‘স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যান’এ লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের চেক হস্তান্তর
- Update Time : ১১:০৬:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
- / ১১০ Time View
সিলেট ক্যাডেট কলেজ-সংলগ্ন বধ্যভূমিতে ‘সিলেট শহীদ স্মৃতি উদ্যান’ প্রতিষ্ঠায় অংশীদার হলো লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব। ক্লাবের সাধারণ সদস্য ও আজীবন সদস্যদের সহযোগিতায় ৩৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়।
২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৩৫ লাখ টাকার চেক (প্রতীকী) হস্তান্তর করা হয়।
এই অর্থ শীঘ্রই সিলেট শহীদ স্মৃতি উদ্যান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে প্রতীকী চেকটি গ্রহণ করেন সিলেট শহীদ স্মৃতি উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষে কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা আহমদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি।এই ৩৫ লাখ টাকার মধ্যে ১১ হাজার পাউন্ড একাই দান করেছেন কনজার্ভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ইউকের প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুকিম আহমদ।
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়েরের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি তাইসির মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কনজার্ভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ইউকের প্রেসিডেন্ট মুকিম আহমদ, সিলেট শহীদ স্মৃতি উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা আহমদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদ্যসাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মহিব চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম বাসন, প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ও ইউকেবিসিসিআইর সাবেক প্রেসিডেন্ট বজলুর রশীদ এমবিই, আজীবন সদস্য ও ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পাশা খন্দকার এমবিই, আজীবন সদস্য ও ওয়ার্ক পারমিট ক্লাউডের সিইও ব্যারিস্টার লুৎফুর রহমান এবং আজীবন সদস্য ও ব্রেন্ট কাউন্সিলের সাবেক মেয়র কাউন্সিলার পারভেজ আহমদ।
ক্লাবের সদ্যসাবেক প্রেসিডেন্ট ও ফান্ডরেইজিং কমিটির প্রধান এমদাদুল হক চৌধুরী অর্থদাতা সাধারণ সদস্য ও আজীবন সদস্যদের নাম পড়ে শুনান। তিনি শহীদ স্মৃতি উদ্যান নির্মাণ প্রকল্পের উদ্যোক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অবঃ) এম এ সালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়া উদ্দিন আহমদ-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁরা একটি আন্দোলন শুরু করেছেন। ৫২ বছর পর সিলেটে বধ্যভূমি চিহ্নিত করেছেন। গড়ে তুলেছেন শহীদ স্মৃতি উদ্যান। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও একইভাবে কাজ করতে চান তাঁরা। সবার সহযোগিতা থাকলে এখানে একটি গবেষনা পাঠাগার হবে । ছোট্ট পরিসরে হবে মিউজিয়াম।
মুকিম আহমদ বলেন, আমি এই ঐতিহাসিক কাজে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করছি। এ এক অনন্য আয়োজন। যার কারণে আমার মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়ে যায়। সেই ৭১ সালে আমি নিজ চোখে দেখেছি মানুষের লাশ পানিতে ভাসছে।
আহমদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি বলেন, আমি কয়েকবার এই উদ্যান পরিদর্শন করেছি। এর স্থাপত্য ডিজাইন যেমন সুন্দর, তেমনি এর চার পাশে রয়েছে নয়নাভিরাম দৃশ্য। এটি ইতিমধ্যে সবার নজর কেড়েছে । আমি একই সাথে প্রেস ক্লাব ও শহীদ স্মৃতি উদ্যান-এর প্রতিনিধিত্ব করে আনন্দিত।
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন, আমাদের ক্লাবের সদস্যরা নানা মানবিক উদ্যোগে সবসময় পাশে থাকেন । আমরা সিলেটে গত ভয়াবহ বন্যায় বিপদগ্রস্ত সাংবাদিকদের জন্য প্রায় ৮ লাখ টাকা পৌঁছে দিয়েছি । সিলেট প্রেস ক্লাবের মাধ্যমেই এই অর্থ পৌঁছে দেয়া হয় । তবে শহীদ স্মৃতি উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক প্রকল্পে প্রেস ক্লাব যুক্ত হওয়া সৌভাগ্যের ও গৌরবের।
সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ এই ৩৫ লাখ টাকার তহবিলে যারা অর্থ দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যানে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবকে সম্পৃক্ত করতেপারা আমাদের জন্য আনন্দের । এই সহযোগিতার মধ্য দিয়ে শহীদ স্মৃতি উদ্যোনের সাথে আমাদের একটি সেতুবন্ধন রচিত হলো ।
অনুষ্ঠানে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য, সাধারণ সদস্য, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সিলেট ক্যাডেট কলেজের পেছনে সালুটিকর বধ্যভূমিতে স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যান প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর এবং নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ৪ই মার্চ। এই প্রকল্প প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অবঃ) এম এ সালাম বীরপ্রতীক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ জিয়া উদ্দিন ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের স্বজনদের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে নিয়ে ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন এই বধ্যভূমিতে নৃশংস কায়দায় হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।
এই বধ্যভূমিতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যান’। যুদ্ধকালিন সময়ে সেখানে মাটিচাপা দেওয়া অজ্ঞাত অনেক শহীদের মধ্য থেকে ৬৬ জনের নাম-পরিচয় সনাক্ত করে পৃথক পৃথক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে । বাকি শহীদদেরও নাম-পরিচয় শনাক্তকরণে কাজ চলছে। ৬৬ শহীদের পরিবার প্রথমবারের মতো দেশের জন্য আত্মোত্যাগকারী তাদের শহিদ স্বজনদের স্মৃতিচিহ্নের সন্ধান পেয়েছেন। নান্দনিক এই স্মৃতি উদ্যানে পর্যায়ক্রমে পাঠাগার, যাদুঘর, কফিশপ এবং আলাদা বসার জায়গা নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।