ঢাকা ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিল ও সাজার ব্যবস্থা করব: উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি জাপানের ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ নিয়ে চুক্তিগুলো বাতিল করা সহজ নয়: উপদেষ্টা রিজওয়ানা ভারত চায় না বাংলাদেশ জনগণের কথায় চলুক: রিজভী পাসপোর্ট নিয়ে প্রবাসীদের সুখবর দিলেন আসিফ নজরুল সরকারি কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণে ১৩ নির্দেশনা আগামী পহেলা বৈশাখে নদ-নদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে –পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বাড়লো ডিসেম্বরেই আসছে মেট্রোরেলের ‘একক যাত্রা’র ২০ হাজার কার্ড শেখ হাসিনা ও রেহানার ব্যাংক হিসাব তলব

মা ও মেয়েকে গণধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার

শরিফুল হক পাভেল
  • Update Time : ০৬:১০:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৯৭ Time View

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় একই সঙ্গে মা ও মেয়েকে হাতমুখ বেঁধে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত ধর্ষক সালাউদ্দিন মিয়া (২২)কে গত ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ ভুইগড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩।

র‍্যাব জানায়, ভিকটিম বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় বসবাস করতো। গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন এবং মামলার অপর আসামী শাকিল ও হারুন একই এলাকায় বসবাস করতো। গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন একসঙ্গেই শাকিল ও হারুনের সাথে দিন মজুরের কাজ করতো এবং অধিকাংশ সময় একসাথেই কাটাতো। ভিকটিমের পূর্ব পরিচিত পলাতক শাকিল অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করে যে, ভিকটিম বিউটি ও তার মা আমেনা বেগম ছাড়া তাদের বাড়িতে অন্য কেউ থাকে না। ভিকটিম বিউটি আক্তারের ছোট ভাই সবুর রেল কোম্পানীতে চাকরি করায় বাড়িটি ছিল পুরুষশুন্য। ভিকটিমদের নির্জনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসামিদের মধ্যে যৌনলিপ্সা পূরণের আকাঙ্খা তৈরী হয়। যৌন আকাঙ্খা পূরণে তারা ভিকটিমদের উপর নজর রাখতে শুরু করে।

সুযোগ বুঝে ভিকটিমদের পূর্ব পরিচিত শাকিল গত ২ অক্টোবর ২০২০ তারিখ রাত ৮ টার সময় ভিকটিমদের বাড়িতে এসে তাদের দরজায় ধাক্কা দিয়ে চাচী চাচী বলে ডাকতে থাকে। পূর্ব পরিচিত শাকিলের ডাকশুনে ভিকটিমরা ঘরের দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে আসে। বাহিরে এসে তারা শাকিলের সাথে আরও দুইজন অপরিচিত ব্যক্তি সালাউদ্দিন ও হারুনকে দেখতে পায়। শাকিল জরুরী কথা আছে বলে ঘরের ভিতরে বসতে চায়। ভিকটিমরা তখন শাকিলসহ তার সহযোগীদেরকে সরল বিশ্বাসে তাদের ঘরের ভেতর বসতে দেয়।

পরিকল্পনা মোতাবেক কিছুক্ষন পর শাকিল হঠাৎ তাদের ঘরে সৌর বিদ্যুৎতের আলো নিভিয়ে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সালাউদ্দিন, শাকিল ও হারুন তিনজন মিলে ভিকটিম বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুনের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে। ধস্তাধস্তির কারনে ভিকটিমরা চিৎকার করতে শুরু করলে শাকিল তার হাতে থাকা দা দিয়ে তাদেরকে কেটে ফেলার ভয় দেখায় এবং বাহিরে তাদের আরও অনেক লোক আছে বলে হুমকি দেয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামিরা কাপড় দিয়ে ভিকটিম মা ও মেয়ের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে এবং জোরপূর্বক পালাক্রমে মা ও মেয়েকে একই সাথে দলবদ্ধভাবে গণর্ধষণ করে। আসামিরা ধর্ষণের ঘটনাটি কাউকে জানালে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

আসামিরা চলে গেলে ভিকটিমরা স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে বিষয়টি জানায়। ইউপি সদস্য ভিকটিমদেরকে চুনারুঘাট থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিম বিউটি বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় শাকিল, সালাউদ্দিন ও হারুনের নাম উল্লেখ পূর্বক ০২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করে। মামলা রুজুর পর অভিযুক্ত সালাউদ্দিন ও শাকিল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং কিশোর হারুন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

মামলার দীর্ঘ বিচারিক পক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ও পলাতক শাকিল এর অনুপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের রায় ঘোষনা করেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডও প্রদান করা হয়।

গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ঘটনার পর থেকেই সে এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে নাম পরিচয় আত্মগোপন করে অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করে। রাজধানীতে ৪-৫ মাস থাকার পর সে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন ভুইগড় এলাকায় চলে যায়। উক্ত এলাকায় গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন অটো চালাতো। অটো চালানোর পাশাপাশি সে অটোর ব্যবসাও শুরু করেছিল।

Please Share This Post in Your Social Media

মা ও মেয়েকে গণধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার

শরিফুল হক পাভেল
Update Time : ০৬:১০:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় একই সঙ্গে মা ও মেয়েকে হাতমুখ বেঁধে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত ধর্ষক সালাউদ্দিন মিয়া (২২)কে গত ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ ভুইগড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩।

র‍্যাব জানায়, ভিকটিম বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় বসবাস করতো। গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন এবং মামলার অপর আসামী শাকিল ও হারুন একই এলাকায় বসবাস করতো। গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন একসঙ্গেই শাকিল ও হারুনের সাথে দিন মজুরের কাজ করতো এবং অধিকাংশ সময় একসাথেই কাটাতো। ভিকটিমের পূর্ব পরিচিত পলাতক শাকিল অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করে যে, ভিকটিম বিউটি ও তার মা আমেনা বেগম ছাড়া তাদের বাড়িতে অন্য কেউ থাকে না। ভিকটিম বিউটি আক্তারের ছোট ভাই সবুর রেল কোম্পানীতে চাকরি করায় বাড়িটি ছিল পুরুষশুন্য। ভিকটিমদের নির্জনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসামিদের মধ্যে যৌনলিপ্সা পূরণের আকাঙ্খা তৈরী হয়। যৌন আকাঙ্খা পূরণে তারা ভিকটিমদের উপর নজর রাখতে শুরু করে।

সুযোগ বুঝে ভিকটিমদের পূর্ব পরিচিত শাকিল গত ২ অক্টোবর ২০২০ তারিখ রাত ৮ টার সময় ভিকটিমদের বাড়িতে এসে তাদের দরজায় ধাক্কা দিয়ে চাচী চাচী বলে ডাকতে থাকে। পূর্ব পরিচিত শাকিলের ডাকশুনে ভিকটিমরা ঘরের দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে আসে। বাহিরে এসে তারা শাকিলের সাথে আরও দুইজন অপরিচিত ব্যক্তি সালাউদ্দিন ও হারুনকে দেখতে পায়। শাকিল জরুরী কথা আছে বলে ঘরের ভিতরে বসতে চায়। ভিকটিমরা তখন শাকিলসহ তার সহযোগীদেরকে সরল বিশ্বাসে তাদের ঘরের ভেতর বসতে দেয়।

পরিকল্পনা মোতাবেক কিছুক্ষন পর শাকিল হঠাৎ তাদের ঘরে সৌর বিদ্যুৎতের আলো নিভিয়ে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সালাউদ্দিন, শাকিল ও হারুন তিনজন মিলে ভিকটিম বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুনের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে। ধস্তাধস্তির কারনে ভিকটিমরা চিৎকার করতে শুরু করলে শাকিল তার হাতে থাকা দা দিয়ে তাদেরকে কেটে ফেলার ভয় দেখায় এবং বাহিরে তাদের আরও অনেক লোক আছে বলে হুমকি দেয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামিরা কাপড় দিয়ে ভিকটিম মা ও মেয়ের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে এবং জোরপূর্বক পালাক্রমে মা ও মেয়েকে একই সাথে দলবদ্ধভাবে গণর্ধষণ করে। আসামিরা ধর্ষণের ঘটনাটি কাউকে জানালে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

আসামিরা চলে গেলে ভিকটিমরা স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে বিষয়টি জানায়। ইউপি সদস্য ভিকটিমদেরকে চুনারুঘাট থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিম বিউটি বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় শাকিল, সালাউদ্দিন ও হারুনের নাম উল্লেখ পূর্বক ০২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করে। মামলা রুজুর পর অভিযুক্ত সালাউদ্দিন ও শাকিল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং কিশোর হারুন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

মামলার দীর্ঘ বিচারিক পক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ও পলাতক শাকিল এর অনুপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের রায় ঘোষনা করেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডও প্রদান করা হয়।

গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ঘটনার পর থেকেই সে এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে নাম পরিচয় আত্মগোপন করে অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করে। রাজধানীতে ৪-৫ মাস থাকার পর সে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন ভুইগড় এলাকায় চলে যায়। উক্ত এলাকায় গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন অটো চালাতো। অটো চালানোর পাশাপাশি সে অটোর ব্যবসাও শুরু করেছিল।