ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে সবুজ সংকেত দিল পেন্টাগন
- Update Time : ১২:১৯:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৫৮ Time View
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন ইউক্রেনকে দীর্ঘ-পাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে হোয়াইট হাউসকে সবুজ সংকেত দিয়েছে। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করলে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব মজুতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও জানিয়েছে পেন্টাগন।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের এ সবুজ সংকেতের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে কিনা সে ব্যাপারে চূড়ান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে। তিন মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরে এক হাজার মাইলের বেশি পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রের দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে অবস্থিত জ্বালানি ও জ্বালানি-সম্পর্কিত স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে আঘাত হানা সম্ভব। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে গত অক্টোবর মাসে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চান না বলে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য যে জিনিসগুলো প্রয়োজন, সেগুলো আমরা কাউকে দিতে চাই না।’
এ মাসের শুরুতেই পেন্টাগনের জয়েন্ট স্টাফ হোয়াইট হাউসকে এ মূল্যায়নের বিষয়ে অবহিত করে। তার পরপরই ট্রাম্প ও জেলেনস্কির ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পেন্টাগনের সবুজ সংকেতের পর ইউরোপে ইউক্রেনের মিত্ররাও আশাবাদী হয়ে উঠছে। দুই ইউরোপীয় কর্মকর্তার মতে, এখন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ না করার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অজুহাত দেখানোর মতো তেমন আর কিছু নেই।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কয়েক দিন আগে ট্রাম্প নিজেও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘অনেক টমাহক’ আছে, যা ইউক্রেনকে দেওয়া ‘সম্ভব’। কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যেই আচমকা অবস্থান বদলে ফেলেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সময় উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই টমাহক প্রয়োজন। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি জেলেনস্কিকে জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষেপণাস্ত্র দেবে না- অন্তত এই মুহূর্তে নয়।
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগের দিনই ট্রাম্প টেলিফোনে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুতিন ট্রাম্পকে বলেন— টমাহক ছোড়া হলে তা রাশিয়ার বড় শহর মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে আঘাত হানতে পারে। এতে যুদ্ধক্ষেত্রে বড় প্রভাব না পড়লেও যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, এসব ক্ষেপণাস্ত্র শুধু রুশ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যবহার করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রও এখন ইউক্রেনকে রুশ জ্বালানি স্থাপনাগুলোর অবস্থান ও দুর্বলতা শনাক্তে গোয়েন্দা সহায়তা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এই সহায়তায় ইউক্রেনের ড্রোন বাহিনী রাশিয়ার ভেতরে গভীর হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে উফার বাশনেফট তেল শোধনাগারে সাম্প্রতিক হামলাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে কিয়েভ।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, জেলেনস্কির সফরে আলোচনার মূল বিষয়ও টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ। ট্রাম্প সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ওয়াশিংটন হয়তো ইউক্রেনকে এই অস্ত্র দিতে পারে। এটি ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে দূরপাল্লার অস্ত্র হবে, যা দিয়ে মস্কোতেও হামলা চালানো সম্ভব। তবে পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্পের নরম মনোভাব ইউক্রেনের তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে আলাপে ইউক্রেনকে টমাহক দেওয়ার বিষয়টি তুলেছিলেন। কিন্তু পুতিন এতে খুশি হননি। ট্রাম্প পরে বলেন, ‘আমাদেরও এই ক্ষেপণাস্ত্র দরকার, তাই এখনই কিছু বলা কঠিন।’ গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে পৌঁছান। সেখানে তিনি বলেন, ‘টমাহকের কথা শুনেই মস্কো দ্রুত সংলাপে ফিরতে চায়।’
এখন ইউক্রেইনকে টমাহক দিতে যুক্তরাষ্ট্রের মজুত শূন্য হওয়া নিয়ে পেন্টাগনের আর আশঙ্কা নেই ঠিকই। তবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেইনের সেনাদের প্রশিক্ষণ কীভাবে দেওয়া হবে সেটি নিয়েই মূলত চিন্তা আছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। সম্প্রতি শান্তি আলোচনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে পুতিনের অনীহায় ট্রাম্প এতটাই হতাশ হয়েছেন, তিনি গত সপ্তাহে রুশ তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করার জন্য পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে যে বৈঠক হওয়ার কথা, তা আপাতত বাতিল করেছেন।
এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, চলতি বছরের শেষের মধ্যে দূরপাল্লার সক্ষমতা বাড়ানোর আশা করছে ইউক্রেন, যাতে দেশের অনুকূলে ‘ন্যায্য শর্তে’ যুদ্ধ শেষ করা যায়। তিনি লিখেছেন, ‘বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা এবং আমাদের সুনির্দিষ্ট আঘাত প্রায়ই একসঙ্গে মিলে এই যুদ্ধটি ইউক্রেনের অনুকূলে শেষ করার দিকে যাচ্ছে। বছরের শেষ নাগাদ দূরপাল্লার হামলার সব লক্ষ্য সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা দরকার, যার মধ্যে রয়েছে আমাদের দূরপাল্লার সক্ষমতার সম্প্রসারণও।’
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়



































































































