অন্যের নাম-সনদ ব্যবহার করে শিক্ষকতা
- Update Time : ০৭:৪৬:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ২২ Time View
রংপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. কাজল মাহমুদের বিরুদ্ধে অন্যের নাম ও সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ইতোপূর্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও কোনো সুরাহা হয়নি এর। জাল সনদে বছরের পর বছর চাকরির নামে সরকারি অর্থ লোপাট করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া পৌর এলাকার আব্দুস ছোবহানের ছেলে কাজল মাহমুদ ওরফে রাফসান মাহমুদ। তিনি যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১৯৮৯ সালে খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে ১৯৯১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে ১৯৯৪ সালে অনার্স ও ১৯৯৬ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ অবস্থায় সমস্ত একাডেমিক সনদ ইংরেজি ভার্সনে রূপান্তরিত করার জন্য শিক্ষাবোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন যে, ২০০২ সালের শুরুর দিকে হারানো বিজ্ঞপ্তি, অপরিচিত ব্যক্তির ছবি ও ঠিকানা দেখিয়ে ডুপ্লিকেট সনদ উত্তোলন করা হয়েছে। ডুপ্লিকেট ওই সনদগুলোতে মো. কাজল মাহমুদ, পিতা-মো. ছোবাহান মাস্টার উল্লেখ করা হয়েছে।
এ অবস্থায় প্রকৃত কাজল মাহমুদ ওরফে রাফসান মাহমুদ তার নাম আংশিক পরিবর্তন ও সনদ ইংরেজি ভার্সনে রূপান্তরিত করার জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষাবোর্ডের সনদ সংশোধন কমিটির সুপারিশে ২০০২ সালের ৫ মে তারিখের স্বারক নং ৬৯০(৩)/২ অনুযায়ী মাধ্যমিক, ওই বছরের ১১ আগস্ট তারিখের স্বারক নং ৩৪২৯ (২) অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১১ সেপ্টেম্বর তারিখের স্বারক নং ১১৪৫৯-৬৪ অনুযায়ী অনার্স ও মাস্টার্সের সনদ পরিবর্তন করা হয়। যেখানে মো. কাজল মাহমুদ, পিতা-ছোবহান মাস্টারের পরিবর্তে রাফসান মাহমুদ ও পিতা: আব্দুস সোবহান হিসেবে সংশোধীত হয়। পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্রেও নিজের নাম রাফসান মাহমুদ, পিতার নাম আবদুস সোবহান এবং মায়ের নাম লুৎফুন নিহার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ঠিকানা রয়েছে, রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাফরুল। বর্তমানে রাফসান মাহমুদ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এবং পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এদিকে, প্রকৃত কাজল মাহমুদ ওরফে রাফসান মাহমুদের সদন নিজের নামে ব্যবহার করে ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন কাজল মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজল মাহমুদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলাধীন পাঁচগাছি ইউনিয়নে। তার প্রকৃত নাম ফারুক হোসেন। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা হিসেবে তিনি রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা , নিজের নাম মো. কাজল মাহমুদ, পিতা-মো. সোবহান মাস্টার এবং মায়ের নাম মোছা. ফাতেমা বেগম উল্লেখ করেছেন।
কর্মজীবনের প্রথমে তিনি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ মহিলা কলেজে ১৯৯৯ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রভাষক (ইংরেজি) হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০০০ সালের মে মাসে এমপিওভুক্ত হন। সেখানে তিনি ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি কাউনিয়া মহিলা কলেজে ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শ্যামপুর মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।
অধ্যক্ষ মো. কাজল মাহমুদের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে দেখা যায়, এসএসসির সনদ অনুযায়ী তিনি যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
কুড়িগ্রামের বাসিন্দা হয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৯৮৭-১৯৮৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি রেজিস্টারে দেখা যায় মো. কাজল মাহমুদ নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তবে এই মো. কাজল মাহমুদ খেপুপাড়া পৌরসভার বাসিন্দা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকৃত কাজল মাহমুদ ওরফে রাফসান মাহমুদের এসএসসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৭৬০৫৮ এবং সেশন ১৯৮৭-৮৮। অপরদিকে ভুয়া কাজল মাহমুদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও সেশন একই।
বিষয়টি জানাজানি শুরু হলে নিজেকে জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচাতে শারীরিক অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করে ২০২৪ সালের ১ জুলাই অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করে অবসর ও শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করেন। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা তাকে না দেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষও শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টে আবেদন জানায়। তখন তিনি ব্যর্থ হয়ে পরে একই বছরের ৭ অক্টোবরের সরকারি প্রজ্ঞাপন দেখিয়ে অসাধু উপায়ে আবারো স্বপদে বহাল হন কাজল মাহমুদ ওরফে ফারুক হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কাজল মাহমুদের ব্যবহৃত টেলিটক নাম্বারে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) রংপুর অঞ্চল পরিচালক প্রফেসর মো. আমির আলী বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা) অনুসন্ধান করে দেখেন, কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।





























































































































































































