উন্নয়ন বৈষম্যের গ্যাঁড়াকলে রংপুর: একনেক থেকে বাদ পড়লো উন্নয়ন প্রকল্প

- Update Time : ০৬:২৮:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১৯৮ Time View
উন্নয়নের ক্ষেত্রে বরাবরই বিমাতা সুলভ আচরণের শিকার হয়েছে রংপুর। সর্বশেষ জাতীয় বাজেটে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের জন্য এক টাকাও বরাদ্দ রাখেনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিদায়ী সরকার। এ নিয়ে রংপুর নগরবাসীর ক্ষোভের অন্ত ছিলো না। সেই ক্ষোভের অংশ হিসেবেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরের ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশের প্রথম শহিদ হলেন আবু সাঈদ। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শহিদ আবু সাঈদের রংপুর, উন্নয়ন বৈষম্যের গ্যাড়াকল থেকে যেন কোনভাবেই বের হতে পারছে না। সর্বশেষ এবারও অন্তর্র্বতী সরকারের প্রথম একনেক সভায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহ উন্নয়ন প্রকল্পটি স্থান পায়নি।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব জয়শ্রী রানী রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা প্রকল্পটি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু একটি চিঠির মাধ্যমে স্থগিত করা হয়েছে, সেটি আমাদের অবহিত করা হয়েছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন সুত্রে জানা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রথম একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই একনেক সভায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণসড়কসমূহ উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ১৫ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের এক চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি আপাতত বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন নেই। ফলে ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেকে রংপুরকে বাদ দিয়ে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
রসিকের প্রকৌশল শাখা সুত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৬ শত ৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ডিপিপি পাঠানো হয়। বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকার বারবার আশ্বাস দিয়েও প্রকল্পটি বিভিন্ন অজুহাতে একনেকে অনুমোদন না দেওয়ায় বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের দিকে আশায় বুক বেঁধেছিল নগরবাসী। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের চিঠি প্রাপ্তির পর হতাশায় ভুগছেন সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ নগরবাসী। জন গুরুত্বসম্পন্ন এই উন্নয়ন গুলো বাস্তবায়ন হলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সুবিধার ঘাটতি কমে যেত অনেকাংশেই। কিন্তু সেই আশা মুহূর্তেই ভেঙে যেন চুরমার হয়ে গেছে পরিকল্পনা কমিশনের এক চিঠিতেই।
সমাজকর্মী ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, রংপুর দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। সেই ধারাবাহিকতায় আবারো উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হলো। অথচ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করতে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বলেছিলেন এই রংপুর আর পিছিয়ে থাকবে না। দেশের মধ্যে এক নম্বর জেলা হবে। কিন্তু তাঁর সরকারের প্রথম একনেকের সভায় প্রকল্পটি স্থগিত করা হলো। আমরা অত্যন্ত হতাশ। সারাদেশের উন্নয়ন বাজেট সুষম বন্টন হলে এই সমস্যা আর হতো না বলে মন্তব্য করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের জেলা সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন জানান, সারাদেশের মধ্যে রংপুর সবসময় বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্য নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে ও অধিকার আদায়ে বলতে হবে, লিখতে হবে। এভাবে একটি অঞ্চল বারবার বৈষম্যের শিকার হয়ে আসবে আর মেনে নেয়া যায় না।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহবুবার রহমান মঞ্জু বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বৈষম্য আর বঞ্চনার শিকার রংপুর সিটি কর্পোরেশন। বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেছিলেন, আর বৈষম্যের শিকার হবে না শহিদ আবু সাঈদের রংপুর। বাংলাদেশের মধ্যে এক নম্বর জেলা হবে। সেই কথায় স্বপ্ন দেখেছিল রংপুরের মানুষ। অথচ এই সরকারের একনেকের প্রথম সভায় বৈষম্যের শিকার হতে হলো রংপুরকে। বাদ পরে গেলো উন্নয়ন প্রকল্প। এসময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, শহীদ আবু সাঈদের পবিত্র রক্তে অর্জিত নতুন স্বাধীনতায় যেন আর বৈষম্যের শিকার হতে না হয় সেই দাবি নগরবাসী সকলের।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আজমল হোসেন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে অফিসিয়ালী খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কিনা সে বিষয়ে চেষ্টা করবো।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়