ঢাকা ০২:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঈদ উৎসবে রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো মানুষের ঢল

Reporter Name
  • Update Time : ০৮:১১:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৩০৯ Time View

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর: ঈদের দিন সকাল থেকেই রংপুরে ছিল ভ্যাপসা গরম। তাপমাত্রা ছিল অসহনীয়। তবে ঈদ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে স্বস্তির বাতাস। শান্ত প্রকৃতিতে নেই রোদেলা আকাশের তেজ। তৃতীয় দিনে সহনীয় তাপমাত্রা। এমন নির্মল-স্নিগ্ধ পরিবেশে মেতেছে শিশু-কিশোররা। বাদ নেই তরুণ থেকে শুরু করে বয়স্করাও। জেলার দর্শনীয় স্থান, বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কগুলো লোকে লোকারণ্য। যেন ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে রঙিন হয়ে উঠছে ঈদ উৎসব।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) ঈদের তৃতীয় দিন সকাল থেকে রংপুরের দর্শনীয় স্থান, বিনোদন কেন্দ্র ও শিশু পার্কগুলো ঘুরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঢল দেখা গেছে। দু-একটিতে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও বাকি বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কে গুনতে হচ্ছে দর্শনীর বিনিময়।

ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সবার মুখে আনন্দের ছাপ। নিজেদের মতো করে ছুটে বেড়াচ্ছে। তাদের উল্লাসে প্রাণ ফিরেছে সবখানে। সঙ্গে আছেন অভিভাবকরা। সবমিলে অসহনীয় গরমের পর স্বস্তিময় আবহাওয়ায় ঈদ আনন্দের মাত্রা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুন।

দর্শনার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারির ভীতিকর পরিস্থিতিতে গত তিন বছর ঈদে দর্শনার্থীদের পদচারণায় রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো তেমনটা মুখরিত না থাকলেও, এবারের ঈদে নেই তেমন কোন বিধিনিষেধ। তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসবকে ঘিরে দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। সঙ্গে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের নতুন সাজসজ্জ্বা ও নতুন নতুন রাইডগুলো নজর কাড়ছে শিশু-কিশোরদের।

ঈদের তিন দিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুর নগরের নিসবেতগঞ্জ ঘাঘট নদী, টাউন হল চত্বর, কাউনিয়ার শতবর্ষী তিস্তা রেলওয়ে সেতু, গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু পয়েন্টজুড়ে ছিল মানুষের ঢল। এসব স্থানে যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়েছেন বিনোদনপ্রেমীরা।

তিস্তানদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়ার মহিপুর ঘাটে রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মানুষের পারাপারে নির্মিত গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু। এই সেতুর নিচে জেগে ওঠা পানিশুন্য বালুচর আর সবুজ খেতে ছিল দর্শনার্থীর আগানোনা। আর হাঁটু পানিতে ছুটে বেড়াচ্ছে নৌকা আর ছোট ছোট স্পিডবোট। নদীকেন্দ্রিক দর্শনীয় এসব স্থানে বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক গড়ে তোলা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে উত্তরের পর্যটনশিল্প বেশ সমৃদ্ধ হবে বলে জানান দর্শনার্থীরা।

এছাড়া রংপুর চিড়িয়াখানা বিনোদন উদ্যান, রংপুর শিশুপার্ক, তাজহাট জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর, সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক, প্রয়াস সেনাপার্ক, চিকলি ওয়াটার পার্ক ও রূপকথা থিম পার্কে টিকিটের জন্য দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। টিকিট কেটে প্রবেশ করতেও যেন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তবে আকর্ষণের মূল কেন্দ্র চিড়িয়াখানার বাঘের খাঁচা ছিল বাঘশুন্য।

একই চিত্র রংপুর মহানগর থেকে একটু দূরের খলেয়া গুঞ্জিপুরের ভিন্নজগত, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, বদরগঞ্জের মায়াভুবন, কাউনিয়ার তিস্তা পার্ক, পীরগাছা-সুন্দরগঞ্জের আলী বাবা থিম পার্কেও। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের মাঝে ঈদ উদযাপনের খোরাক যোগাচ্ছে এসব বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান।

রংপুর চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশের পর এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচায় হেঁটে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন পশু-পাখি দেখছেন। বড়রা তাদের শিশুসন্তানকে বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। বাঘের খাঁচা শূন্য থাকলেও ভিড় ছিল সিংহের খাঁচার সামনে। পশুর রাজাকে দেখে শিশুরাও বেশ খুশি। বানরের ভেংচি কাটা আর লাফালাফি দেখতে বানরের খাঁচার সামনেও ছিল দর্শনার্থীর ভিড়।  এছাড়া কুমির, ঘড়িয়াল, জলহস্তি, ঘোড়া, হনুমান, গাধা, ভাল্লুক, হরিণ, ময়ূর, উটপাখিসহ চিড়িয়াখানার সবগুলো খাঁচার সামনেই ছিল জটলা।

স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসা ফরহাদুজ্জামান ফারুক নওরোজ কে বলেন, অসহনীয় দাবদাহের কারণে ঈদের দিন বাহিরে ঘুরতে যাইনি। আজ নির্মল বাতাস বইছে, চারপাশ শান্ত স্নিগ্ধ একারণে বের হলাম। বউ বাচ্চাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরছি। কিন্তু টিকিট নেওয়া থেকে শুরু করে সবখানেই ভিড়। চিড়িয়াখানাতেও একই অবস্থা। এত বেশি মানুষ, কোথাও স্বস্তিতেও চলাফেরাও করা যাচ্ছে না।

চিড়িয়াখানায় রয়েছে আলাদা শিশুপার্ক। সেখানে টিকিট নিয়ে প্রবেশ করতে লম্বা লাইনে হাঁপিয়ে উঠছেন অনেকেই। পার্কের ভেতরে শিশু-কিশোররা দলবদ্ধভাবে ঘুরছিল। তাদের মধ্যে কথা হয় ফারহানা জামান ও আদিলা মল্লিকের সঙ্গে। প্রাথমিক বিদ্যালয়পড়ুয়া এই দুই শিশুর ভাষ্য, তারা ঈদের দিন সুরভি উদ্যান, চিকলি ওয়াটার পার্ক ঘুরেছে। আজ সবাই মিলে এসেছে চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্কে। তারা খুব আনন্দ করছে, কষ্ট হলেও বেশ মজা করছিল তারা। তবে শিশু পার্কে টিকিট কেটে ঢুকতে অনেক সময় লেগেছে।

তবে সবগুলো বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার সামনে এসেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে সবার। কারণ আকর্ষণের প্রাণকেন্দ্র বাঘের খাঁচাই খালি। দর্শনার্থীরা বলছেন, চিড়িয়াখানায় বাচ্চাদের মূল আকর্ষণ থাকে বাঘ। কিন্তু খাঁচায় বাঘ না থাকায় অনেকেই ফিরছেন মন খারাপ করে। শিশুরাও বাঘ দেখতে না পেয়ে মন খারাপ করছে। চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য বাড়ায় বাঘ। যত দ্রুত সম্ভব রংপুরের চিড়িয়াখানায় বাঘ নিয়ে আসা ও এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের দাবি তাদের।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে রংপুর বেতার কেন্দ্রের কোলঘেঁষে নির্মিত রংপুর সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক। এই পার্কের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াটার পার্কও। ঈদে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পার্কে যুক্ত করা হয়েছে নতুন নুতন রাইড। রংপুর শিশুপার্কের অন্যান্য রাইডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আকর্ষণীয় ভুতের ঘর সংসারসহ রোলার কোস্টার।

চিকলি বিলের বুকে স্পিডবোট চলছে দ্রুত বেগে এ পাশ থেকে ওপাশ। হই হুল্লোড়ে মেতে উঠছে সবাই। আর স্পিডবোটের ছুটে চলার বেগে বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা দিচ্ছে বিলের দুই কূলে। ছিটকে আসা জলরাশিতে মজা করছেন ছোট-বড় সববয়সী মানুষ। এই পার্কের বিপরীতে হনুমানতলা রোডে দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে দৃষ্টিনন্দন চিকলি ওয়াটার পার্ক।

চিকলি ওয়াটার পার্কে মিঠাপুকুর থেকে আসা সেলিম-মারুফা দম্পতির সাথে কথা হলে তারা জানান, এখানে আসার আগে তারা রংপুরে চিড়িয়াখানা ঘুরে এসেছে। ঈদের ছুটিতে সবাই একসঙ্গে ঘুরছে। সবখানে শিশু-কিশোররা বেশ আনন্দ করছে।

এদিকে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. আমবার আলী তালুকদার নওরোজ কে জানান, সরকারি বিধিনিষেধ না থাকায় চিড়িয়াখানাসহ রংপুরের সকল বিনোদন কেন্দ্র খোলা রয়েছে। শিশু-কিশোরাসহ সব বয়সী মানুষ এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে ঘুরতে বেরিয়েছে। বছরের অন্যান্য দিনের চেয়ে ঈদে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

ঈদকে ঘিরে বিনোদন কেন্দ্রগুলো প্রাণবন্ত ও মুখরিত রাখাসহ যেকোন অপ্রীতির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এসব বিনোদন কেন্দ্রে জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ নজরদারিও রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো.আসাদুজ্জামান।

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ঈদ উৎসবে রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো মানুষের ঢল

Update Time : ০৮:১১:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৩

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর: ঈদের দিন সকাল থেকেই রংপুরে ছিল ভ্যাপসা গরম। তাপমাত্রা ছিল অসহনীয়। তবে ঈদ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে স্বস্তির বাতাস। শান্ত প্রকৃতিতে নেই রোদেলা আকাশের তেজ। তৃতীয় দিনে সহনীয় তাপমাত্রা। এমন নির্মল-স্নিগ্ধ পরিবেশে মেতেছে শিশু-কিশোররা। বাদ নেই তরুণ থেকে শুরু করে বয়স্করাও। জেলার দর্শনীয় স্থান, বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কগুলো লোকে লোকারণ্য। যেন ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে রঙিন হয়ে উঠছে ঈদ উৎসব।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) ঈদের তৃতীয় দিন সকাল থেকে রংপুরের দর্শনীয় স্থান, বিনোদন কেন্দ্র ও শিশু পার্কগুলো ঘুরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঢল দেখা গেছে। দু-একটিতে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও বাকি বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কে গুনতে হচ্ছে দর্শনীর বিনিময়।

ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সবার মুখে আনন্দের ছাপ। নিজেদের মতো করে ছুটে বেড়াচ্ছে। তাদের উল্লাসে প্রাণ ফিরেছে সবখানে। সঙ্গে আছেন অভিভাবকরা। সবমিলে অসহনীয় গরমের পর স্বস্তিময় আবহাওয়ায় ঈদ আনন্দের মাত্রা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুন।

দর্শনার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারির ভীতিকর পরিস্থিতিতে গত তিন বছর ঈদে দর্শনার্থীদের পদচারণায় রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো তেমনটা মুখরিত না থাকলেও, এবারের ঈদে নেই তেমন কোন বিধিনিষেধ। তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসবকে ঘিরে দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। সঙ্গে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের নতুন সাজসজ্জ্বা ও নতুন নতুন রাইডগুলো নজর কাড়ছে শিশু-কিশোরদের।

ঈদের তিন দিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুর নগরের নিসবেতগঞ্জ ঘাঘট নদী, টাউন হল চত্বর, কাউনিয়ার শতবর্ষী তিস্তা রেলওয়ে সেতু, গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু পয়েন্টজুড়ে ছিল মানুষের ঢল। এসব স্থানে যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়েছেন বিনোদনপ্রেমীরা।

তিস্তানদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়ার মহিপুর ঘাটে রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মানুষের পারাপারে নির্মিত গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু। এই সেতুর নিচে জেগে ওঠা পানিশুন্য বালুচর আর সবুজ খেতে ছিল দর্শনার্থীর আগানোনা। আর হাঁটু পানিতে ছুটে বেড়াচ্ছে নৌকা আর ছোট ছোট স্পিডবোট। নদীকেন্দ্রিক দর্শনীয় এসব স্থানে বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক গড়ে তোলা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে উত্তরের পর্যটনশিল্প বেশ সমৃদ্ধ হবে বলে জানান দর্শনার্থীরা।

এছাড়া রংপুর চিড়িয়াখানা বিনোদন উদ্যান, রংপুর শিশুপার্ক, তাজহাট জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর, সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক, প্রয়াস সেনাপার্ক, চিকলি ওয়াটার পার্ক ও রূপকথা থিম পার্কে টিকিটের জন্য দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। টিকিট কেটে প্রবেশ করতেও যেন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তবে আকর্ষণের মূল কেন্দ্র চিড়িয়াখানার বাঘের খাঁচা ছিল বাঘশুন্য।

একই চিত্র রংপুর মহানগর থেকে একটু দূরের খলেয়া গুঞ্জিপুরের ভিন্নজগত, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, বদরগঞ্জের মায়াভুবন, কাউনিয়ার তিস্তা পার্ক, পীরগাছা-সুন্দরগঞ্জের আলী বাবা থিম পার্কেও। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের মাঝে ঈদ উদযাপনের খোরাক যোগাচ্ছে এসব বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান।

রংপুর চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশের পর এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচায় হেঁটে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন পশু-পাখি দেখছেন। বড়রা তাদের শিশুসন্তানকে বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। বাঘের খাঁচা শূন্য থাকলেও ভিড় ছিল সিংহের খাঁচার সামনে। পশুর রাজাকে দেখে শিশুরাও বেশ খুশি। বানরের ভেংচি কাটা আর লাফালাফি দেখতে বানরের খাঁচার সামনেও ছিল দর্শনার্থীর ভিড়।  এছাড়া কুমির, ঘড়িয়াল, জলহস্তি, ঘোড়া, হনুমান, গাধা, ভাল্লুক, হরিণ, ময়ূর, উটপাখিসহ চিড়িয়াখানার সবগুলো খাঁচার সামনেই ছিল জটলা।

স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসা ফরহাদুজ্জামান ফারুক নওরোজ কে বলেন, অসহনীয় দাবদাহের কারণে ঈদের দিন বাহিরে ঘুরতে যাইনি। আজ নির্মল বাতাস বইছে, চারপাশ শান্ত স্নিগ্ধ একারণে বের হলাম। বউ বাচ্চাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরছি। কিন্তু টিকিট নেওয়া থেকে শুরু করে সবখানেই ভিড়। চিড়িয়াখানাতেও একই অবস্থা। এত বেশি মানুষ, কোথাও স্বস্তিতেও চলাফেরাও করা যাচ্ছে না।

চিড়িয়াখানায় রয়েছে আলাদা শিশুপার্ক। সেখানে টিকিট নিয়ে প্রবেশ করতে লম্বা লাইনে হাঁপিয়ে উঠছেন অনেকেই। পার্কের ভেতরে শিশু-কিশোররা দলবদ্ধভাবে ঘুরছিল। তাদের মধ্যে কথা হয় ফারহানা জামান ও আদিলা মল্লিকের সঙ্গে। প্রাথমিক বিদ্যালয়পড়ুয়া এই দুই শিশুর ভাষ্য, তারা ঈদের দিন সুরভি উদ্যান, চিকলি ওয়াটার পার্ক ঘুরেছে। আজ সবাই মিলে এসেছে চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্কে। তারা খুব আনন্দ করছে, কষ্ট হলেও বেশ মজা করছিল তারা। তবে শিশু পার্কে টিকিট কেটে ঢুকতে অনেক সময় লেগেছে।

তবে সবগুলো বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার সামনে এসেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে সবার। কারণ আকর্ষণের প্রাণকেন্দ্র বাঘের খাঁচাই খালি। দর্শনার্থীরা বলছেন, চিড়িয়াখানায় বাচ্চাদের মূল আকর্ষণ থাকে বাঘ। কিন্তু খাঁচায় বাঘ না থাকায় অনেকেই ফিরছেন মন খারাপ করে। শিশুরাও বাঘ দেখতে না পেয়ে মন খারাপ করছে। চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য বাড়ায় বাঘ। যত দ্রুত সম্ভব রংপুরের চিড়িয়াখানায় বাঘ নিয়ে আসা ও এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের দাবি তাদের।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে রংপুর বেতার কেন্দ্রের কোলঘেঁষে নির্মিত রংপুর সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক। এই পার্কের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াটার পার্কও। ঈদে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পার্কে যুক্ত করা হয়েছে নতুন নুতন রাইড। রংপুর শিশুপার্কের অন্যান্য রাইডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আকর্ষণীয় ভুতের ঘর সংসারসহ রোলার কোস্টার।

চিকলি বিলের বুকে স্পিডবোট চলছে দ্রুত বেগে এ পাশ থেকে ওপাশ। হই হুল্লোড়ে মেতে উঠছে সবাই। আর স্পিডবোটের ছুটে চলার বেগে বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা দিচ্ছে বিলের দুই কূলে। ছিটকে আসা জলরাশিতে মজা করছেন ছোট-বড় সববয়সী মানুষ। এই পার্কের বিপরীতে হনুমানতলা রোডে দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে দৃষ্টিনন্দন চিকলি ওয়াটার পার্ক।

চিকলি ওয়াটার পার্কে মিঠাপুকুর থেকে আসা সেলিম-মারুফা দম্পতির সাথে কথা হলে তারা জানান, এখানে আসার আগে তারা রংপুরে চিড়িয়াখানা ঘুরে এসেছে। ঈদের ছুটিতে সবাই একসঙ্গে ঘুরছে। সবখানে শিশু-কিশোররা বেশ আনন্দ করছে।

এদিকে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. আমবার আলী তালুকদার নওরোজ কে জানান, সরকারি বিধিনিষেধ না থাকায় চিড়িয়াখানাসহ রংপুরের সকল বিনোদন কেন্দ্র খোলা রয়েছে। শিশু-কিশোরাসহ সব বয়সী মানুষ এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে ঘুরতে বেরিয়েছে। বছরের অন্যান্য দিনের চেয়ে ঈদে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

ঈদকে ঘিরে বিনোদন কেন্দ্রগুলো প্রাণবন্ত ও মুখরিত রাখাসহ যেকোন অপ্রীতির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এসব বিনোদন কেন্দ্রে জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ নজরদারিও রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো.আসাদুজ্জামান।