সিলেট জেলা হাসপাতাল নির্মাণ, কাজ শেষেও দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ
- Update Time : ১১:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৪৬ Time View
নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর ঐতিহ্যবাহী আবু সিনা ছাত্রাবাস ভেঙে নির্মাণ করা হয় ২৫০ শয্যার সিলেট জেলা হাসপাতাল। নাগরিক সমাজের আপত্তি উপেক্ষা করে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ দায়িত্বশীলরা অনেকটা জোর করে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন এই হাসপাতাল। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালের নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শেষ হলেও এখন এটির দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ।
স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টদের মতামত না নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করায় এই হাসপাতাল ভবনের দায়িত্ব নিতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। ফলে হাসপাতাল কমপ্লেক্স বুঝিয়ে দেয়ার মতো কর্তৃপক্ষ পাচ্ছে না গণপূর্ত বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সিভিল সার্জন অফিসসহ কেউই এর দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না। ফলে হাসপাতাল চালু করা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও নির্মাণ কাজের শুরুতে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, এটি চালু হলে ওসমানী হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। সিলেট অঞ্চলের রোগীরা এখান থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা নিতে পারবেন।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৯৮ একর জায়গার ওপর এই জেলা হাসপাতাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণপূর্ত অধিদপ্তর হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ভবন নির্মাণসহ রংকরণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভবনে হাসপাতালের কোনো যন্ত্রপাতি আনা হয়নি। এর চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনীও দেয়া হয়নি। নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক মওদুদ আহমদ জানান, তাদের কাজ শেষ। তারা ভবনটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছে তুলে দিতে প্রস্তুত।
জানা গেছে, হাসপাতাল ভবন নির্মাণ শেষ হলেও ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন কার্যালয় নাকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা পরিচালনা করবে, সেটি এখনও নির্ধারণ হয়নি। হাসপাতাল হস্তান্তরের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ না পাওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ জানায়, ১৫ তলা হাসপাতাল ভবনে আটতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রঙের কাজ, ইলেক্ট্রিক, টাইলস, গ্লাস, দরজা, জানালা লাগানোও সম্পন্ন। হাসপাতাল ভবনের বেসমেন্টে রয়েছে কার পার্কিং; প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম; দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার; তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক; চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউ; পঞ্চম তলায় গাইনি বিভাগ, অপথালমোলজি, অর্থোপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন। এর মধ্যে আইসিইউ বেড ১৯টি, সিসিইউ বেড ৯টি এবং ৪০টি কেবিন রয়েছে।
জেলা গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর জানান, ‘আমরা এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে দেব। বাই মিসটেক এখানে যেহেতু লোকাল অথরিটি পাওয়া যায়নি। সেহেতু আমরা অথরিটি নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’তিনি আরো বলেন, ‘টেন্ডার সিডিউল, নকশাসহ কাগজপত্র সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে। প্রতি তলায় ছাদ ঢালাইয়ের সময় তারা এসেছিল। এই হাসপাতালের জমি, ভবন, টাকা- সব দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়; আমরা শুধু কাজ করে দিচ্ছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, ‘একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে হাসপাতালটি পরিচালনা বা তদারকির কথা ছিল। আমরা মন্ত্রণালয়কে সেভাবেই চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব যখন মন্ত্রণালয়ে যায়, তখন গণপূর্ত বিভাগ আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি। শুনেছি, হাসপাতালের কাজ শেষ। এখন তারা আমাদের গছাতে চাচ্ছে। অথচ এখানে কী আছে না আছে- সেটি আমাদের জানা নেই। তাই এ অবস্থায় আমরা হাসপাতালের দায়িত্ব নিতে পারি না। ‘কারণ, আমাদের আগের পরিচালক (ডা. হিমাংশু লাল রায়) এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে গেছেন মন্ত্রণালয়ে। তাতে তিনি লিখে যান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অগোচরেই সিলেটে অনেক স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। তারা যেন না বুঝে এসব স্থাপনার দায়িত্ব কোনোভাবেই না নেন।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত জানান, ‘হাসপাতালের স্থাপত্য নকশা, কর্ম পরিকল্পনা, সেবা প্রদানের জন্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় কক্ষের সুবিন্যাসকরণ ইত্যাদির কাগজপত্র সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক অথবা ওসমানী হাসপাতালের পরিচালকের কাছে দাখিল করা হয়নি। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এটি বাসাবাড়ি নয়; আমাকে দায়িত্ব দিয়ে দিল আর নিয়ে নিলাম। এটি একটি হাসপাতাল। এটি নির্মাণে আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করা হয়নি।’ হাসপাতালটি নির্মাণের আগে কোনো মতামত নেয়া হয়নি জানিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের
উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, ‘এভাবে হুট করে আমরা কোনো হাসপাতালেল দায়িত্ব নিতে পারি না। এই ভবনের অবকাঠামো হাসপাতালের উপযোগী কী না তাও আমাদের জানা নেই।‘তাছাড়া ওসমানী হাসপাতালের অধীনে আরও কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে। সীমিত জনবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে এগুলো পরিচলানা করতেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি। নতুন করে কোনো হাসপাতালের দায়িত্ব নেয়া এখন সম্ভব নয়।’
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেট জেলা সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী জানান, ‘এমন ঠেলাঠেলি বন্ধ হোক। এখানে কারও স্বার্থ বা কোনো কুচক্রী মহল আছে কিনা, সেটি খুঁজে দেখা দরকার। এ প্রকল্প যখন পাস হয়, তখনই বলে দেয়া হয়েছে কারা পরিচালনা করবে। নির্মাণের পর কেউ দায় নিতে না চাওয়া অন্য অর্থ বহন করে।’
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়