ঢাকা ০৬:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা বিএনপি সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চায়: তারেক রহমান চাঁদাবাজির মামলায় একাত্তর টিভির সাবেক প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু গ্রেপ্তার সাগর-রুনি হত্যা, ১২০ বার পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টাকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে ইউকেএম রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে সংস্কার অসম্ভব: আমীর খসরু ‘সচিবালয়ে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’ ‘বিচার বিভাগের প্রতিষ্ঠানগত স্বাধীনতা একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয়’ অনিশ্চয়তায় কুবির দ্বিতীয় সমাবর্তন সাংবাদিক তুহিন হত্যা: গ্রেপ্তার ৭ আসামি দুই দিনের রিমান্ডে

‘আ. লীগ সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে গেছে, আয়নাঘর তার একটা নমুনা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৫:০৯:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১১৫ Time View

শান্তিতে নোবেলজয়ী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আইয়ামে জাহেলিয়াত বলে একটা কথা আছে, গত সরকার (আওয়ামী লীগ সরকার) আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে গেছে সর্বক্ষেত্রে, এটা (আয়নাঘর) তার একটা নমুনা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত যৌথবাহিনীর বন্দিশালা পরিদর্শন করছেন। এ সময়ে তার সঙ্গে স্থানীয় ও বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য ও ভুক্তভোগীরাও সাথে ছিলেন।

আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। গোপন বন্দিশালাগুলো আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনারা সবাই সঙ্গে ছিলেন, কাজেই আমার নতুন করে কিছু বলতে হবে না। এটার বর্ণনা যদি বলতে হয়, তাহলে বলব এটা বীভৎস দৃশ্য। নৃশংস অবস্থা, অতীতে এখানে যেসব অবস্থা হয়েছে। যতটা শুনি অবিশ্বাস্য মনে হয়। এটা কি আমাদেরই জগৎ, আমাদেরই সমাজ? যারা এর (গুম) শিকার হয়েছে, তারা আমাদের সঙ্গে আছেন, তাদের মুখ থেকে শুনলাম কী হয়েছে তাদের সঙ্গে, কোনেও ব্যাখ্যা নেই এর। কোনও ব্যাখ্যা থাকলে মানুষ বুঝে এর কোনও কারণ ছিল। বিনা কারণে মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ রকম টর্চার সেল বাংলাদেশজুড়ে আছে, আজকে সেটা শুনলাম। আমার ধারণা ছিল, আয়নাঘর বলতে কয়েকটি আছে এখানে। এখন শুনতেছি এই আয়নাঘরের বিভিন্ন ভার্সন দেশজুড়ে আছে। কেউ বলছে ৭০০, কেউ বলছে ৮০০, এটির সংখ্যাও নিরুপন করা যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এক সপ্তাহের মাথায় তারা ঘুরে দেখলেন গোপন বন্দিশালা। আর প্রকাশ্যে এলো ছবি।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমার জানামতে ভুক্তভোগীদের সংখ্যা ১৭০০ এর বেশি। অজানা কত তা তো আমরা জানি না। কেউ কেউ বলে যে এটা ৩ হাজারেরও বেশি হতে পারে। এই যে মানুষ উধাও হয়ে গেলো, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো, কেউ বলতে পারছে না, সে কোথাও। তার (ভুক্তভোগী) মেয়ে আজ আপনাদের সামনেই ছিল। সে বলছে আমার মাকে কোথায় নিয়ে গেছে, আজ নয় বছর হলো। নয় বছর ধরে আমরা খোঁজ পাইনি। সে নিজেও এখানে (আয়নাঘরে) ছিল। মায়ের সঙ্গে ছিল। তাকে রেখে মাকে নিয়ে চলে গেছে। এই দৃশ্য করুণ দৃশ্য।

‘যারা এসব কাজ করেছে, তারা আমাদেরই ভাই, আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়’— উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তারাই এসব করেছে। আমরা যদি এই সমাজকে এর থেকে বের করে আনতে না পারি, তাহলে তো এ সমাজ টিকে থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সবারই অপরাধ, এটি (গুমের মতো ঘটনা) হতে দিয়েছি আমরা। আজকে আমরা মুক্ত হলাম। মুক্ত বাংলাদেশে আমরা যেন আবার নতুন সমাজ গড়তে পারি। এটার যে নমুনা, সাক্ষী, ডকুমেন্টেশন, গুম কমিশনের রিপোর্টের মধ্যে থাকবে। এবং এটি পাঠ্য হিসেবে অবশ্যই পড়তে হবে। আর যারা করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। তা না হলে এ জাতি নিষ্কৃতি পাবে না।

সবশেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা করেছে তাদের জন্য আমরা কেন ভুক্তভোগী হতে যাব? তাদের বিচার করব, ভবিষ্যতে বলবে যে, উচিত বিচার হয়েছে। তখন আমরা এটি থেকে মুক্তি পাব। সবার কাছে আমাদের আবেদন, এই বিচারটি যেন আমরা করে ফেলতে পারি। আমরা যেসব এভিডেন্স দেখলাম, সেগুলো সিলগালা করে দেয়া হবে, যাতে কেউ এগুলো বিনষ্ট করতে না পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

‘আ. লীগ সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে গেছে, আয়নাঘর তার একটা নমুনা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৫:০৯:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শান্তিতে নোবেলজয়ী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আইয়ামে জাহেলিয়াত বলে একটা কথা আছে, গত সরকার (আওয়ামী লীগ সরকার) আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে গেছে সর্বক্ষেত্রে, এটা (আয়নাঘর) তার একটা নমুনা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত যৌথবাহিনীর বন্দিশালা পরিদর্শন করছেন। এ সময়ে তার সঙ্গে স্থানীয় ও বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য ও ভুক্তভোগীরাও সাথে ছিলেন।

আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। গোপন বন্দিশালাগুলো আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনারা সবাই সঙ্গে ছিলেন, কাজেই আমার নতুন করে কিছু বলতে হবে না। এটার বর্ণনা যদি বলতে হয়, তাহলে বলব এটা বীভৎস দৃশ্য। নৃশংস অবস্থা, অতীতে এখানে যেসব অবস্থা হয়েছে। যতটা শুনি অবিশ্বাস্য মনে হয়। এটা কি আমাদেরই জগৎ, আমাদেরই সমাজ? যারা এর (গুম) শিকার হয়েছে, তারা আমাদের সঙ্গে আছেন, তাদের মুখ থেকে শুনলাম কী হয়েছে তাদের সঙ্গে, কোনেও ব্যাখ্যা নেই এর। কোনও ব্যাখ্যা থাকলে মানুষ বুঝে এর কোনও কারণ ছিল। বিনা কারণে মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ রকম টর্চার সেল বাংলাদেশজুড়ে আছে, আজকে সেটা শুনলাম। আমার ধারণা ছিল, আয়নাঘর বলতে কয়েকটি আছে এখানে। এখন শুনতেছি এই আয়নাঘরের বিভিন্ন ভার্সন দেশজুড়ে আছে। কেউ বলছে ৭০০, কেউ বলছে ৮০০, এটির সংখ্যাও নিরুপন করা যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এক সপ্তাহের মাথায় তারা ঘুরে দেখলেন গোপন বন্দিশালা। আর প্রকাশ্যে এলো ছবি।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমার জানামতে ভুক্তভোগীদের সংখ্যা ১৭০০ এর বেশি। অজানা কত তা তো আমরা জানি না। কেউ কেউ বলে যে এটা ৩ হাজারেরও বেশি হতে পারে। এই যে মানুষ উধাও হয়ে গেলো, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো, কেউ বলতে পারছে না, সে কোথাও। তার (ভুক্তভোগী) মেয়ে আজ আপনাদের সামনেই ছিল। সে বলছে আমার মাকে কোথায় নিয়ে গেছে, আজ নয় বছর হলো। নয় বছর ধরে আমরা খোঁজ পাইনি। সে নিজেও এখানে (আয়নাঘরে) ছিল। মায়ের সঙ্গে ছিল। তাকে রেখে মাকে নিয়ে চলে গেছে। এই দৃশ্য করুণ দৃশ্য।

‘যারা এসব কাজ করেছে, তারা আমাদেরই ভাই, আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়’— উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তারাই এসব করেছে। আমরা যদি এই সমাজকে এর থেকে বের করে আনতে না পারি, তাহলে তো এ সমাজ টিকে থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সবারই অপরাধ, এটি (গুমের মতো ঘটনা) হতে দিয়েছি আমরা। আজকে আমরা মুক্ত হলাম। মুক্ত বাংলাদেশে আমরা যেন আবার নতুন সমাজ গড়তে পারি। এটার যে নমুনা, সাক্ষী, ডকুমেন্টেশন, গুম কমিশনের রিপোর্টের মধ্যে থাকবে। এবং এটি পাঠ্য হিসেবে অবশ্যই পড়তে হবে। আর যারা করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। তা না হলে এ জাতি নিষ্কৃতি পাবে না।

সবশেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা করেছে তাদের জন্য আমরা কেন ভুক্তভোগী হতে যাব? তাদের বিচার করব, ভবিষ্যতে বলবে যে, উচিত বিচার হয়েছে। তখন আমরা এটি থেকে মুক্তি পাব। সবার কাছে আমাদের আবেদন, এই বিচারটি যেন আমরা করে ফেলতে পারি। আমরা যেসব এভিডেন্স দেখলাম, সেগুলো সিলগালা করে দেয়া হবে, যাতে কেউ এগুলো বিনষ্ট করতে না পারে।