আমতলী আদালতে বিচারক শূন্যতায় বাড়ছে মামলার জট

- Update Time : ০২:২৫:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৪০ Time View
বরগুনার আমতলী উপজেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রায় পাঁচ মাস ধরে কোনো বিচারক নেই। এতে বাড়ছে মামলার জট এবং ব্যাহত হচ্ছে বিচারাধীন প্রায় ২ হাজার ৭০০ মামলার নিয়মিত কার্যক্রম। সপ্তাহে দুই দিন বরগুনা থেকে একজন বিচারক গিয়ে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সেটাও এখন বন্ধ। এমন অবস্থায় আদালতে দ্রুত একজন বিচারক পদায়নের দাবি জানিয়েছেন বিচারপ্রার্থীরা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার আমতলী এবং তালতলী উপজেলার ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হয় আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আমতলী এবং তালতলী থানায় গ্রেফতার আসামিদেরও এই আদালতে হাজির করা হয়। বর্তমানে আদালতটিতে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মামলা বিচারাধীন। সবশেষ ১২ সেপ্টেম্বর এ আদালতে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
সরেজমিনে আদালত ঘুরে দেখা যায়, গত প্রায় ৫ মাস ধরে আদালতের একমাত্র বিচারকের পদটি শূন্য থাকায় তালাবদ্ধ রয়েছে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কক্ষ ও বিচারকের খাস কামরাসহ আদালত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কক্ষ। এছাড়াও আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম না থাকায় খোলা রয়েছে আদালতের হাজতখানা। অন্যদিকে মামলার জন্য দূরদূরান্ত থেকে আদালতে এসে বিচারক না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। কোনো মামলাতেই হচ্ছে না সাক্ষ্যগ্রহণ বা রিমান্ড শুনানি। পুলিশের হাতে গ্রেফতার আসামিদের আদালতে হাজির করতে নিয়ে যেতে হচ্ছে বরগুনায়। এতে বেড়েছে মামলার জট ও দীর্ঘ সূত্রিতা। আর ভোগান্তিতে পড়ছেন আদালতের মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই উপজেলার অন্তত ১৫ হাজার মানুষ।
আদালতে হাজিরা দিতে আসা ইউনুস মুন্সী নামে এক দিনমজুর বলেন, আদালতে বিচারক না থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। হাজিরা দিতে এসে দেখি বিচারক নেই। আমার এখানে আসতে-যেতে ১০০০ টাকা খরচ হয়। আবার যেদিন এখানে আসি সেদিন বাইরের কাজও করতে পারি না। এতে যেমন আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি তেমনি মানসিকভাবেও।
মো. মাসুম জোমাদ্দার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এখানে বিচারক নেই, তাই অনেক হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে। যদিও দুই এক সময় বিচারক আসেন তাও বরগুনায় কোর্ট শেষ করে তারপর আসেন। এমনিতেই মামলার ভোগান্তি, তার ওপর আবার আদালতের এই ভোগান্তি। আবার বরগুনা যদি যাওয়া লাগে তাহলে অর্থনৈতিক ভোগান্তিতেও পড়তে হয়।
এ বিষয়ে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআরও (এএসআই) এএসএম মুছা বলেন, গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতের বিচারক মো. আরিফুর রহমান ঢাকায় বদলি হন। এরপর থেকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম শরিয়ত উল্লাহ ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাকিবুল হাসান সপ্তাহে দুইদিন বা তিনদিন আদালত পরিচালনা করতেন। কিছুদিন ধরে আমাদের বরগুনায় গিয়ে কোর্ট করতে হচ্ছে। এতে মামলার কার্যক্রমে বেশ বিড়ম্বনা হচ্ছে। ধার্য তারিখের নথিগুলো আমরা নিয়মিত উপস্থাপন করতে পারি না। এছাড়া রিমান্ড শুনানি থাকলে জেল থেকে আসামি নিয়ে আসতেও কষ্ট হয়। আদালতের বিচারিক ও দাপ্তরিক কাজের জন্য একজন বিচারক থাকা খুব জরুরি।
বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম জানান, গত পাঁচ মাস ধরে আমতলী আদালতে নিয়মিত বিচারক নেই। মামলার জট বাড়ছে, মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। সপ্তাহে বরগুনা থেকে একজন বিচারক গিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করলেও জরুরি কোনো মামলা করতে হলে তাদের বরগুনায় আসতে হয়। যত দ্রুত সম্ভব আমতলী চৌকি আদালতে একজন হাকিম একান্ত প্রয়োজন। আমি এ বিষয়ে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা ও দায়রা জজ বাহাদুরের সঙ্গে আলাপ করেছি। আশা করছি অতি দ্রুতই এখানে একজন বিচারক আমরা পাবো।
এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. নুরুল আমিন বলেন, আমতলী ও তালতলী উপজেলার একমাত্র চৌকি আদালতে বিচারক না থাকায় বরগুনায় আসতে দুই উপজেলার মানুষের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। বিশেষ করে খরস্রোতা পায়রা নদী পার হয়ে বরগুনা আসতে হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলেছি। বিচারক প্রদানের বিষয়ে তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।