ঢাকা ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

শিল্প উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি: প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজকে রক্ষার আহবান

নওরোজ ডেস্ক রিপোর্ট
  • Update Time : ১১:১৬:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২১ Time View

বিএসইসি-র অধীন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজকে দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষার আবেদন জানিয়ে শিল্প উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে সংস্থার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, পাকিস্তান আমলের যত ভারী শিল্প কল-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং বাংলাদেশ সরকার তা পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রীয় স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ অন্যতম।

দূর্ভাগ্যবশতঃ এই প্রতিষ্ঠান এখনও তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পূর্বেই কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে বার বার থমকে যাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী আওয়ামী সরকারের শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের বড় বউয়ের বড় ছেলে মোঃ সাদী, যিনি আবার বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। প্রগতির এমডি যুবলীগের ক্যাডার সাদীর প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তার সাথে ঘনিষ্ঠতা করতে মরিয়া হয়ে উঠে।

বর্তমান এমডি আবুল কালাম আজাদ কিছুদিন পূর্বে চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন ক্যাবলস্ এর কোটি কোটি টাকার স্ক্র্যাপ মালামাল দূর্নীতের সাথে সংশ্লিষ্ঠতা পাওয়ায় তার ব্যাপারে তৎকালিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরাবরেও অভিযোগ করেন ঐ প্রতিষ্ঠানের সিবিএ শ্রমিক কর্মচারীগণ। এই অভিযোগের তদন্ত কমিটি গঠন হওয়া সত্যেও যুবলীগ ক্যাডার সাদীর সাথে ঘনিষ্টতা থাকার কারণে বিচার ব্যবস্থা না করেই প্রগতির ইন্ডাস্ট্রিজের মত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে আবুল কালাম আজাদকে বদলীসহ এমডি (ভারপ্রাপ্ত) করে পদায়ন করা হয়। সাদী তার সকল অপকর্ম আড়াল করেন। বিএসইসি-এর চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের নিকট অভিযোগপত্র প্রদানের পরেও তিনিও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং তার হাতেই তাকে নার্সিং করে যাচ্ছেন।

আবুল কালাম আজাদ একজন নন-টেকনিক্যাল কর্মকর্তা। তিনি কেবল মাত্র একজন সহকারী হিসাব রক্ষক থেকে কিভাবে এই রকম একটি অটোমোবাইল টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানের এমডি (ভারপ্রাপ্ত) পদে যোগদান করতে পারে তাহা বোধগম্য নয়।

ঢাকা অফিসের কিছু অফিসার সিনিয়র অফিসারদের রেখে সিনিয়র অফিসার জসিমউদ্দিন কনক ও আশিকুর রহমান সুমনকে প্রমোশন দিয়ে ম্যানেজার করে প্রধান কার্যালয় অগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম বদলি করেন। কিন্তু ব্যক্তিদ্বয় মন্ত্রীর ছেলে যুবলীগ ক্যাডার সাদীর এলাকায় হওয়ায় ও এমডির দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে ঢাকা অফিসে কাজ করার সুযোগ প্রদান করেন। এইভাবে তারা চট্টগ্রাম না গিয়েই বেতন/ভাতা উত্তোলনসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন।

তিনি প্রগতিতে আসার পরে, প্রগতির গচ্ছিত কার্যকরী মূলধন কিভাবে বিনষ্ট করা যাবে সেই পথ খুঁজে বেড়ান এবং প্রগতির টাকা/পয়সা লুট করে নিজের ও সহযোগীদের পকেটে ভর্তি করার ব্যবস্থাসহ অলাভজনক প্রকল্প গ্রহণ করেন এমনি প্রতিটি কাজকেই লোকসানের মুখে দ্বার করাচ্ছেন।

এরকম একটি প্রকল্প, ১৫১/১৫২ তেজগাঁও শিল্প এলাকার আঞ্চলিক বিক্রয়/বিতরণ কেন্দ্রে পাকিস্তান আমলের রেখে যাওয়া পুরাতন শেডের স্টীল স্ট্রাকচারের বারগুলো রং করে শুধু উপরে নতুন টিন দিয়ে মেঝেতে ৩/১ অংশ টাইলস ফিটিং করে, দুইটি টয়লেট নির্মাণ বাবদ ৮০ লক্ষ টাকা বিল/ভাউচার করেন। এখানে ৪টি গাড়ী রাখার একটি শো-রুম ঘষে-মেঝে, গ্লাস, সাটার ফিটিং করে তাকে আবার উদ্বোধনের জন্য শিল্পমন্ত্রী, শিল্প সচিব ও বিএসইসি চেয়ারম্যানকে দাওয়াত করেন।

উক্ত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অপ্যায়ন, কয়েকটি আমগাছ ও কিছু ফুলের গাছ রোপন বাবদ প্রায় ১২/১৫ লক্ষ টাকা বিল/ভাউচার করেন।

তেজগাঁও আঞ্চলিক বিক্রয়/বিতরণ কেন্দ্রে কিছু সৎ অফিসারকে অন্যত্র স্থানান্তর করে যোগ্যতা না থাকা সত্যেও তার মনোনীত লোকজনদের নিয়ে আসেন এবং একটি সিন্ডিকেট করে তাদেরসহ নিজের অসৎ আয়ের ব্যবস্থা করেন, আর এইভাবে প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়নের অন্তরায় করেন।

সাবেক শিল্পমন্ত্রী, তারা বড় ছেলে সাদী ও মন্ত্রীর পেয়াদা, বিএসইসি চেয়ারম্যান, এমডি আবুল কালাম আজাদসহ একটি গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়ান কেয়া মটরস ফ্যাক্টরী পরিদর্শনের নামে পারিবারিক ও আনন্দ ভ্রমণ করেন, যাহা রাষ্ট্রিয় অপচয় বৈ কিছু নয়।

যেখানে প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ানদের যাওয়া প্রয়োজন ছিল। আসলে তারা গাড়ী পরিদর্শন নয় ভ্রমণের জন্য গেছেন এবং ট্রেডিং বিজনেস কিভাবে মন্ত্রীর ছেলে সাদীর হাতে দেওয়া যায় সেটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। এখনই যদি এদের লাগাম টেনে না ধরা হয়, তাহলে পাগলা ঘোড়ার ন্যায় প্রগতি প্রতিষ্ঠানকে দূর্নীতির মাধ্যমে ধ্বংস করে ছাড়বেন।

Please Share This Post in Your Social Media

শিল্প উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি: প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজকে রক্ষার আহবান

নওরোজ ডেস্ক রিপোর্ট
Update Time : ১১:১৬:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিএসইসি-র অধীন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজকে দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষার আবেদন জানিয়ে শিল্প উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে সংস্থার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, পাকিস্তান আমলের যত ভারী শিল্প কল-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং বাংলাদেশ সরকার তা পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রীয় স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ অন্যতম।

দূর্ভাগ্যবশতঃ এই প্রতিষ্ঠান এখনও তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পূর্বেই কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে বার বার থমকে যাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী আওয়ামী সরকারের শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের বড় বউয়ের বড় ছেলে মোঃ সাদী, যিনি আবার বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। প্রগতির এমডি যুবলীগের ক্যাডার সাদীর প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তার সাথে ঘনিষ্ঠতা করতে মরিয়া হয়ে উঠে।

বর্তমান এমডি আবুল কালাম আজাদ কিছুদিন পূর্বে চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন ক্যাবলস্ এর কোটি কোটি টাকার স্ক্র্যাপ মালামাল দূর্নীতের সাথে সংশ্লিষ্ঠতা পাওয়ায় তার ব্যাপারে তৎকালিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরাবরেও অভিযোগ করেন ঐ প্রতিষ্ঠানের সিবিএ শ্রমিক কর্মচারীগণ। এই অভিযোগের তদন্ত কমিটি গঠন হওয়া সত্যেও যুবলীগ ক্যাডার সাদীর সাথে ঘনিষ্টতা থাকার কারণে বিচার ব্যবস্থা না করেই প্রগতির ইন্ডাস্ট্রিজের মত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে আবুল কালাম আজাদকে বদলীসহ এমডি (ভারপ্রাপ্ত) করে পদায়ন করা হয়। সাদী তার সকল অপকর্ম আড়াল করেন। বিএসইসি-এর চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের নিকট অভিযোগপত্র প্রদানের পরেও তিনিও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং তার হাতেই তাকে নার্সিং করে যাচ্ছেন।

আবুল কালাম আজাদ একজন নন-টেকনিক্যাল কর্মকর্তা। তিনি কেবল মাত্র একজন সহকারী হিসাব রক্ষক থেকে কিভাবে এই রকম একটি অটোমোবাইল টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানের এমডি (ভারপ্রাপ্ত) পদে যোগদান করতে পারে তাহা বোধগম্য নয়।

ঢাকা অফিসের কিছু অফিসার সিনিয়র অফিসারদের রেখে সিনিয়র অফিসার জসিমউদ্দিন কনক ও আশিকুর রহমান সুমনকে প্রমোশন দিয়ে ম্যানেজার করে প্রধান কার্যালয় অগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম বদলি করেন। কিন্তু ব্যক্তিদ্বয় মন্ত্রীর ছেলে যুবলীগ ক্যাডার সাদীর এলাকায় হওয়ায় ও এমডির দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে ঢাকা অফিসে কাজ করার সুযোগ প্রদান করেন। এইভাবে তারা চট্টগ্রাম না গিয়েই বেতন/ভাতা উত্তোলনসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন।

তিনি প্রগতিতে আসার পরে, প্রগতির গচ্ছিত কার্যকরী মূলধন কিভাবে বিনষ্ট করা যাবে সেই পথ খুঁজে বেড়ান এবং প্রগতির টাকা/পয়সা লুট করে নিজের ও সহযোগীদের পকেটে ভর্তি করার ব্যবস্থাসহ অলাভজনক প্রকল্প গ্রহণ করেন এমনি প্রতিটি কাজকেই লোকসানের মুখে দ্বার করাচ্ছেন।

এরকম একটি প্রকল্প, ১৫১/১৫২ তেজগাঁও শিল্প এলাকার আঞ্চলিক বিক্রয়/বিতরণ কেন্দ্রে পাকিস্তান আমলের রেখে যাওয়া পুরাতন শেডের স্টীল স্ট্রাকচারের বারগুলো রং করে শুধু উপরে নতুন টিন দিয়ে মেঝেতে ৩/১ অংশ টাইলস ফিটিং করে, দুইটি টয়লেট নির্মাণ বাবদ ৮০ লক্ষ টাকা বিল/ভাউচার করেন। এখানে ৪টি গাড়ী রাখার একটি শো-রুম ঘষে-মেঝে, গ্লাস, সাটার ফিটিং করে তাকে আবার উদ্বোধনের জন্য শিল্পমন্ত্রী, শিল্প সচিব ও বিএসইসি চেয়ারম্যানকে দাওয়াত করেন।

উক্ত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অপ্যায়ন, কয়েকটি আমগাছ ও কিছু ফুলের গাছ রোপন বাবদ প্রায় ১২/১৫ লক্ষ টাকা বিল/ভাউচার করেন।

তেজগাঁও আঞ্চলিক বিক্রয়/বিতরণ কেন্দ্রে কিছু সৎ অফিসারকে অন্যত্র স্থানান্তর করে যোগ্যতা না থাকা সত্যেও তার মনোনীত লোকজনদের নিয়ে আসেন এবং একটি সিন্ডিকেট করে তাদেরসহ নিজের অসৎ আয়ের ব্যবস্থা করেন, আর এইভাবে প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়নের অন্তরায় করেন।

সাবেক শিল্পমন্ত্রী, তারা বড় ছেলে সাদী ও মন্ত্রীর পেয়াদা, বিএসইসি চেয়ারম্যান, এমডি আবুল কালাম আজাদসহ একটি গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়ান কেয়া মটরস ফ্যাক্টরী পরিদর্শনের নামে পারিবারিক ও আনন্দ ভ্রমণ করেন, যাহা রাষ্ট্রিয় অপচয় বৈ কিছু নয়।

যেখানে প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ানদের যাওয়া প্রয়োজন ছিল। আসলে তারা গাড়ী পরিদর্শন নয় ভ্রমণের জন্য গেছেন এবং ট্রেডিং বিজনেস কিভাবে মন্ত্রীর ছেলে সাদীর হাতে দেওয়া যায় সেটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। এখনই যদি এদের লাগাম টেনে না ধরা হয়, তাহলে পাগলা ঘোড়ার ন্যায় প্রগতি প্রতিষ্ঠানকে দূর্নীতির মাধ্যমে ধ্বংস করে ছাড়বেন।