ঢাকা ১১:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
প্রতিহিংসার পরিবর্তে পরিকল্পনার রাজনীতি করতে হবে : তারেক রহমান শরীর ধীরে ধীরে ভারসাম্য হারাতে শুরু করেছে : অমিতাভ বচ্চন দুই কুতুবের কথা না শোনায় বিচারকদের করুণ দশা! যে কৌশলে ঘুমিয়ে পড়বেন মাত্র ২ মিনিটেই পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে কিম জং উনের নতুন হুমকি অল্পের জন্য রক্ষা পেল তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনের হাজারো যাত্রী পুতিন শান্তিচুক্তির পথে না হাঁটলে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি ম্যাক্রোঁর ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, পেছানোর সুযোগ নেই : আইন উপদেষ্টা ১৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে মাসে হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মাইলস্টোনের ৩ শিক্ষকের মানবতা-সাহসিকতা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা
ভারতীয় গরু-মহিষ চোরাচালানের মূল হোতার দম্ভোক্তি

১৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে মাসে হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং

মুনসুর আহম্মদ
  • Update Time : ০৯:১১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৬৪ Time View

রেজাউল করিম(বামে) ও ভাগনে সিতু (ডানে)।

ইসলামী ব্যাংকসহ প্রায় ১৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে মাসে হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং : ডাচ বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে গোপন বৈঠক

সারাদেশে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা গরু-মহিষের শতভাগ চালানের ৯০ ভাগই আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেজাউল করিমের মাধ্যমে। বেশির ভাগ গরু-মহিষ আসছে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা থেকে যেখানে সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নেই। ভারতীয় বিএসএফ এবং বাংলাদেশের বিজিবি ও অসাধু কতিপয় চক্রের সহযোগিতায় দেদারছে আসছে। জমা হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকার হাট-বাজারে।

আগে ঐসব হাট নিয়ন্ত্রণ করতো ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয় লোকজন। এখন একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাপক চাঁদাবাজী নিয়ে একসময় সিলেটের একটি অবৈধ গরু-মহিষের হাট নিয়ে বিজিবির সাথে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ঝগড়া হলে বিজিবি ঐ হাটটি গুড়িয়ে দেয়।

বর্তমানে সিলেটের জৈন্তাবাজার, হরিপুর বাজার, দরবস্ত বাজার, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর, কক্সবাজারের রামু, চকোরিয়ার ঈদগাঁও বাজারসহ সারাদেশের সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক গরু-মহিষ আসছে। ভারতীয় গরু-মহিষ আসে রেজাউলের মাধ্যমে। রেজাউলের লোকজন তা বেপারীদের হাতে তুলে দেয় বাকীতে। পরে বেপারীরা বিক্রয়লব্ধ অর্থ জমা দেয় রেজাউলের ব্যাংক একাউন্টে। সারাদেশ বিভিন্ন নামে তার ভিন্ন একাউন্টে জমা হয় ঐ অর্থ।

রেজাউল আইনের চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৬টি ব্যাংকে হিসাব খুলেছে বিভিন্ন নামে। মেসার্স আর কে এন্টারপ্রাইজ, মামা ভাগনে এগ্রো ফার্ম, মামা ভাগনে ট্রেডার্স, মামা ভাগনে এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন নামে একাউন্ট খুলে পরিচালনা করছেন রেজাউল নিজেই। অবশ্য হিসাব খোলার সময় প্রতিটি হিসেবে স্ত্রী মোসাম্মদ সাথী আখতারকে নমিনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মানি লন্ডারিং কাজে ব্যবহৃত একাউন্টগুলো বেশির ভাগ খুলেছে ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায়। দ্বিতীয় সারিতে আছে পূবালী ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকেও তিনি একাউন্ট খুলেছেন। যার একটি তালিকা হিসাব নম্বরসহ গতকাল দৈনিক নওরোজে ছাপা হয়েছে।

নিউজের সূত্র ধরে তদন্ত করলে গোয়েন্দা সংস্থা খুব সহজেই পেয়ে যাবে মানি লন্ডারিংয়ের মহাকেলেংকারীর হিসাব। ঐ সব একাউন্টে দৈনিক শত শত কোটি টাকার লেনদেন কোথা থেকে আসছে এবং কোথায় যায় সেই টাকা তদন্ত করলেই বেরিয়ে পড়বে আসল ঘটনা। তার লেনদেনে খুশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা। যার জন্য গোয়েন্দা নজরদারীর বাইরে আছে এসব একাউন্টের মালিক রেজাউল করিম।

আজ দুপুরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের হেমায়েতপুর (সাভার) শাখার ম্যানেজারের কক্ষে রেজাউলের গোপন বৈঠকের খবর দেন প্রত্যক্ষদর্শী নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্রাহক।

সাভারের হেমায়েতপুরের একতা হাউজিং আর্জেন্টপাড়ায় বিশাল ফ্ল্যাট বাড়ি করে সেখানেই থাকছেন আলোচ্য এই রেজাউল। তার স্থায়ী ঠিকানা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধুমিহায়াতপুর। ডাকঘর বামচন্দ্রপুরহাট। ভোটার আইডি নং-৫৫৪০১৭৩৩৩২, পিতা মফিজ উদ্দিন।

গত রোববার রাজশাহী সিটি হাট থেকে ভাগনে সিতুর মাধ্যমে গরু-মহিষ ব্যবসায়ী পিয়ারুলের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা, আরশাদের কাছ থেকে ২২ লক্ষ টাকা, হেলোনের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা, শরিফুলের কাছ থেকে ৬ লক্ষ ৫ হাজার টাকাসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি আদায় করে জমা হয় রেজাউলের একাউন্টে। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এতো টাকা আদায় হলো শুধুমাত্র ১টি হাট থেকে বাকী অন্যান্য এলাকায় রেজাউলের নিয়োজিত আরো ২৫ ভাগনের মাধ্যমে কি পরিমাণ টাকা উঠেছে তা বোধগম্য নয়। তবে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে পড়বে।

রেজাউলের সাথে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সে ভারত থেকে গবাদিপশু আনে বাকীতে আর পরিশোধ করে হুন্ডির মাধ্যমে ডলারে। স্থানীয় বাজার থেকে বিদেশী মুদ্রার দর নিয়ে তার কথোপকথনের একটি মোবাইল রেকর্ড আমাদের হস্তগত হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তার মোবাইল ফোন নম্বর হোয়াটস অ্যাপে কথা বললে এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করে বলেন, তিনি ৩/৪ বছর থেকে গরু-মহিষের ব্যবসা করছেন। তার বক্তব্য পত্রিকায় ছাপা হবে শুনে তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলেন, ‘লিখেন! আমি কম না। আমারও প্রশাসনে লোক আছে। লিখে কোন লাভ হবে না। উল্টো ক্ষতির মুখে পড়বেন।’ এই কথা বলে তিনি লাইন কেটে দেন।

এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন দৈনিক নওরোজের আগামী সংখ্যায়…।

Please Share This Post in Your Social Media

ভারতীয় গরু-মহিষ চোরাচালানের মূল হোতার দম্ভোক্তি

১৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে মাসে হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং

মুনসুর আহম্মদ
Update Time : ০৯:১১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

ইসলামী ব্যাংকসহ প্রায় ১৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে মাসে হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং : ডাচ বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে গোপন বৈঠক

সারাদেশে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা গরু-মহিষের শতভাগ চালানের ৯০ ভাগই আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেজাউল করিমের মাধ্যমে। বেশির ভাগ গরু-মহিষ আসছে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা থেকে যেখানে সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নেই। ভারতীয় বিএসএফ এবং বাংলাদেশের বিজিবি ও অসাধু কতিপয় চক্রের সহযোগিতায় দেদারছে আসছে। জমা হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকার হাট-বাজারে।

আগে ঐসব হাট নিয়ন্ত্রণ করতো ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয় লোকজন। এখন একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাপক চাঁদাবাজী নিয়ে একসময় সিলেটের একটি অবৈধ গরু-মহিষের হাট নিয়ে বিজিবির সাথে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ঝগড়া হলে বিজিবি ঐ হাটটি গুড়িয়ে দেয়।

বর্তমানে সিলেটের জৈন্তাবাজার, হরিপুর বাজার, দরবস্ত বাজার, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর, কক্সবাজারের রামু, চকোরিয়ার ঈদগাঁও বাজারসহ সারাদেশের সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক গরু-মহিষ আসছে। ভারতীয় গরু-মহিষ আসে রেজাউলের মাধ্যমে। রেজাউলের লোকজন তা বেপারীদের হাতে তুলে দেয় বাকীতে। পরে বেপারীরা বিক্রয়লব্ধ অর্থ জমা দেয় রেজাউলের ব্যাংক একাউন্টে। সারাদেশ বিভিন্ন নামে তার ভিন্ন একাউন্টে জমা হয় ঐ অর্থ।

রেজাউল আইনের চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৬টি ব্যাংকে হিসাব খুলেছে বিভিন্ন নামে। মেসার্স আর কে এন্টারপ্রাইজ, মামা ভাগনে এগ্রো ফার্ম, মামা ভাগনে ট্রেডার্স, মামা ভাগনে এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন নামে একাউন্ট খুলে পরিচালনা করছেন রেজাউল নিজেই। অবশ্য হিসাব খোলার সময় প্রতিটি হিসেবে স্ত্রী মোসাম্মদ সাথী আখতারকে নমিনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মানি লন্ডারিং কাজে ব্যবহৃত একাউন্টগুলো বেশির ভাগ খুলেছে ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায়। দ্বিতীয় সারিতে আছে পূবালী ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকেও তিনি একাউন্ট খুলেছেন। যার একটি তালিকা হিসাব নম্বরসহ গতকাল দৈনিক নওরোজে ছাপা হয়েছে।

নিউজের সূত্র ধরে তদন্ত করলে গোয়েন্দা সংস্থা খুব সহজেই পেয়ে যাবে মানি লন্ডারিংয়ের মহাকেলেংকারীর হিসাব। ঐ সব একাউন্টে দৈনিক শত শত কোটি টাকার লেনদেন কোথা থেকে আসছে এবং কোথায় যায় সেই টাকা তদন্ত করলেই বেরিয়ে পড়বে আসল ঘটনা। তার লেনদেনে খুশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা। যার জন্য গোয়েন্দা নজরদারীর বাইরে আছে এসব একাউন্টের মালিক রেজাউল করিম।

আজ দুপুরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের হেমায়েতপুর (সাভার) শাখার ম্যানেজারের কক্ষে রেজাউলের গোপন বৈঠকের খবর দেন প্রত্যক্ষদর্শী নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্রাহক।

সাভারের হেমায়েতপুরের একতা হাউজিং আর্জেন্টপাড়ায় বিশাল ফ্ল্যাট বাড়ি করে সেখানেই থাকছেন আলোচ্য এই রেজাউল। তার স্থায়ী ঠিকানা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধুমিহায়াতপুর। ডাকঘর বামচন্দ্রপুরহাট। ভোটার আইডি নং-৫৫৪০১৭৩৩৩২, পিতা মফিজ উদ্দিন।

গত রোববার রাজশাহী সিটি হাট থেকে ভাগনে সিতুর মাধ্যমে গরু-মহিষ ব্যবসায়ী পিয়ারুলের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা, আরশাদের কাছ থেকে ২২ লক্ষ টাকা, হেলোনের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা, শরিফুলের কাছ থেকে ৬ লক্ষ ৫ হাজার টাকাসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি আদায় করে জমা হয় রেজাউলের একাউন্টে। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এতো টাকা আদায় হলো শুধুমাত্র ১টি হাট থেকে বাকী অন্যান্য এলাকায় রেজাউলের নিয়োজিত আরো ২৫ ভাগনের মাধ্যমে কি পরিমাণ টাকা উঠেছে তা বোধগম্য নয়। তবে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে পড়বে।

রেজাউলের সাথে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সে ভারত থেকে গবাদিপশু আনে বাকীতে আর পরিশোধ করে হুন্ডির মাধ্যমে ডলারে। স্থানীয় বাজার থেকে বিদেশী মুদ্রার দর নিয়ে তার কথোপকথনের একটি মোবাইল রেকর্ড আমাদের হস্তগত হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তার মোবাইল ফোন নম্বর হোয়াটস অ্যাপে কথা বললে এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করে বলেন, তিনি ৩/৪ বছর থেকে গরু-মহিষের ব্যবসা করছেন। তার বক্তব্য পত্রিকায় ছাপা হবে শুনে তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলেন, ‘লিখেন! আমি কম না। আমারও প্রশাসনে লোক আছে। লিখে কোন লাভ হবে না। উল্টো ক্ষতির মুখে পড়বেন।’ এই কথা বলে তিনি লাইন কেটে দেন।

এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন দৈনিক নওরোজের আগামী সংখ্যায়…।