ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ালে আন্দোলন অন্যভাবে রূপ নেবে : সালাহউদ্দিন

- Update Time : ১১:০২:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
- / ১৫ Time View
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আজ-কালকের মধ্যে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ালে যে আন্দোলন চলছে, তা অন্যভাবে রূপ নেবে।’
সোমবার (১৯ মে) বিকেলে সিলেট নগরের বালুচরে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সিলেট বিভাগে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট) জি কে গউছের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রাসেদুজ্জামান মিল্লাত। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী ও এম এ মালেক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ঢাকার রাজপথ, নগর ভবন ঘেরাও করে রেখেছে আন্দোলনকারীরা। আলটিমেটাম দিয়েছে স্থানীয় সরকার
উপদেষ্টাকে—আদালতের রায় অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটির দায়িত্ব দেওয়ার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু তার মানে এই নয় আপনারা যা মনে চায় তাই করবেন আর মেনে নেব।
আমি আহ্বান করছি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে, পারলে আজকে রাতের মধ্যে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করুন। ঢাকার এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরো বৃহত্তর আন্দোলন হতে পারে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশে অফিশিয়ালি ১৮ কোটি জনগণ বলা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ১৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির কি এতই আকাল পড়েছে যে আওয়ামী লীগ থেকে সদস্য আমদানি করতে হবে?’
তিনি বলে, ‘যাদের রক্তে গণতন্ত্র নেই, যারা এই দেশে ফ্যাসিবাদকে লালন করেছে তারা জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগের ডিএনএ-তে গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই দলটি জন্মলগ্ন থেকে গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না। সাংবিধানিকভাবে তারা বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। ফ্যাসিবাদ কায়েম করে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করে দিয়েছে।
তারা ইতিহাসের জগন্যতম গণহত্যাকারী। তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে।’
এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘জাতিসংঘ যাদের বিরুদ্ধে ১৪০০ মানুষ হত্যা ও ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করার রিপোর্ট দিয়েছে অথচ তাদের মধ্যে একটুও অনুশোচনা নেই বা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। উল্টো তারা গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যায়িত করছে। তারা কিভাবে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে?’
বিএনপি এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের পাহারাদার উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিএনপি থাকলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে। বিএনপি দুর্বল হলে বাংলাদেশ দুর্বল হবে। বিএনপির জন্ম না হলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হতো না, বিএনপি সুসংগঠিত না থাকলে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতো না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু হতো না। এই দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত হতো না।’
তিনি দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শ সম্পর্কে জানাতে হবে, তারেক রহমানের ৩১ দফা তুলে ধরতে হবে। যেই মানুষ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, যিনি নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দেবেন তিনিই জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হতে পারবে।’
এ সময় তিনি ফ্যাসিবাদের আদর্শ লালনকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যাতে বিএনপির সদস্য হতে পারে সেদিকে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যারা দেশের জনগণকে হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, গুম, অপহরণ করেছে তাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ যেন কোনো দিন আর স্বৈরশাসকের বা ফ্যাসিবাদের উৎপাদন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন তিনি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন। নেতৃত্ব বাছাই তৃণমূল থেকে গুরুত্ব দিতে হবে। দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকা উচিত, তবে সেটা যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়। এই বিষয়ে সমন্বয় কমিটিগুলোকে খেয়াল রাখা উচিত।’
অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা ও মহানগর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ সিলেট বিভাগের সকলা উপজেলা, পৌর এবং সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।