শিক্ষা সংস্কারে ১২ প্রস্তাব দিয়েছে কাউন্সিলর ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়া

- Update Time : ০৯:০৫:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৯৬ Time View
শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে ১২ দফা প্রস্তাব দিয়েছে ‘কাউন্সিলর ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়া’ নামে একটি সংগঠন।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একাডেমিক অধিকার লঙ্ঘন: প্রতিকারে নীতি সমাবেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনটির মুখপাত্র প্লাবন তারিক এ প্রস্তাবনা পেশ করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ছিল দেশের মানুষের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতার পর এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। স্বাধীনতা পরবর্তীসময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ক্ষমতার পালাবদল ও বিভাজনের রাজনীতির কারণে কোনো সরকারই যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারেনি। ফলে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার হতে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার পর থেকে মোট আটবার দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত সেখানে মৌলিক কিছু ত্রুটি থেকেই যায়।
প্লাবন তারিক বলেন, এমতাবস্থায় কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়া জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে একটি টেকসই ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে ১২ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছে।
প্রস্তাবনাগুলো হলো
শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন
শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং বিশেষজ্ঞ নীতিনির্ধারক নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাধীন শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে, যা গবেষণা ও মূল্যায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে।
শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন
শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও নৈতিক মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা, গঠনমূলক চিন্তা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে একটি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। এর ধারাবাহিকতায় যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক তৈরির ক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞান-দক্ষতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জাতীয় ইতিহাস ঐতিহ্য, কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনী শিক্ষা, ভাষাগত দক্ষতা, পরিবেশ সচেতনতার পাঠ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার
প্রতিটি শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও আচরণ- এই তিনটি দিক মূল্যায়নের ওপর জোর দিতে হবে। তাই শুধু পরীক্ষানির্ভর না হয়ে ধারাবাহিক ও সামষ্টিক পদ্ধতির মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও সততার মাধ্যমে তার বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে মূল্যায়ন অতি জরুরি। তাই শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে লিখিত পরীক্ষা ছাড়াও প্রজেক্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, দলগত কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থী মূলায়নের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
শিক্ষা বাজেট অগ্রাধিকার
শিক্ষা বাজেটকে জিডিপির ৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে, যা গবেষণা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির জন্য ব্যবহার করা হবে। শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ন্যূনতম ১০ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে এবং বরাদ্দ বাজেটের অর্থ গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে হবে।
গবেষণামুখী উচ্চশিক্ষা
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রকৃত অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন জ্ঞান উৎপাদন, গবেষণামুখী ও উদ্ভাবনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে।
নিয়োগ কমিশন প্রণয়ন
শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং মেধাবীদের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শিক্ষা নিয়োগ কমিশন (এডুকেশন সার্ভিস কমিশন) গঠন করতে হবে, যা বিভিন্ন স্তরের নিয়োগ পরীক্ষা, মূল্যায়ন, নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতি পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়ন ও পরিচালনা করবে। এর অধীনে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেল ঘোষণা করতে হবে।
মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার
দেশের আলিয়া ও কওমি মাদরাসার সংস্কারের ক্ষেত্রে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে একটি মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার বোর্ড গঠন করতে হবে, যার কাজ হবে মাদরাসা শিক্ষাকে ধর্ম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষা কারিকুলাম সংস্কার নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি
দেশের সকল ভোকেশনাল, পলিটেকনিক ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার পর্যাপ্ত ও সহজলভ্য করতে হবে।
শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর
শেখার এবং শেখানোর অভিজ্ঞতাকে প্রাণবন্ত করার জন্য ডিজিটাল সরঞ্জাম এবং সংস্থানগুলো শিখন প্রক্রিয়াতে যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং সেবা নিশ্চিতের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম একজন করে সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস্ট নিয়োগ দিতে হবে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সমান সুযোগ দিতে হবে। প্রশাসনের উদ্যোগের শ্রুতিলেখকের ব্যবস্থা, যাতায়তের জন্য বিশেষায়িত পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বুলিং এবং র্যাগিং বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধসংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়