উপদেষ্টাদের অনেকে সেফ এক্সিট খুঁজছেন

- Update Time : ০৮:৫৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
- / ১২৭ Time View
‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছেন এবং তারা এখন নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’ (নিরাপদ প্রস্থান) নিয়ে ভাবছেন।’ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্য প্রচারের পর যেসব উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
এ ছাড়া বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘সেফ এক্সিট খুঁজতে উপদেষ্টাদের কষ্ট করতে হবে না। কারণ তাদের বেশিরভাগেরই দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছেন এবং তারা এখন নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে ভাবছেন। তার এমন মন্তব্যের জের ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে তার বক্তব্যের ভিডিও ও ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়েছে। নেটিজেনরা পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
“উপদেষ্টাদের অনেকে সেফ এক্সিট খুঁজছেন” বক্তব্যে তোলপাড়
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে প্রধান উপদেষ্টা চলে যাবেন এবং অনেক উপদেষ্টা বিদেশে চলে যাবেন। ফলে দেশ গভীর অনিশ্চয়তায় পড়বে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ আবার রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির পর তিনি আর থাকতে চান না। ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে না পৌঁছাতে পারে, তাহলে তিনি চলে যাবেন।’
এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘উপদেষ্টারা অনেকেই নিরাপদ প্রস্থানের পথ খুঁজছেন। আমার মনে হয়, তাদের খুব কষ্ট করতে হবে না। কারণ বেশিরভাগ উপদেষ্টার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। তারা স্বভাবতই দেশের বাইরে, বিশেষ করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ফিরে যেতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘সব তথ্য সাদা চোখে দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে বাংলাদেশ গভীর অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে ইন্ধন দিচ্ছেন, তাদের গাদ্দার উপদেষ্টা আখ্যায়িত করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে নাম প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। গতকাল সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক যুব ঐক্য আয়োজিত ‘গুণমানসম্পন্ন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ অনুরোধ করেন।
রাশেদ খান বলেন, ‘যেদিন এনজিও ঘরানার উপদেষ্টারা শপথ নিয়েছেন, সেদিন থেকেই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থতার দিকে গেছে। কিন্তু আমরা চাই না সেই আন্দোলন ব্যর্থ হোক। নির্বাচন বানচালের মাধ্যমে যদি অভ্যুত্থান ভেস্তে যায়, তার দায় নাহিদ ইসলামকেও নিতে হবে।’
নির্বাচনব্যবস্থার বিষয়ে রাশেদ খান বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় সংসদের নিম্নকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা কার্যকর নয়। এটি চালু হলে সংসদ সদস্যদের কেনাবেচার সংস্কৃতি তৈরি হবে।
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশোতে অংশ নিয়ে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতারণার অভিযোগ এনে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতাদের এবং যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাদের অনেককে বিশ্বাস করাটা আমাদের অবশ্যই ভুল হয়েছিল। আমাদের উচিত ছিল ছাত্রনেতৃত্বকেই শক্তিশালী করা, সরকারে গেলে সম্মিলিতভাবে যাওয়া।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘নাগরিক সমাজ বা রাজনৈতিক দলকে আমরা যে বিশ্বাসটা করেছিলাম, যে আস্থা রেখেছিলাম, সেই জায়গায় আসলে আমরা প্রতারিত হয়েছি।’
তিনি দাবি করেন, ‘অনেক উপদেষ্টা নিজেদের আখের গুছিয়েছেন অথবা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা (বিট্রে) করেছেন। যখন সময় আসবে, তখন আমরা এদের নামও উন্মুক্ত করব।’
তিনি মনে করেন, এই বিচ্যুতি হওয়ার কারণ উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর ভরসা করেননি। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন। তারা নিজেদের সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) নিয়ে ভাবছেন। এটি আমাদের অনেক পোহাতে হচ্ছে এবং পোহাতে হবে। কিন্তু তারা যদি এটা বিশ্বাস করতেন যে তাদের নিয়োগকর্তা ছিল গণঅভ্যুত্থানের শক্তি, রাজপথে নেমে জীবন দেওয়া ও আহত সাধারণ মানুষজন, তাহলে উপদেষ্টাদের এই বিচ্যুতি হতো না।’
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম অভ্যুত্থানের পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি পদত্যাগ করে এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন। তবে ছাত্র আন্দোলনের অন্য দুই প্রতিনিধি মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এখনো উপদেষ্টা হিসেবে বহাল আছেন।
উপদেষ্টার পদে যাওয়া ছাত্রনেতাদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা কেউ সরকারের উপদেষ্টা পদে যেতে চাননি। তাদের মূল দাবি ছিল জাতীয় সরকার গঠন করা।
তিনি যুক্তি দেন, রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়ে নাগরিক সরকার করলে ছাত্রদের কাঁধে এই দায়িত্ব আসত না। ‘যদি অভ্যুত্থানের শক্তি সরকারে না থাকত, তাহলে এ সরকার তিন মাসও টিকত না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এ সরকারকে উৎখাত করার, প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা চলমান ছিল প্রথম ছয় মাস। এখনো আছে কিছুটা। সময়ের প্রয়োজনে এ দায়িত্ব আমাদের নিতে হয়েছিল।’
সাবেক এই উপদেষ্টা আরও আক্ষেপ করেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন না করে জাতীয় সরকার গঠন করলে এ ধরনের আক্ষেপ তৈরি হতো না। তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘৫ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টে সেজদা দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা, ছাত্ররা নয়।’
গণঅভ্যুত্থানের পর সমন্বয়ক নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে বিপুল টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগগুলো বা এ ধরনের মিথ্যা ট্রায়াল আমাদের বিরুদ্ধে সব সময় চালানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্য রাজনৈতিক দলের ছাত্রীরা এসে কীভাবে দুর্নীতি করেছে, চাঁদাবাজি করেছে, সেই তথ্য প্রচার করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী নামে, সেই বিষয়টা তুলে ধরা উচিত। আমরা তো সেই মিডিয়ার সাপোর্টটা পাচ্ছি না বলে মনে করছি।’ নাহিদের সাফ জবাব, কে কত টাকার মালিক হয়েছেন, সবকিছুর অনুসন্ধান করা হোক।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নামে, আমাদের বিষয়ে ইনভেস্টিগেট করা হোক যে আমরা কত সম্পত্তির মালিক হয়েছি, কত টাকার মালিক হয়েছি আর এখন যে রাজনৈতিক দলের অন্য নেতাকর্মীরা রয়েছেন, তারা গত এক বছরে কত কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন চাঁদাবাজি, লুটপাট, প্রশাসনে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা জায়গায় কীভাবে তাদের নিজেদের লোক বসিয়েছেন, এটি তো কারও অজানা নেই। বাংলাদেশের এই গণঅভ্যুত্থানের পর কিন্তু প্রথম কয়েক মাস দুর্নীতি বন্ধ ছিল, এই দুর্নীতির চক্র আবার কীভাবে সরকারে জেঁকে বসল, এটি নিয়ে আপনারা ইনভেস্টিগেট করেন, দেখেন এটার সঙ্গে কারা জড়িত।’
নির্বাচিত সরকার এলে কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা হারিয়ে যাবেন অথবা নেতারা সেফ এক্সিটের পথ বেছে নেবেন কি না সেই প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এ লড়াই অনেক দীর্ঘ এবং অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে, এটা আমরা ভেবেই রাজপথে নেমেছি। এই নির্বাচন লক্ষ করে কিন্তু জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠিত হয়নি। জাতীয় নাগরিক পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতির আমল পরিবর্তনের স্বপ্ন এবং লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে। গত এক বছরে ছাত্রদের নানাভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।’
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়