লিবিয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকতে পারে বহু মরদেহ

- Update Time : ০৩:৫৯:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ২২৭ Time View
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আর ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লিবিয়ার দেরনা শহর। চারদিকে লাশের গন্ধে আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে।
দিন-রাত মরদেহ উদ্ধার আর নিখোঁজদের সন্ধানে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। দিন শেষে রাত নেমে আসলেও তাদের কাজ ফুরাচ্ছে না।
বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এখনো হয়তো বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকতে পারে বহু মরদেহ।
এমনকি যারা বেঁচে আছেন তারাও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
দেরনা শহরে যে পরিমাণ ওষুধ এবং খাবার পানি প্রয়োজন স্থানীয় বাসিন্দারা তা পাচ্ছেন না। যারা বাড়ি-ঘর হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা এখনো পৌঁছায়নি। দেরনা শহর থেকে লোকজনকে পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের আঘাত এবং এর প্রভাবে দুটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পুরো শহর পানিতে তলিয়ে গেছে। এর আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত লিবিয়ার বিশেষ দূত জানান, কমপক্ষে ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছে আরও কয়েক হাজার।
লিবিয়ায় রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মকর্তা বলেন, সেখানে মারা গেছে প্রায় ১০ হাজারের মতো মানুষ।
অন্যদিকে দেরনার মেয়র দাবি করেছেন যে, সম্ভবত ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রিসের উপকূলে ভূমধ্যসাগরের ওপর তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড় ‘ড্যানিয়েল’। এর ফলে ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর গ্রিসে রেকর্ড বৃষ্টিপাত ঘটে।
গ্রিসের জাগোরা গ্রামের একটি অংশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা প্রায় ১৮ মাসের বৃষ্টিপাতের সমতুল্য।
থেসালি, মধ্য গ্রিসের অনেক অংশে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। প্রবল বৃষ্টির ফলে গ্রিসে ১৫ জনের প্রাণহানি হয়।
‘ড্যানিয়েল’ ক্রমে শক্তি সঞ্চয় করে লিবিয়ার দিকে অগ্রসর হয় ও ক্রমে ‘মেডিকেন’ (মেডিটেরানিয়ান হারিকেন)-এ পরিণত হয়।
‘মেডিকেন’-এ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ও মধ্য-অক্ষাংশের ঝড়ের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এই ঝড় সাধারণত সেপ্টেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে তৈরি হয়।
লিবিয়ার জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, ১০ সেপ্টেম্বর তীব্রতর হয় ‘ড্যানিয়েল’। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে ১৫০ থেকে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ বন্যা।
সবচেয়ে বেশি হয়েছে লিবিয়ার আল-বায়দাতে। সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গত রোববার ভয়ঙ্কর শক্তি নিয়ে ‘ড্যানিয়েল’ আছড়ে পড়ে লিবিয়ার উপকূলে। ‘ড্যানিয়েল’-এর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় আল-বায়দা, আল-মার্জ, তোবরুক, বাতাহ-র মতো বেশ কিছু শহর। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেরনা ও বেনগাজির।
প্রবল বৃষ্টি ও বানের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লিবিয়ার শহর দেরনা। সেখানের বেশ কয়েকটি নদীবাঁধ রয়েছে।
ঝড়ের তাণ্ডবে তিনটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানির তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে একেবারে সমুদ্রে নিয়ে ফেলেছে বহু বসতি। এর জেরেই বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
পচা দেহের গন্ধ ও স্বজন হারানো পরিবারের লোকেদের আর্তনাদ মিশছে বাতাসে। গণকবর দেওয়া হচ্ছে মরদেহ। পরিচয়ের অপেক্ষায় হাসপাতালে পড়ে আছে বহু লাশ।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়