ঢাকা ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ থেকে রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে : এনসিপি গাজা যাওয়ার পথে ত্রাণবাহী জাহাজে ড্রোন হামলা দিনাজপুরের বেদানা লিচু এবার জিআই পণ্যের তালিকায় খালেদা জিয়া সোমবার সকালে ঢাকায় পৌঁছাবেন: মির্জা ফখরুল টঙ্গীতে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ‘নারকাটা’ মাসুদ গ্রেপ্তার পত্রিকা বিক্রেতা হত্যা মামলায় র‌্যাবের জালে ৪ জন গ্রেফতার জেলি পুশ করা ৫ পিকআপ চিংড়ি মাছ জব্দ, ৫ ব্যবসায়ীকে জরিমানা হত্যাচেষ্টা মামলায় শাওন-জায়েদ খানসহ ২০১ জন আসামি
দার্শনিক ফরহাদ মজহার

আমরা বিকেন্দ্রীকরণ শাসনব্যবস্থা চাই যেখানে রাষ্ট্রকে, সরকারকে জবাবদিহিতা করাতে পারবো

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব‌্যুরো
  • Update Time : ০২:৫৩:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫
  • / ৩২ Time View

রাজনীতিচিন্তক ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার বলেছেন, আমি মনে করি ৫ আগস্টে তরুণরা আমাদের নতুন বাংলাদেশ দান করেছেন। যতটুকু তারা করতে পেরেছে। যদি তাদের কোন ব্যর্থতা হয়ে থাকে তবে সেটা আমাদের সকলের ব্যর্থতা।

বৃহস্পতিবার ( ১ মে) বিকেলে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ভাববৈঠকির উদ্যোগে ‘গণঅভ্যূত্থান, রাষ্ট্রগঠন ও আমাদের দায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন,৫ আগস্টে একটা বড় ঘটনা ঘটেছে। আমি আজ যে কথাগুলো বলতে পারছি। ৫ আগস্ট হয়েছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আসুন আমরা সামস্টিক একটা রাজনৈতিক ধারা, সামস্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়ন কিভাবে করা যায় তার জন্য কৌশল আবিস্কার করি। অবশ্যই সেটা আমরা করতে পারবো। আমাদেরকে ঠেকাতে পারে এমন কোন শক্তি পৃথিবীতে আছে বলে আমি মনে করি না।

তিনি আরো বলেন, আমরা একটা বিকেন্দ্রীভূত বাংলাদেশ চাই। যেখানে সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকবে। যেমন রংপুরবাসীর যা প্রয়োজন। তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিবে। একটা কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে। একটা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার থাকবে। ঢাকাকেন্দ্রিক অল্প কিছু লোক শাসন করবে আর লুণ্ঠন করবে, এটা আমরা চলতে দিবো না। উত্তরবঙ্গ থেকে যা যাবে সেটা এখানেই ফিরে আসতে হবে। গুলশান বনানীতে যেতে পারবে না। বাইরে গিয়ে সেকেন্ড হোম বানাবেন সেটা হবে না।

চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা এমন একটা বিকেন্দ্রীকরণে শাসনব্যবস্থা চাই। যেখানে আমরা রাষ্ট্রকে, সরকারকে জবাবদিহিতা করাতে পারবো। এবং জবাবদিহিতার জন্য প্রত্যেকটা প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি আমাদের হাতে থাকবে। এভাবে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো।

এই দার্শনিক বলেন, রুহানিয়াত একটি শক্তিশালী বিষয়। এজন্য আমাকে জামায়াত বা হেফাজত মনে করবেন না। জনগণ সামস্টিকভাবে যে চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তার নিজের জীবনটা বিসর্জন দিবে বা শাহাদাত বরণ করে রাজি থাকে তাহলে তাকে বলে রুহানিয়াত । তার মনের যে ইচ্ছা সামস্টিক মঙ্গলের জন্য। যে অভিপ্রায়টা ধারণ করে যেটা সে মনে করেছে। তার সেই অভিপ্রায় জীব ও জীবনের তুলনায় অনেক উর্ধে চলে গেছে। অন্যকিছু তার কাছে তুচ্ছ এটা হলো রুহানিয়াত।

ফরহাদ মজহার বলেন, কালমার্কস যখন শ্রেণির আলোচনা করেছেন। তখন তিনি বলেছিলেন রাজনৈতিক কর্তাশক্তি আকারে বিপ্লবের আকারে শ্রমিক শক্তি ভূমিকা পালন করবে। ইতিহাস কিন্তু এটার পক্ষে সায় দেয়নি। শ্রমিকরা বিপ্লবের বড় শক্তি কিন্তু একক নয়। তারা বড়জোড় ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারে। বিপ্লবের জন্য দরকার পেশাদার বিপ্লবী। পেশাদার বিপ্লবী তারা যারা সামস্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য তাদের জীবন বিসর্জন দিবে।

তিনি আরো বলেন বলেন, ধর্মের বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলা যাবে না। ধর্মকে যদি আমরা ক্রেডিট করতে পারি। তাহলে ধর্মের সার্বজনীন পদ্ধতি তুলে আনতে পারবো। আর তুলে আনার পদ্ধতি হলো রুহানিয়াত। রুহানিয়াত যদি থাকে সমাজে তাহলে সামস্টিক চেতনার বুদ্ধিভিত্তিক সাংস্কৃতি আমরা তৈরি করতে পারবো। আপনার মধ্যে যে আমি বাস করছে এখন। তিনি যখন সায় দেয় তখন আমি মাথা নাড়ছি। শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুতির আমির সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন হয় তখন।

ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের ভাব দর্শন ও চিন্তাভাবনার মধ্যে অপূর্ব খনি ঢুকেছে। এগুলো খনন করে আনাটা জুলাই অভ্যুত্থানের পরে সব থেকে বড় কাজ। এটা খুড়তে হবে। এটা বুঝতে হবে। তখন আমরা বুঝতে পারবো। আমরা সাধারণেরা কী করবো। সেজন্য আমাদের রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সর্বত্রই আমাদের গভীর পর্যালোচনা দৃষ্টিভঙ্গি এবং হিম্মত অর্জন করতে হবে।

তরুণদের পাশে সবাইকে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের জুলাই বিপ্লবের পরে প্রকলেমশন লাগবে। ডক্টর ইউনুস প্রকলেমেশন না দিলে আমরা নিজেরাই প্রকলেমেশন দিবো। নতুন বাংলাদেশ গড়বো। জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তাহলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে। তরুণদেরকে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে কবি ও রাজনীতিক চিনু কবির, লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, ভাববৈঠকির সংগঠক মোহাম্মদ রোমেল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রায়হান কবীর, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইলিয়াস প্রামাণিক, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কনক রহমান।

আরও পড়ুনঃ আবু সাঈদের জীবন দান দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দার্শনিক ঘটনা: ফরহাদ মজহার

 

Please Share This Post in Your Social Media

দার্শনিক ফরহাদ মজহার

আমরা বিকেন্দ্রীকরণ শাসনব্যবস্থা চাই যেখানে রাষ্ট্রকে, সরকারকে জবাবদিহিতা করাতে পারবো

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব‌্যুরো
Update Time : ০২:৫৩:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

রাজনীতিচিন্তক ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার বলেছেন, আমি মনে করি ৫ আগস্টে তরুণরা আমাদের নতুন বাংলাদেশ দান করেছেন। যতটুকু তারা করতে পেরেছে। যদি তাদের কোন ব্যর্থতা হয়ে থাকে তবে সেটা আমাদের সকলের ব্যর্থতা।

বৃহস্পতিবার ( ১ মে) বিকেলে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ভাববৈঠকির উদ্যোগে ‘গণঅভ্যূত্থান, রাষ্ট্রগঠন ও আমাদের দায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন,৫ আগস্টে একটা বড় ঘটনা ঘটেছে। আমি আজ যে কথাগুলো বলতে পারছি। ৫ আগস্ট হয়েছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আসুন আমরা সামস্টিক একটা রাজনৈতিক ধারা, সামস্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়ন কিভাবে করা যায় তার জন্য কৌশল আবিস্কার করি। অবশ্যই সেটা আমরা করতে পারবো। আমাদেরকে ঠেকাতে পারে এমন কোন শক্তি পৃথিবীতে আছে বলে আমি মনে করি না।

তিনি আরো বলেন, আমরা একটা বিকেন্দ্রীভূত বাংলাদেশ চাই। যেখানে সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকবে। যেমন রংপুরবাসীর যা প্রয়োজন। তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিবে। একটা কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে। একটা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার থাকবে। ঢাকাকেন্দ্রিক অল্প কিছু লোক শাসন করবে আর লুণ্ঠন করবে, এটা আমরা চলতে দিবো না। উত্তরবঙ্গ থেকে যা যাবে সেটা এখানেই ফিরে আসতে হবে। গুলশান বনানীতে যেতে পারবে না। বাইরে গিয়ে সেকেন্ড হোম বানাবেন সেটা হবে না।

চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা এমন একটা বিকেন্দ্রীকরণে শাসনব্যবস্থা চাই। যেখানে আমরা রাষ্ট্রকে, সরকারকে জবাবদিহিতা করাতে পারবো। এবং জবাবদিহিতার জন্য প্রত্যেকটা প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি আমাদের হাতে থাকবে। এভাবে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো।

এই দার্শনিক বলেন, রুহানিয়াত একটি শক্তিশালী বিষয়। এজন্য আমাকে জামায়াত বা হেফাজত মনে করবেন না। জনগণ সামস্টিকভাবে যে চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তার নিজের জীবনটা বিসর্জন দিবে বা শাহাদাত বরণ করে রাজি থাকে তাহলে তাকে বলে রুহানিয়াত । তার মনের যে ইচ্ছা সামস্টিক মঙ্গলের জন্য। যে অভিপ্রায়টা ধারণ করে যেটা সে মনে করেছে। তার সেই অভিপ্রায় জীব ও জীবনের তুলনায় অনেক উর্ধে চলে গেছে। অন্যকিছু তার কাছে তুচ্ছ এটা হলো রুহানিয়াত।

ফরহাদ মজহার বলেন, কালমার্কস যখন শ্রেণির আলোচনা করেছেন। তখন তিনি বলেছিলেন রাজনৈতিক কর্তাশক্তি আকারে বিপ্লবের আকারে শ্রমিক শক্তি ভূমিকা পালন করবে। ইতিহাস কিন্তু এটার পক্ষে সায় দেয়নি। শ্রমিকরা বিপ্লবের বড় শক্তি কিন্তু একক নয়। তারা বড়জোড় ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারে। বিপ্লবের জন্য দরকার পেশাদার বিপ্লবী। পেশাদার বিপ্লবী তারা যারা সামস্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য তাদের জীবন বিসর্জন দিবে।

তিনি আরো বলেন বলেন, ধর্মের বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলা যাবে না। ধর্মকে যদি আমরা ক্রেডিট করতে পারি। তাহলে ধর্মের সার্বজনীন পদ্ধতি তুলে আনতে পারবো। আর তুলে আনার পদ্ধতি হলো রুহানিয়াত। রুহানিয়াত যদি থাকে সমাজে তাহলে সামস্টিক চেতনার বুদ্ধিভিত্তিক সাংস্কৃতি আমরা তৈরি করতে পারবো। আপনার মধ্যে যে আমি বাস করছে এখন। তিনি যখন সায় দেয় তখন আমি মাথা নাড়ছি। শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুতির আমির সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন হয় তখন।

ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের ভাব দর্শন ও চিন্তাভাবনার মধ্যে অপূর্ব খনি ঢুকেছে। এগুলো খনন করে আনাটা জুলাই অভ্যুত্থানের পরে সব থেকে বড় কাজ। এটা খুড়তে হবে। এটা বুঝতে হবে। তখন আমরা বুঝতে পারবো। আমরা সাধারণেরা কী করবো। সেজন্য আমাদের রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সর্বত্রই আমাদের গভীর পর্যালোচনা দৃষ্টিভঙ্গি এবং হিম্মত অর্জন করতে হবে।

তরুণদের পাশে সবাইকে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের জুলাই বিপ্লবের পরে প্রকলেমশন লাগবে। ডক্টর ইউনুস প্রকলেমেশন না দিলে আমরা নিজেরাই প্রকলেমেশন দিবো। নতুন বাংলাদেশ গড়বো। জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তাহলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে। তরুণদেরকে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে কবি ও রাজনীতিক চিনু কবির, লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, ভাববৈঠকির সংগঠক মোহাম্মদ রোমেল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রায়হান কবীর, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইলিয়াস প্রামাণিক, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কনক রহমান।

আরও পড়ুনঃ আবু সাঈদের জীবন দান দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দার্শনিক ঘটনা: ফরহাদ মজহার