ঢাকা ০৪:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানের বিরুদ্ধে পুনরায় পরমাণু নিষেধাজ্ঞা আরোপে জাতিসংঘে ভোট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০১:৩৩:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১০৫ Time View

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সক্রিয় করায় দেশটির ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপের বিষয়ে ভোট দেবে। তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন বন্ধ করার লক্ষ্যে যৌথ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনার স্বাক্ষরকারী ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি অভিযোগ করেছে যে ইরান ২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।

জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রস্তাব পাস করতে প্রয়োজনীয় নয়টি ভোট না থাকায় বিদ্যমান অবস্থা বজায় রাখা সম্ভব হবে না। এর ফলে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বৃহস্পতিবার ইসরাইলি টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চলতি মাসের শেষ নাগাদ ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে বলে তিনি আশা করছেন।

ম্যাক্রোঁ বলেন, ইরানিদের কাছ থেকে যে সাম্প্রতিক বার্তা আমরা পেয়েছি তা ইতিবাচক নয়।

ইউরোপের এই তিন দেশ আগস্টের মাঝামাঝি জাতিসংঘে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ করে যে ইরান একাধিক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। যার মধ্যে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ৪০ গুণ বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করাও রয়েছে।

রাশিয়া ও চীন নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে। তারা ১৫ সদস্যের পরিষদ থেকে ৯ ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে তা প্রায় অসম্ভব।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক রিচার্ড গোয়ান বলেন, ‘আলজেরিয়া ও পাকিস্তান হয়তো রাশিয়া ও চীনের পক্ষ নেবে। তবে অন্য সদস্যরা বিরোধিতা করবে বা বিরত থাকবে। ফলে ইউরোপীয় দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রকে ভেটো ব্যবহার করতে হবে না।

ভোটের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আগামী সপ্তাহেই নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে। তবে জাতিসংঘের বার্ষিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে আসা ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানকে ঘিরে শেষ মুহূর্তে আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে তা থেকে সরে যাওয়া এবং ইরানের উপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে ২০১৫ সালের কষ্টার্জিত চুক্তিটি ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে।

পশ্চিমা শক্তি ও ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে তেহরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে, যা ইরান অস্বীকার করে আসছে।

মার্কিন প্রত্যাহারের পর থেকেই ইরান ধাপে ধাপে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করতে থাকে। জুন মাসে ইরান-ইসরাইলের ১২ দিনের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে এবং এর পরই তেহরান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সাথে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। জুন মাসে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধের পর থেকে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে।

ট্রাম্প তার পূর্ববর্তী মেয়াদে ২০২০ সালে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য তথাকথিত ‘স্ন্যাপব্যাক ধারা’ চালু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুই বছর আগে তার দেশ একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে তা ব্যর্থ হয়।

যদিও ইউরোপীয় শক্তিগুলো বছরের পর বছর ধরে আলোচনার মাধ্যমে ২০১৫ সালের চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বারবার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং বলেছে যে এই ধারাটি চালু করার জন্য তাদের আইনি ভিত্তি রয়েছে।

ইরান হুমকি দিয়েছে যে যদি স্ন্যাপব্যাক শুরু হয় তবে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে আসবে।

Please Share This Post in Your Social Media

ইরানের বিরুদ্ধে পুনরায় পরমাণু নিষেধাজ্ঞা আরোপে জাতিসংঘে ভোট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ০১:৩৩:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সক্রিয় করায় দেশটির ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপের বিষয়ে ভোট দেবে। তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন বন্ধ করার লক্ষ্যে যৌথ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনার স্বাক্ষরকারী ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি অভিযোগ করেছে যে ইরান ২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।

জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রস্তাব পাস করতে প্রয়োজনীয় নয়টি ভোট না থাকায় বিদ্যমান অবস্থা বজায় রাখা সম্ভব হবে না। এর ফলে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বৃহস্পতিবার ইসরাইলি টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চলতি মাসের শেষ নাগাদ ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে বলে তিনি আশা করছেন।

ম্যাক্রোঁ বলেন, ইরানিদের কাছ থেকে যে সাম্প্রতিক বার্তা আমরা পেয়েছি তা ইতিবাচক নয়।

ইউরোপের এই তিন দেশ আগস্টের মাঝামাঝি জাতিসংঘে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ করে যে ইরান একাধিক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। যার মধ্যে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ৪০ গুণ বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করাও রয়েছে।

রাশিয়া ও চীন নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে। তারা ১৫ সদস্যের পরিষদ থেকে ৯ ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে তা প্রায় অসম্ভব।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক রিচার্ড গোয়ান বলেন, ‘আলজেরিয়া ও পাকিস্তান হয়তো রাশিয়া ও চীনের পক্ষ নেবে। তবে অন্য সদস্যরা বিরোধিতা করবে বা বিরত থাকবে। ফলে ইউরোপীয় দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রকে ভেটো ব্যবহার করতে হবে না।

ভোটের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আগামী সপ্তাহেই নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে। তবে জাতিসংঘের বার্ষিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে আসা ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানকে ঘিরে শেষ মুহূর্তে আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে তা থেকে সরে যাওয়া এবং ইরানের উপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে ২০১৫ সালের কষ্টার্জিত চুক্তিটি ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে।

পশ্চিমা শক্তি ও ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে তেহরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে, যা ইরান অস্বীকার করে আসছে।

মার্কিন প্রত্যাহারের পর থেকেই ইরান ধাপে ধাপে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করতে থাকে। জুন মাসে ইরান-ইসরাইলের ১২ দিনের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে এবং এর পরই তেহরান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সাথে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। জুন মাসে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধের পর থেকে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে।

ট্রাম্প তার পূর্ববর্তী মেয়াদে ২০২০ সালে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য তথাকথিত ‘স্ন্যাপব্যাক ধারা’ চালু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুই বছর আগে তার দেশ একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে তা ব্যর্থ হয়।

যদিও ইউরোপীয় শক্তিগুলো বছরের পর বছর ধরে আলোচনার মাধ্যমে ২০১৫ সালের চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বারবার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং বলেছে যে এই ধারাটি চালু করার জন্য তাদের আইনি ভিত্তি রয়েছে।

ইরান হুমকি দিয়েছে যে যদি স্ন্যাপব্যাক শুরু হয় তবে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে আসবে।