জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে করা যাচ্ছে না
সরকার কিভাবে দ্রুততম সময়ে জাতীয় নির্বাচন করবে
- Update Time : ১১:২২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
- / ২৪ Time View
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের পর একশ্রেণীর মানুষের ‘বডি ল্যাংগুয়েজ’ চেঞ্জ হয়ে গেছে। এরা মনে করছে তারা ক্ষমতায় বসে গেছে। তারা নিজেদেরকে দেশের মালিক মুক্তার মনে করছে। বিশেষ করে দেশের অতি সামান্য ভোটারের সমর্থনপুষ্ঠ একটি রাজনৈতিক দলের কতিপয় সমর্থকের হাবভাব তেমনই মনে হয়। এদের মধ্যে একশ্রেণীর কথিত সাংবাদিকও রয়েছে।
এরই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে গত ১৬ নভেম্বর শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে। প্রেস ক্লাবের অতিরিক্ত সাধারণ সভা ছিল ওইদিন। সভার শুরুতে ক্লাবের একজন সিনিয়র সদস্য দাঁড়িয়ে ক্লাব গঠনতন্ত্রের ২৩ অনুচ্ছেদের প্রতি সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, ‘জনাব সভাপতি গঠনতন্ত্রের ২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপনি এই সভায় সভাপতিত্ব করতে পারেন না। সভাপতি কোন কিছু বলার আগেই ডিইউজের সভাপতি ও জামায়াতের রোকন হিসাবে পরিচিত শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ক্লাবের নতুন সদস্য (এখনো ভোটাধিকার হয়নি) সাঈদ খান, মোশারফ হোসেন, খন্দকার আলমগীর, নাসিরুদ্দিন শোয়েবসহ বেশ কয়েকজন উচ্ছৃংখল সদস্য ওই সদস্যের দিকে তেড়ে আসে।
এছাড়া আরেক সিনিয়র সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদকে লাঞ্ছিত করে। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে ক্লাবের একাধিকবারের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি শওকত মাহমুদ ও জাতীয়তবাদী সাংবাদিক ফোরামের মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম প্রধানও লাঞ্জিত হন।
এ সময় মঞ্চ থেকে সভাপতিসহ অন্য কোন সদস্য এই উচ্ছৃংখল সদস্যদের বিরত করার কোন চেষ্টাই করেননি। অতঃপর সভার কার্যক্রম শুরু হয়। শোক প্রস্তাব পাস, নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন, দোয়া ও মোনাজাত শেষে সাধারণ সম্পাদক তার রিপোর্ট পেশ করেন। শুরু হয় রিপোর্টের উপর আলোচনা।
সভাপতি একের পর এক বক্তাদের নাম ধরে ডাকতে থাকেন। যারা আলোচনা করেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নতুন সদস্য। যাদের ভোটাধিকারও এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বক্তারা সবাই একই মতাদর্শের। অন্যান্য মতাদর্শের কাউকে বক্তব্য দিতে ডাকা হয়নি। একমাত্র প্রবীণ সাংবাদিক কবি মাহমুদ শফিককে বক্তব্য দেয়ার জন্য ডাকা হয়। তার বক্তব্য চলাকালে নতুন কতিপয় সদস্য হৈচৈ করতে থাকেন। বাধ্য হয়ে তিনি তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন। কতটা অসহিষ্ণু হলে একজন সিনিয়র সদস্যের বক্তব্যে বাধা প্রদান করা হয়। এর নজির ঐদিন দেখা গেছে।
শেষ বক্তা ছিলেন ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম। আশ্চর্য্যরে বিষয় বক্তব্যের শুরুতে তিনি সিনিয়র সদস্যের পয়েন্ট অব অর্ডারে দেয়া বক্তব্যকে সভা বানচালের চেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। অথচ প্রেসক্লাবের ৭০ বছরের ইতিহাসে যে ঘটনা ঘটেনি, সেই নব্য সদস্যদের বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা, সিনিয়র সদস্যদের লাঞ্জিত করার বিষয়ে কেউ কোন টু-শব্দটি করলেন না। উল্টো ‘উদোর পিন্টি বুদোর ঘাড়ে’ চাপানোর চেষ্টা করলেন। কী চমৎকার দৃশ্য!
কয়েকজন সিনিয়র সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সাংবাদিক সমাজকে বলা হয় জাতির ভ্যানগার্ড। সরকার, রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য সকল সংস্থা তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের তারিখ বর্ধিত করা নীতি নির্ধারকদের ভুল ম্যাসেজ দিতে পারে। যখন জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রায় ১৫০০ ভোটার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারছে না। সরকার কেমন করে দ্রুততম সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে? এই অভিমত আমাদের ব্যক্তিগত।”
এদিকে গুঞ্জন রয়েছে যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্বৈরাচারের দোসর সাংবাদিকদের একটি তালিকা প্রেসক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটিকে দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। এখন একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের সদস্যদের নাম ওই তালিকায় সংযোজনের অপচেষ্টা করছেন। অথচ বিগত ১৭ বছর যাবত এই সাংবাদিকরা বেকারত্ব, হামলা-মামলাসহ নানাভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছেন। অনেক সিনিয়র সাংবাদিকদের অভিমত হচ্ছে, যদি কেউ বা কোন গোষ্ঠী এ ধরনের দূরভিসন্ধিমূলক প্রচেষ্টা চালায় সেটি হবে প্রকারান্তরে পতিত স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের চেষ্টার শামিল। তাই সময় থাকতে এই বিভেদ ও হিংসাত্মক পথ থেকে যত শীঘ্র তারা বেরিয়ে আসবে ততই মঙ্গল। অনেকের মতে, ‘ক্ষমতায় এক বছর কেন, সদস্যরা চাইলে যতদিন খুশী থাকেন। কিন্তু তাই বলে সাধারণ সভায় কথা বলতে দিবেন না কেন? এটা আবার কোন গণতন্ত্র।”
অনেকের মতে, বিগত ৭০ বছর ধরে নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যেও প্রেসক্লাব ঐক্যের প্রতীক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। আর হঠাৎ করে একটি গোষ্ঠী এখানে বিভেদের বীজ বপন করলে তা হবে দেশ-জাতির জন্য অকল্যাণকর। এমনিতেই ১৬ নভেম্বর যে নজীর স্থাপন করা হয়েছে, তা ইতিহাসের জঘন্যতম ‘ফ্যাসিজম’ হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কারণ, যারা পরোক্ষভাবে ফ্যাসিজমের সহযোগী তারা অন্যকে ফ্যাসিবাদের সহযোগী এই তকমা লাগানো একেবারেই অনুচিত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের প্রতি জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম সদস্যদের আহবান, ‘আপনারা দয়া করে জাতীয় প্রেসক্লাবের মত একটি প্রতিষ্ঠানে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টায় শামিল হবেন না। বিশেষ করে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের প্রতি অনুরোধ, স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এতে কারো কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আপনাদের দোহাই দিয়ে নির্যাতিত জাতীয়তাবাদী সাংবদিকদের উপর যেকোন হামলার অপচেষ্টা করলে জাতি আপনাদেরও কোনদিন ক্ষমা করবে না।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়