ঢাকা ০২:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ত্রাণ পাহারায় থাকা ৬ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ১০:০২:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
  • / ১৭ Time View

সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করার অপেক্ষায় রয়েছে ত্রাণের ট্রাক। ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণবাহী ট্রাক পাহারায় থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ছয় ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতরা সবাই একটি নিরাপত্তা দলের সদস্য ছিলেন, যারা সীমিত পরিসরে আসা ত্রাণসামগ্রী লুটপাট থেকে রক্ষা করতে নিয়োজিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) ইসরায়েলের সেনারা জানায়, কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে ১০৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক, যাতে ছিল ময়দা, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি খাদ্যসামগ্রী। তবে বাস্তবে সেই ত্রাণ মানুষের কাছে পৌঁছানো এখনো বেশ কঠিন হয়ে আছে।

হামাস বলছে, ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করাই যেখানে বিশাল চ্যালেঞ্জ, সেখানে নিরাপত্তাকর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

ফিলিস্তিনে ত্রাণ বিতরণে নিযুক্ত সংস্থাগুলোর জোট জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সোমবার থেকে ইসরায়েল অবরোধ কিছুটা শিথিল করে। এরপর থেকে মোট ১১৯টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে লুটপাটের কারণে এসব ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা যাচ্ছে না। কিছু লুটপাটকারীর হাতে অস্ত্র থাকায় পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে।

সংস্থাগুলোর দাবি, লুটপাটকারীরা শিশু ও অনাহারে থাকা পরিবারগুলোর জন্য পাঠানো খাদ্যসামগ্রী ছিনিয়ে নিচ্ছে। তারা ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের টার্গেট করায় ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে গাজার ভেতরে ৭৫টি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল দাবি করছে, তারা এখন পর্যন্ত ৩০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে ত্রাণ সংস্থাগুলোর অভিযোগ, বহু ট্রাক কেরেম শালোম সীমান্তেই আটকে আছে এবং ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তারা ইসরায়েলের ত্রাণ অনুমতিকে আন্তর্জাতিক চাপ এড়ানোর প্রতারণামূলক কৌশল বলেও আখ্যা দিয়েছে।

মার্চের শুরুতে হামাসের বিরুদ্ধে ‘ত্রাণ আত্মসাতের’ অভিযোগ এনে গাজায় অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বরং তাদের দাবি, বহু যোদ্ধা জীবন দিয়েছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সূচনা ঘটে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। ওইদিন ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় বন্দি করে নেওয়া হয় বলে দাবি করে তেলআবিব। এর জবাবে ইসরায়েল শুরু করে একতরফা সামরিক অভিযান। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৬০০।

ত্রাণ সংস্থাগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, গাজার বিপুল জনগোষ্ঠী এখন খাদ্য, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বহু শিশুর শরীরে দেখা যাচ্ছে চরম অপুষ্টির লক্ষণ।

এই প্রেক্ষাপটে ত্রাণ পরিবহনে নিযুক্ত কর্মীদের ওপর হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়ছে। সহায়তা পৌঁছাতে অবরুদ্ধ গাজায় একটি ‘নিরাপদ ও কার্যকর মানবিক করিডর’ গঠনের দাবিও ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ত্রাণ পাহারায় থাকা ৬ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ১০:০২:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণবাহী ট্রাক পাহারায় থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ছয় ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতরা সবাই একটি নিরাপত্তা দলের সদস্য ছিলেন, যারা সীমিত পরিসরে আসা ত্রাণসামগ্রী লুটপাট থেকে রক্ষা করতে নিয়োজিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) ইসরায়েলের সেনারা জানায়, কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে ১০৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক, যাতে ছিল ময়দা, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি খাদ্যসামগ্রী। তবে বাস্তবে সেই ত্রাণ মানুষের কাছে পৌঁছানো এখনো বেশ কঠিন হয়ে আছে।

হামাস বলছে, ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করাই যেখানে বিশাল চ্যালেঞ্জ, সেখানে নিরাপত্তাকর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

ফিলিস্তিনে ত্রাণ বিতরণে নিযুক্ত সংস্থাগুলোর জোট জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সোমবার থেকে ইসরায়েল অবরোধ কিছুটা শিথিল করে। এরপর থেকে মোট ১১৯টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে লুটপাটের কারণে এসব ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা যাচ্ছে না। কিছু লুটপাটকারীর হাতে অস্ত্র থাকায় পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে।

সংস্থাগুলোর দাবি, লুটপাটকারীরা শিশু ও অনাহারে থাকা পরিবারগুলোর জন্য পাঠানো খাদ্যসামগ্রী ছিনিয়ে নিচ্ছে। তারা ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের টার্গেট করায় ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে গাজার ভেতরে ৭৫টি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল দাবি করছে, তারা এখন পর্যন্ত ৩০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে ত্রাণ সংস্থাগুলোর অভিযোগ, বহু ট্রাক কেরেম শালোম সীমান্তেই আটকে আছে এবং ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তারা ইসরায়েলের ত্রাণ অনুমতিকে আন্তর্জাতিক চাপ এড়ানোর প্রতারণামূলক কৌশল বলেও আখ্যা দিয়েছে।

মার্চের শুরুতে হামাসের বিরুদ্ধে ‘ত্রাণ আত্মসাতের’ অভিযোগ এনে গাজায় অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বরং তাদের দাবি, বহু যোদ্ধা জীবন দিয়েছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সূচনা ঘটে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। ওইদিন ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় বন্দি করে নেওয়া হয় বলে দাবি করে তেলআবিব। এর জবাবে ইসরায়েল শুরু করে একতরফা সামরিক অভিযান। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৬০০।

ত্রাণ সংস্থাগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, গাজার বিপুল জনগোষ্ঠী এখন খাদ্য, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বহু শিশুর শরীরে দেখা যাচ্ছে চরম অপুষ্টির লক্ষণ।

এই প্রেক্ষাপটে ত্রাণ পরিবহনে নিযুক্ত কর্মীদের ওপর হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়ছে। সহায়তা পৌঁছাতে অবরুদ্ধ গাজায় একটি ‘নিরাপদ ও কার্যকর মানবিক করিডর’ গঠনের দাবিও ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।