন্য কাউকে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। জোর করে বেশি পাসের হার দেখানোর বিষয়ে আগ্রহ ছিল না। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাস করল না, এটা তো কাঙ্ক্ষিত নয়। এই বিষয়টিতে আমরা একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি। তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, গলদ আছে, অবশ্যই গলদ আছে। সেই গলদের জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে।

বাস্তবতা হলো- এই গলদটাকে আমরা উপেক্ষা করে চলেছি বছরের পর বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান এ ব্যাপারে বলেন, ‘দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যা অনেক সময় শিক্ষা বান্ধব হয়েছে কখনো রাজনীতি বান্ধব। রাজনৈতিক ইচ্ছায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করার প্রবণতা আমরা দেখেছি যা শিক্ষার্থীদের নিজেদের যোগ্যতায় ভালো ফল করার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে। এতদিন যে ফলাফল দেখানো হয়েছে সেটি ছিল রাজনৈতিক। এবারের ফলাফল আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র অনেকাংশে তুলে ধরেছে।

পলিসিগত পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, ‘শুধু রেজাল্টই যথেষ্ট নয়, শিক্ষার্থীদের যা শেখা প্রয়োজন সেটি তারা শিখছে কিনা। যে অ্যাটিটিউড তাদের ডেভেলপ করার কথা সেটি হচ্ছে কিনা এগুলো দেখতে হবে। কেবল পাস করে সার্টিফিকেট অর্জনের এই শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

এইচএসসির ফল বিপর্যয়কে কীভাবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৯:২৯:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

এ বছর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১২ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। সারা দেশে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ যা গত বছরের তুলনায় ১৮.৯৫ শতাংশ কম।

অন্যদিকে এবার সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সেই হিসেবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন। ২০০৪ সালের ফলাফলের তুলনায় এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। এমন কি ২০২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজনও এবার পাস করতে পারেনি।

এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কেন উত্তীর্ণ হতে পারলো না কিংবা জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কেন কমলো তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর আগে ২০০৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে গড় পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০ বছর পর এবার তার চেয়েও কম পাস করলো।

এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, পরীক্ষার খাতায় শিক্ষার্থীরা য লিখেছে, সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে গড় রেজাল্টে। সব শিক্ষা বোর্ডের ফল বৃহস্পতিবার একযোগে প্রকাশ করেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির। এই ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন পুরুষ ও ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন নারী শিক্ষার্থী। সারা দেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৬৪.৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯.৪০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৪৮.৮৬ শতাংশ, যশোরে ৫০.২০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২.৫৭ শতাংশ, বরিশালে ৬২.৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১.৮৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭.৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১.৫৪ শতাংশ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৬১ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৬২.৫৭ শতাংশ।

গত ২০ বছর ধরে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৬০ শতাংশের ওপরে ছিল। সেই মানদণ্ডে এবারের ফলকে অনেকে ‘বিপর্যয়’ মনে করছেন। এই সময়ের মধ্যে পাসের হার ও জিপিএ-৫ সংখ্যা বৃদ্ধির যে ধারা দেখা গিয়েছিল কেন তাতে ছেদ পড়লো এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ তৎকালীন আওয়ামী সরকারের আমলে দিকে তীর ছুড়ে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে, গ্রেস মার্কিয়ের মাধ্যমে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ভালো ফলাফল দেখানো হতো।’ তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে- এখন কি সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে?

এ দুটো বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষাবিদরা যে বিষয়টি সামনে আনছেন সেটি হলো- শিক্ষার্থীদের যা শেখার কথা তারা কি সেটি আদৌ শিখছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলছেন, ‘এর পেছনে কেবল রাজনৈতিক কারণ খুঁজলেই চলবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া কতটা হচ্ছে, শিক্ষকরা আসলে ক্লাসে পড়ান কিনা, এগুলোও দেখা দরকার।’

দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজনও পাস না করার কারণ কী? কেন তারা অকৃতকার্য হলো- জানতে চাইলে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন কুমিল্লার হোমনা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক তবারক উল্লাহ। তাঁর মতে; বারবার শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা এবং দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি এবং পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ও খাতা দেখার ক্ষেত্রে বাড়তি কড়াকড়ি আরোপের প্রভাব পড়েছে এবারের ফলাফলে। তিনি বলেন, এবার ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি অকৃতকার্য হওয়ার প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলের ওপর।

মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং এআই নির্ভর সংক্ষিপ্ত বা টোটকা লেখাপড়ার সুযোগ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সক্ষমতা ও মনোযোগে ঘাটতি- ফেল করার অন্যতম আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন মাগুরার বনশ্রী রবীন্দ্র স্মরণী কলেজের শিক্ষক আশিষ কুমার বিশ্বাস। তাঁর মতে; আগের মতো পাস করানোর জন্য গ্রেস মার্ক বন্ধ করে দেওয়ায়ও অনেক শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি।

এ নিয়ে কি বলছে সরকার। জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, ‘চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্য নম্বরই পেয়েছে। এখন থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা যেটুকু খাতায় লিখবে, তার ভিত্তিতেই নম্বর দেওয়া হবে। কাউকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেওয়া হবে না।’

ফল বিপর্যয়ের এমন একই ভাষ্য আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবিরেরও। তিনি বলছেন, ওভারমার্কিং করার জন্য কাউকে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। জোর করে বেশি পাসের হার দেখানোর বিষয়ে আগ্রহ ছিল না। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাস করল না, এটা তো কাঙ্ক্ষিত নয়। এই বিষয়টিতে আমরা একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি। তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, গলদ আছে, অবশ্যই গলদ আছে। সেই গলদের জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে।

বাস্তবতা হলো- এই গলদটাকে আমরা উপেক্ষা করে চলেছি বছরের পর বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান এ ব্যাপারে বলেন, ‘দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যা অনেক সময় শিক্ষা বান্ধব হয়েছে কখনো রাজনীতি বান্ধব। রাজনৈতিক ইচ্ছায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করার প্রবণতা আমরা দেখেছি যা শিক্ষার্থীদের নিজেদের যোগ্যতায় ভালো ফল করার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে। এতদিন যে ফলাফল দেখানো হয়েছে সেটি ছিল রাজনৈতিক। এবারের ফলাফল আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র অনেকাংশে তুলে ধরেছে।

পলিসিগত পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, ‘শুধু রেজাল্টই যথেষ্ট নয়, শিক্ষার্থীদের যা শেখা প্রয়োজন সেটি তারা শিখছে কিনা। যে অ্যাটিটিউড তাদের ডেভেলপ করার কথা সেটি হচ্ছে কিনা এগুলো দেখতে হবে। কেবল পাস করে সার্টিফিকেট অর্জনের এই শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’