ঢাকা ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অ্যাপলকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন ইলন মাস্ক!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০৯:৫৫:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • / ২৫ Time View

২০২২ সালে স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক অ্যাপলের সিইও টিম কুককে একটি আল্টিমেটাম দেন— মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি মেনে নিতে হবে, যার মাধ্যমে স্পেসএক্স হবে আইফোনের একমাত্র স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারী। চুক্তি বাতিল করলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী সেবা চালু করবেন বলে হুমকি দেন। অ্যাপল চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করায় শুরু হয় তীব্র দ্বন্দ্ব, যা আজও চলছে এবং আইফোনের স্যাটেলাইট ফিচারকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। অন্যদিকে, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা টিম কুকের এই সিদ্ধান্তে উপকৃত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

‘দ্য ইনফরমেশন’-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, মাস্ক জানতে পারেন যে অ্যাপল গ্লোবালস্টারের সহযোগিতায় আইফোন ১৪-তে স্যাটেলাইট সংযোগ চালু করতে যাচ্ছে। এরপরই তিনি একটি প্রস্তাব দেন, যাতে ১৮ মাসের জন্য একচেটিয়া সেবা এবং পরবর্তীতে প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলারের ফি নির্ধারিত ছিল। তবে অ্যাপল সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিলে, মাস্ক হুমকি বাস্তবায়ন করেন। আইফোন ১৪ লঞ্চের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে তিনি টি-মোবাইলের সঙ্গে একটি চুক্তি ঘোষণা করেন, যা মূলত অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।

অ্যাপলের স্যাটেলাইট উচ্চাকাঙ্ক্ষা নতুন নয়। ‘প্রজেক্ট ঈগল’ নামে একটি গোপন প্রকল্পের আওতায় তারা বোয়িং-এর সঙ্গে যৌথভাবে হাজারো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছিল, যার মাধ্যমে আইফোন ও হোম ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হতো। কিন্তু ভেরিজন ও এটিঅ্যান্ডটি-এর মতো মোবাইল ক্যারিয়ারদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে স্পেসএক্স গ্লোবালস্টারের ব্যবহৃত রেডিও স্পেকট্রাম নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছে। তাদের দাবি, গ্লোবালস্টার প্রতিযোগীদের ঠেকাতে ব্যবহৃত না হওয়া ফ্রিকোয়েন্সি আটকে রেখেছে এবং এতে অ্যাপলও জড়িত। স্পেসএক্সের নীতিমালা প্রধান বলেন, “এই মামলা শুধু প্রতিযোগীদের রুখে দেওয়ার জন্য।”

অ্যাপল আশঙ্কা করছে, মাস্কের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক তাকে কিছু নিয়ন্ত্রক সুবিধা দিতে পারে। এই কারণে কোম্পানিটি স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম সংক্রান্ত আইনি মোকাবেলার জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, “স্পেসএক্স কেবল অ্যাপলকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে এবং অ্যাপলও কেবল স্পেসএক্সকেই।” মাস্ক চান পুরনো আইফোন মডেলগুলোকেও স্পেসএক্স-টি-মোবাইল সেবা গ্রহণের উপযোগী করতে, যাতে স্টারলিংকের বাজার আরও প্রসারিত হয়। কিন্তু অ্যাপল সেবাটি শুধুমাত্র আইফোন ১৪ ও পরবর্তী মডেলে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়, যা মাস্ককে আরও ক্ষুব্ধ করেছে।

জুলাই মাসে টি-মোবাইলের সেবা চালু হলে নির্ধারিত আইফোনগুলো ডিফল্টভাবে স্টারলিংক নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, ফলে গ্লোবালস্টার কার্যত উপেক্ষিত হবে—যা এই দ্বন্দ্বে অ্যাপলের জন্য একপ্রকার অপমান হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

অ্যাপলের ভেতরেও এই প্রকল্প নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। সফটওয়্যার বিভাগের প্রধান ক্রেইগ ফেডেরিঘি এবং কর্পোরেট ডেভেলপমেন্ট প্রধান অ্যাড্রিয়ান পেরিকা মনে করেন, গ্লোবালস্টারের নেটওয়ার্ক স্পেসএক্সের তুলনায় অনেক দুর্বল এবং আগামী দশকে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতির সম্ভাবনাও নেই।

অ্যাপল কর্মকর্তারা আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, স্যাটেলাইট সেবা বাড়ালে কোম্পানিটিকে একটি টেলিকম অপারেটরের মতো ফেডারেল নিয়ন্ত্রণের মুখোমুখি হতে হবে। এতে আইমেসেজে নজরদারিমূলক ‘ব্যাকডোর’ রাখতে হতে পারে, যা অ্যাপলের গোপনীয়তা নীতির পরিপন্থী। তাই কোম্পানিটি সেবা চালু রেখেছে নিজের খরচেই, যদিও এতে বছরে শত শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে।

সব চাপ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও, অ্যাপল গ্লোবালস্টারের নতুন স্যাটেলাইটের জন্য ১.৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে। স্পেসএক্সের চাপে নতি না স্বীকার করে, অ্যাপল নিজের কৌশলেই অটল থেকেছে— এটাই এখন তাদের অবস্থানের প্রতিচ্ছবি।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Please Share This Post in Your Social Media

অ্যাপলকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন ইলন মাস্ক!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ০৯:৫৫:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

২০২২ সালে স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক অ্যাপলের সিইও টিম কুককে একটি আল্টিমেটাম দেন— মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি মেনে নিতে হবে, যার মাধ্যমে স্পেসএক্স হবে আইফোনের একমাত্র স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারী। চুক্তি বাতিল করলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী সেবা চালু করবেন বলে হুমকি দেন। অ্যাপল চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করায় শুরু হয় তীব্র দ্বন্দ্ব, যা আজও চলছে এবং আইফোনের স্যাটেলাইট ফিচারকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। অন্যদিকে, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা টিম কুকের এই সিদ্ধান্তে উপকৃত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

‘দ্য ইনফরমেশন’-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, মাস্ক জানতে পারেন যে অ্যাপল গ্লোবালস্টারের সহযোগিতায় আইফোন ১৪-তে স্যাটেলাইট সংযোগ চালু করতে যাচ্ছে। এরপরই তিনি একটি প্রস্তাব দেন, যাতে ১৮ মাসের জন্য একচেটিয়া সেবা এবং পরবর্তীতে প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলারের ফি নির্ধারিত ছিল। তবে অ্যাপল সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিলে, মাস্ক হুমকি বাস্তবায়ন করেন। আইফোন ১৪ লঞ্চের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে তিনি টি-মোবাইলের সঙ্গে একটি চুক্তি ঘোষণা করেন, যা মূলত অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।

অ্যাপলের স্যাটেলাইট উচ্চাকাঙ্ক্ষা নতুন নয়। ‘প্রজেক্ট ঈগল’ নামে একটি গোপন প্রকল্পের আওতায় তারা বোয়িং-এর সঙ্গে যৌথভাবে হাজারো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছিল, যার মাধ্যমে আইফোন ও হোম ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হতো। কিন্তু ভেরিজন ও এটিঅ্যান্ডটি-এর মতো মোবাইল ক্যারিয়ারদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে স্পেসএক্স গ্লোবালস্টারের ব্যবহৃত রেডিও স্পেকট্রাম নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছে। তাদের দাবি, গ্লোবালস্টার প্রতিযোগীদের ঠেকাতে ব্যবহৃত না হওয়া ফ্রিকোয়েন্সি আটকে রেখেছে এবং এতে অ্যাপলও জড়িত। স্পেসএক্সের নীতিমালা প্রধান বলেন, “এই মামলা শুধু প্রতিযোগীদের রুখে দেওয়ার জন্য।”

অ্যাপল আশঙ্কা করছে, মাস্কের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক তাকে কিছু নিয়ন্ত্রক সুবিধা দিতে পারে। এই কারণে কোম্পানিটি স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম সংক্রান্ত আইনি মোকাবেলার জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, “স্পেসএক্স কেবল অ্যাপলকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে এবং অ্যাপলও কেবল স্পেসএক্সকেই।” মাস্ক চান পুরনো আইফোন মডেলগুলোকেও স্পেসএক্স-টি-মোবাইল সেবা গ্রহণের উপযোগী করতে, যাতে স্টারলিংকের বাজার আরও প্রসারিত হয়। কিন্তু অ্যাপল সেবাটি শুধুমাত্র আইফোন ১৪ ও পরবর্তী মডেলে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়, যা মাস্ককে আরও ক্ষুব্ধ করেছে।

জুলাই মাসে টি-মোবাইলের সেবা চালু হলে নির্ধারিত আইফোনগুলো ডিফল্টভাবে স্টারলিংক নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, ফলে গ্লোবালস্টার কার্যত উপেক্ষিত হবে—যা এই দ্বন্দ্বে অ্যাপলের জন্য একপ্রকার অপমান হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

অ্যাপলের ভেতরেও এই প্রকল্প নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। সফটওয়্যার বিভাগের প্রধান ক্রেইগ ফেডেরিঘি এবং কর্পোরেট ডেভেলপমেন্ট প্রধান অ্যাড্রিয়ান পেরিকা মনে করেন, গ্লোবালস্টারের নেটওয়ার্ক স্পেসএক্সের তুলনায় অনেক দুর্বল এবং আগামী দশকে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতির সম্ভাবনাও নেই।

অ্যাপল কর্মকর্তারা আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, স্যাটেলাইট সেবা বাড়ালে কোম্পানিটিকে একটি টেলিকম অপারেটরের মতো ফেডারেল নিয়ন্ত্রণের মুখোমুখি হতে হবে। এতে আইমেসেজে নজরদারিমূলক ‘ব্যাকডোর’ রাখতে হতে পারে, যা অ্যাপলের গোপনীয়তা নীতির পরিপন্থী। তাই কোম্পানিটি সেবা চালু রেখেছে নিজের খরচেই, যদিও এতে বছরে শত শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে।

সব চাপ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও, অ্যাপল গ্লোবালস্টারের নতুন স্যাটেলাইটের জন্য ১.৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে। স্পেসএক্সের চাপে নতি না স্বীকার করে, অ্যাপল নিজের কৌশলেই অটল থেকেছে— এটাই এখন তাদের অবস্থানের প্রতিচ্ছবি।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া