ইসরায়েলকে কড়া হুঁশিয়ারি দিল আরব আমিরাত
- Update Time : ০৪:৩৪:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৩২৫ Time View
ফিলিস্তিন নিয়ে এবার ইসরায়েলকে কড়া বার্তা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
দেশটি সতর্ক করে বলেছে, পশ্চিমতীর দখলের যেকোনো পদক্ষেপ ইসরায়েল ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করাবে এবং আব্রাহাম চুক্তির মূল চেতনা ধ্বংস করবে।

মূলত ওই চুক্তির মাধ্যমেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছিল। এদিকে আমিরাতের এ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক লানা নুসাইবেহ বলেন, এমন পদক্ষেপ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেবে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমিরাতের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে।
তবে ইসরায়েলি সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। মূলত ইসরায়েলের চরম-উগ্রডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিমতীরের চার-পঞ্চমাংশ দখলের প্রস্তাব প্রকাশ করার পরই আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে এই মন্তব্য করা হয়।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে এখন প্রায় সাত লাখ ইহুদি বসবাস করছে। একই এলাকায় বসবাস করছে প্রায় ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বসতি অবৈধ।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমেই আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তবে শর্ত ছিল, ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা স্থগিত রাখবে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পরিকল্পনা স্থগিত করার কথা বললেও জানিয়ে দিয়েছিলেন, এটি এখনো ‘টেবিলে’ রয়েছে।
নেতানিয়াহুর বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম তীর দখলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ইসরায়েল অভ্যন্তরে দখল পরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
নেতানিয়াহু অবশ্য স্পষ্ট করে বলেছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা’। অন্যদিকে আমিরাত আগেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
লানা নুসাইবেহ বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই আব্রাহাম চুক্তিকে ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষা পূরণের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেছি। পশ্চিম তীর দখল আমাদের কাছে রেড লাইন। এটি শুধু চুক্তির চেতনা ধ্বংস করবে না, বরং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি আন্তর্জাতিক ঐকমত্যও ভেঙে দেবে।’
অন্যদিকে জেরুজালেমে সংবাদ সম্মেলনে বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, ‘এখন সময় এসেছে দখলের। দেশ ভাগ করে মাঝখানে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গড়ার ধারণা একেবারে বাতিল করতে হবে।’
তিনি একটি মানচিত্র প্রদর্শন করেন, যেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বসতি প্রশাসনের প্রস্তাব অনুযায়ী পশ্চিম তীরের প্রায় ৮২ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব বিস্তারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাকি ১৮ শতাংশ এলাকা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে ছয়টি ফিলিস্তিনি শহরের আশপাশে— জেনিন, তুলকারেম, নাবলুস, রামাল্লাহ, জেরিহো ও হেবরন। এ পরিকল্পনায় বেথলেহেমসহ বহু ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রাম বাদ পড়েছে।
ইসরায়েল ১৯৮০ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশ এখনো সেটি স্বীকৃতি দেয়নি। স্মোট্রিচ দাবি করেন, ফিলিস্তিনিরা আপাতত আগের মতোই জীবনযাপন চালিয়ে যাবে, তবে ভবিষ্যতে বিকল্প আঞ্চলিক বেসামরিক প্রশাসনের অধীনে তা পরিচালিত হতে পারে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এটিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নের ওপর সরাসরি হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ইতোমধ্যে একধরনের বর্ণবাদী ব্যবস্থা চালু করেছে। যদিও ইসরায়েলি সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এর আগে গত মাসে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের একটি বড় পরিকল্পনা অনুমোদন করলে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনাটি কার্যকর হলে পশ্চিম তীর কার্যত পূর্ব জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়






































































































































































































