হাল্টের মঞ্চে বিজয়ী তিন দল, উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তাদের

- Update Time : ০৭:৩২:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
- / ৫৪ Time View
উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন, টেকসই পরিবর্তনের প্রত্যয়, আর একঝাঁক সৃজনশীল তরুণের সংগ্রাম—এই তিনে মিলে আয়োজিত হয়েছে এবারের ‘হাল্ট প্রাইজ অন-ক্যাম্পাস’ প্রতিযোগিতা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ২০২৪-২৫ আসরের যাত্রা শুরু হয়েছিল গত ১৮ ডিসেম্বর। যেখানে ১২৭টি দল নিজেদের স্বপ্ন নিয়ে প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। একের পর এক ধাপ পেরিয়ে, কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছে সাতটি সেরা দল।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ফাইনালের মঞ্চে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে নামে টিম ভিশনারি, ভিশনারি মার্কেটার্স, টিম অ্যরোমা, গ্লো লিফ, সিলথেরিয়া, ডাল-ভাত ও শতরঞ্জী।
এদিন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ফাইনাল প্রতিযোগিতায় তরুণদের উদ্ভাবনী চিন্তা, উদ্যোক্তা হওয়ার স্পৃহা এবং সমাজে টেকসই পরিবর্তন আনার প্রতিজ্ঞা তুলে ধরেন। সেখান থেকে বিচারকদের মন জয় করে বিজয়ী হয় টিম ডাল-ভাত, ১ম রানার-আপ হয় টিম ভিশনারি মার্কেটার্স এবং ২য় রানার-আপ হয় টিম অ্যরোমা। আজ শুনবো তাদের গল্প….
প্রজেক্ট ‘রি-নিউ’
একটি উদ্ভাবনী আইডিয়া বদলে দিতে পারে সমাজ, গড়ে তুলতে পারে টেকসই ভবিষ্যৎ। ঠিক তেমনই এক আইডিয়া উপস্থাপন করে চ্যাম্পিয়ন মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছে টিম ‘ডাল-ভাত’। তাদের প্রকল্প রি-নিউ (ReNew), যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব একটি টেকসই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়।
প্রতিদিন হাজার হাজার টন বর্জ্য জমে থাকে শহরের বিভিন্ন স্থানে। ReNew সেই বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করেছে। শহরের ব্যস্ত জায়গাগুলো থেকে প্রতিদিনের অপচনশীল ও পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ করে তা পরিশোধন ও রিসাইকেলিং প্রক্রিয়ায় নতুন পণ্যে রূপান্তরিত করা হবে। পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে সার, পেট ফুড, ডেকোরেশন সামগ্রী এবং ফ্যাশনেবল পণ্য তৈরি করা হবে। একদিকে এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ReNew শুধু উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং তাদের নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে এই রিসাইকেল পণ্যগুলো সরাসরি বাজারজাত করার পরিকল্পনা করেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ডাল-ভাত টিমের লিডার রিয়াদ হোসাইন জানান,”আমরা সবাই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। এর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এই আইডিয়াটাকে বাস্তবে রূপ দিতে একসঙ্গে কাজ করছি। পর্যাপ্ত অর্থায়ন পেলে উদ্যোগটি বিস্তৃত পরিসরে বাস্তবায়ন করা হবে।ইনশাআল্লাহ, ফান্ডিং সুরক্ষিত করতে পারলে আমরা ReNew-কে শুধু বাংলাদেশে নয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব।”
পঁচনশীল দ্রব্য থেকে টিন-প্লাস্টিক:
টিম ভিশনারি মার্কেটাসের লক্ষ্য- পরিবেশবান্ধব, পচনশীল এবং টেকসই পণ্য তৈরি করা, যা প্রচলিত নির্মাণ সামগ্রী ও প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। টিন ও টাইলস, যা কলা গাছের ফাইবার ব্যবহার করে তৈরি হবে। এটি পরিবেশবান্ধব ও শক্তিশালী এবং প্রচলিত টিন ও টাইলসের চেয়ে অধিক কার্যকর। বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিন, যা শাক-সবজির উচ্ছিষ্ট থেকে তৈরি এবং সহজেই মাটিতে মিশে যায়।
এই আইডিয়া তৈরি করতে এবং বাস্তবে রূপ দিতে টিম লিডারকে একজন অসাধারণ মানুষের সন্ধান করতে হয়েছিল—একজন উদ্যোক্তা, যিনি আগে থেকেই কলা গাছের ফাইবার নিয়ে কাজ করছিলেন।
টিম ভিশনারি মার্কেটাসের যাত্রা সহজ ছিল না। এই আইডিয়া তৈরি, গবেষণা, উপস্থাপন, পরীক্ষামূলক উৎপাদন—সব কিছুই করতে লেগেছে প্রচুর পরিশ্রম এবং অর্থ। তারা দিনরাত এক করে কাজ করেছেন, শুধুমাত্র এই বিশ্বাস নিয়ে যে তারা বিজয়ী হবে, তারা প্রথম হবে। তবে ফলাফল প্রত্যাশিত ছিল না। প্রথম হওয়ার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি, যা তাদের মনে খানিকটা আক্ষেপ তৈরি করেছে।
“আমি গতবারের ১ম রানার-আপ। এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেছি এবং অর্থ ব্যয় করেছি । কিন্তু এবারেও প্রথম হতে পারলাম না—এটাই বেশি কষ্ট দিচ্ছে।” এভাবেই নিজের আক্ষেপ প্রকাশ করেন ভিশনারি মার্কেটাস দলের লিডার রায়হান।
তবে তারা থেমে নেই। এই প্রতিযোগিতা তাদের স্বপ্ন শেষ করে দেয়নি, বরং নতুন করে শুরু করার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তাদের স্বপ্ন—এই উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া। তারা শিগগিরই বড় পরিসরে এই আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে, আরও বেশি বিনিয়োগকারী খুঁজবে এবং বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করবে।
পামজার:
সেদিন মঞ্চে নিজের আইডিয়া উপস্থাপন করে ২য় রানারআপ হয়েছিল টিম অ্যরোমা। তাদের প্রকল্প “পামজার”, যা তালের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই পণ্য তৈরি করছে ।
অ্যরোমার টিম লিডার মো. শাহিদুল ইসলাম জানান,
“আমাদের লক্ষ্য শুধু ব্যবসা করা নয়, বরং এমন একটি উদ্যোগ গড়ে তোলা, যা সমাজ ও পরিবেশের জন্য উপকারী হবে। আমরা চাই আমাদের পণ্যগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে টেকসই পরিবর্তন আনুক।”
পামজার এমন একটি স্টার্টআপ যা তাল গাছ ও তালের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর পণ্য তৈরি করছে। বর্তমান বাজারে কৃত্রিম ও রাসায়নিক উপাদানে পরিপূর্ণ পণ্যগুলোর পরিবর্তে পামজার টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প নিয়ে এসেছে।
পামজারের তিনটি পণ্য নিয়ে তারা তাদের যাত্রার পথ দেখিয়েছেন। পাম ফ্লেভার জেলি, যা প্রাকৃতিক পাম ফ্লেভার সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর জেলি। পাম বীজের প্রাকৃতিক স্ক্রাব, যা রাসায়নিকমুক্ত স্ক্রাব এবং ত্বকের যত্নে কার্যকরী ও পরিবেশবান্ধব। শুকনো পাম থেকে তৈরি লুফা, যা টেকসই ও পুনঃব্যবহারযোগ্য লুফা এবং প্লাস্টিকের স্পঞ্জের চেয়েও স্বাস্থ্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক বর্জ্য এবং রাসায়নিক পণ্যের প্রভাবে পরিবেশ দূষণ এক গুরুতর সংকটের রূপ নিয়েছে। পামজার এই সমস্যা সমাধানে একটি টেকসই পথ দেখাচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা স্থানীয় কৃষকদের সম্পৃক্ত করে একটি সার্কুলার ইকোনমি গড়ে তোলা, যা শুধু বর্জ্য কমাবে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
হাল্ট প্রাইজ কুবির মঞ্চে এই স্বীকৃতি টিম অ্যরোমা-কে অনুপ্রাণিত করেছে । তারা এখন বাজার গবেষণা এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্প্রসারণের মাধ্যমে তাদের উদ্যোগকে আরও সুসংহত করার পরিকল্পন
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়