ঢাকা ০৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উখিয়ায় ফের বন্য হাতির মৃত্যু: কারেন্টযুক্ত ফাঁদকে দায়ী করছে স্থানীয়রা

ইকবাল হোসাইন, উখিয়া প্রতিনিধি
  • Update Time : ০২:৫২:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৩ Time View

বন্য হাতির মৃত্যু

কক্সবাজারের উখিয়ায় মানুষের তৈরি বৈদ্যুতিক ফাঁদে আরেকটি বন্য হাতির মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গতকাল সোমবার গভীর রাতে পশ্চিম খয়রাতি রহমানিয়া পাড়া বিলের ভেতর পড়ে থাকা একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির মৃতদেহ প্রথমে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে তারা দ্রুত বন বিভাগকে বিষয়টি জানান।

খবর পেয়ে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান এবং দুছড়ি বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক রনি-র নেতৃত্বে বন কর্মকর্তারা রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। কর্মকর্তারা জানান, হাতিটির মৃত্যু প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক জালে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হাতি–মানুষ দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে হাতি–মানুষ সংঘাত ভয়াবহ আকার নিয়েছে। পাহাড়ে বসবাসকারী হাতির খাদ্য সংকট ও বাসস্থান হারানোর কারণে লোকালয়ে প্রবেশ বেড়ে গেছে। এতে ফসল নষ্ট, ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। এ কারণে অনেক কৃষক আত্মরক্ষার নাম করে ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলছেন—কারেন্টযুক্ত ফাঁদ শুধু বন্য হাতির জন্য নয়, আশপাশের অন্যান্য প্রাণী, জীববৈচিত্র্য এবং এমনকি মানুষের জন্যও মারাত্মক হুমকি।

কারেন্টের জালই মৃত্যুর কারণ — বন বিভাগ

দুছড়ি বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক রনি বলেন—“লোকজনকে আমরা নিয়মিত বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু হাতি লোকালয়ে নেমে ফসল নষ্ট করায় কিছু কৃষক ক্ষোভে ফসলি জমির চারপাশে কারেন্ট সংযুক্ত জাল দিয়ে ঘিরে রাখছে। এসব জালের সটেই হাতি মারা যাচ্ছে।”

“ফসল রক্ষা করতে গিয়ে বড় বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে” — স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক

পল্লী চিকিৎসক মো. ইউনুচ বলেন—“ধান, কলাগাছসহ বিভিন্ন ফসল বাঁচাতে অনেকেই চারদিকে কারেন্ট সংযোগ দিয়ে জাল পেতে রাখে। এসব জালের স্পর্শে পড়ে হাতির মৃত্যু ঘটছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।”

বন বিভাগের পরবর্তী ব্যবস্থা

বন বিভাগ মৃত হাতিটির ময়নাতদন্ত, আলামত সংগ্রহ ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের প্রতি সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপদ পদ্ধতিতে ফসল রক্ষার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন—হাতি–মানুষ দ্বন্দ্ব কমাতে যৌথ উদ্যোগ, হাতির চলাচলের করিডোর রক্ষা এবং কৃষকদের সচেতন করা ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

উখিয়ায় ফের বন্য হাতির মৃত্যু: কারেন্টযুক্ত ফাঁদকে দায়ী করছে স্থানীয়রা

ইকবাল হোসাইন, উখিয়া প্রতিনিধি
Update Time : ০২:৫২:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

কক্সবাজারের উখিয়ায় মানুষের তৈরি বৈদ্যুতিক ফাঁদে আরেকটি বন্য হাতির মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গতকাল সোমবার গভীর রাতে পশ্চিম খয়রাতি রহমানিয়া পাড়া বিলের ভেতর পড়ে থাকা একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির মৃতদেহ প্রথমে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে তারা দ্রুত বন বিভাগকে বিষয়টি জানান।

খবর পেয়ে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান এবং দুছড়ি বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক রনি-র নেতৃত্বে বন কর্মকর্তারা রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। কর্মকর্তারা জানান, হাতিটির মৃত্যু প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক জালে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হাতি–মানুষ দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে হাতি–মানুষ সংঘাত ভয়াবহ আকার নিয়েছে। পাহাড়ে বসবাসকারী হাতির খাদ্য সংকট ও বাসস্থান হারানোর কারণে লোকালয়ে প্রবেশ বেড়ে গেছে। এতে ফসল নষ্ট, ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। এ কারণে অনেক কৃষক আত্মরক্ষার নাম করে ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলছেন—কারেন্টযুক্ত ফাঁদ শুধু বন্য হাতির জন্য নয়, আশপাশের অন্যান্য প্রাণী, জীববৈচিত্র্য এবং এমনকি মানুষের জন্যও মারাত্মক হুমকি।

কারেন্টের জালই মৃত্যুর কারণ — বন বিভাগ

দুছড়ি বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক রনি বলেন—“লোকজনকে আমরা নিয়মিত বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু হাতি লোকালয়ে নেমে ফসল নষ্ট করায় কিছু কৃষক ক্ষোভে ফসলি জমির চারপাশে কারেন্ট সংযুক্ত জাল দিয়ে ঘিরে রাখছে। এসব জালের সটেই হাতি মারা যাচ্ছে।”

“ফসল রক্ষা করতে গিয়ে বড় বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে” — স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক

পল্লী চিকিৎসক মো. ইউনুচ বলেন—“ধান, কলাগাছসহ বিভিন্ন ফসল বাঁচাতে অনেকেই চারদিকে কারেন্ট সংযোগ দিয়ে জাল পেতে রাখে। এসব জালের স্পর্শে পড়ে হাতির মৃত্যু ঘটছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।”

বন বিভাগের পরবর্তী ব্যবস্থা

বন বিভাগ মৃত হাতিটির ময়নাতদন্ত, আলামত সংগ্রহ ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের প্রতি সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপদ পদ্ধতিতে ফসল রক্ষার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন—হাতি–মানুষ দ্বন্দ্ব কমাতে যৌথ উদ্যোগ, হাতির চলাচলের করিডোর রক্ষা এবং কৃষকদের সচেতন করা ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়।