জাতীয় নির্বাচন
আট বিভাগে আট দিনে ভোট গ্রহণের প্রস্তাব
- Update Time : ০৫:৪০:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৩ Time View
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু প্রস্তাব ও দাবি তুলে ধরেছে। কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু্ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি, কালো টাকার মালিক, অর্থপাচারকারী, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতকারী ও ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবিও তুলেছেন তারা। একইসঙ্গে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ আগের ২০ হাজার টাকায় পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবিও উঠে এসেছে একাধিক দলের পক্ষ থেকে।
নিরাপত্তা সুবিধা বিবেচনা করে জাতীয় নির্বাচন একদিনে না করে আট বিভাগে আটদিন ভোট গ্রহণের প্রস্তাব জানায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। আর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পাশাপাশি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এমন মতামত দিয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এই সংলাপ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনের সংলাপে ১২টি নিবন্ধিত দল অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে সকালে প্রথম পর্বে ছয়টি এবং দুপুরে দ্বিতীয় পর্বে আরও ছয়টি দলের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। চলতি মাসের মধ্যেই ৫৪টি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপের কথা রয়েছে।
সংলাপে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে খেলবে, আর নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করতে চায়। কিন্তু খেলোয়াড়রা সহযোগিতা না করলে নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা হারাবে এবং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে সংলাপে সূচনা বক্তব্য রাখেন ইসি’র জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমমেদ। চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংলাপে উপস্থিত রয়ছেন।
প্রথম পর্বের সংলাপে সকালে অংশ নিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।আর দুপুরে ইসি’র সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমের প্রতিনিধি দল। রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলার জন্য ১১টি এজেন্ডা বেঁধে দিয়েছিল ইসি।
এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. জেনারেল (অব.) ড. চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বীরবিক্রম নির্বাচনে কালো টাকা ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম কমাতে ইসি’র কঠোর পদক্ষেপ কামনা করে বলেন, কমিশন এখনও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি। অনেক দল সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তপসিল ঘোষণার আগেই আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে জনগণ মনে করতে পারে- তারা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন এবং ভোট দিতে পারবেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনীর বিরোধিতা করে জোটবদ্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতীক বেছে নেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। নির্বাচনী ব্যয় কমাতে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কার্যালয়ের বদলে ইউনিয়নভিত্তিক কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেন তিনি।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী বলেন, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা যাতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেভাবেই ইসিকে পদক্ষেপ নিতে হবে। একই দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ একদিনে না করে আট বিভাগে আটদিন করা এবং নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে রিটার্নিং অফিসারদের কোনো প্রার্থীর বাড়িতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করেন।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি জোবায়দা কাদের চৌধুরী শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে ইসি’র কঠোর পদক্ষেপ কামনা করেন। একই দলের উপদেষ্টা জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবু বলেন, আমরা সঠিক সময় নির্বাচন চাই এবং নির্বাচনের পরিবেশ যাতে উন্নত হয় সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের যথাসাধ্য চেষ্টা থাকতে হবে। আমরা যারা নির্বাচনী প্রচারণার কাজে থাকবো তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। আমরা যদি সমাবেশ করতে না পারি তখন আমরা তো নির্বাচন করতে পারবো না৷ সেক্ষেত্রে যেমন পরিবেশ নষ্ট হবে, তেমন নির্বাচনও বিঘ্নিত হবে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে ১৩ দফা প্রস্তাব দেয় ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। এ সময় দলটির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু বলেন, জামানতের টাকা ৫০ হাজার করা হয়েছে। এটা বুর্জোয়া দলগুলোর পক্ষে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু আমাদের মতো দলের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আগে যে ২০ হাজার টাকা ছিল- আমি দাবি করবো জামানত সেই ২০ হাজার টাকাই যেন রাখা হয়। একই দলের মহাসচিব আনিসুর রহমান দেওয়ান সংশোধিত আরপিও এবং প্রচারে পোষ্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করাকে স্বাগত জানান।
১০ দফা লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেছে বাংলাদেশ কংগ্রেস। দলটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, বড় দলগুলো নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এখন্ও বিশাল বিশাল মহড়া চলছে। ইসি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, কোনো কমিশনই বলে না তারা নিরপেক্ষতা হারাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসে তারা আর নিরপেক্ষ থাকে না। এটা আমাদের অতীত ইতিহস। তবে এই কমিশনের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। তারা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না করে নতুন ইতিহাস তৈরি করবেন এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের মতো আরেকটা নির্বাচন চাপিয়ে দিলে তা কমিশনের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
সংলাপে নির্বাচনের তপসিলের আগে ব্যানার পোস্টার অপসারণের দাবি, গণমাধ্যম কর্মীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়





































































































































































































