ঢাকা ০২:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষীদাতা সিরু বাঙালির ফাঁসির দাবি উন্নয়ন বৈষম্যের গ্যাঁড়াকলে রংপুর: একনেক থেকে বাদ পড়লো উন্নয়ন প্রকল্প আ’লীগ নেতা তুষার কান্তির ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর সিলেট ওসমানী মেডিকেলের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক মানহানি মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান ফের ৫ দিনের রিমান্ডে আনিসুল হক ও সালমান বসুন্ধরা আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পুনর্বহালে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চায় শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবীতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিভি হাসপাতালের নার্স ও মিডওয়াইফারিরা মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করতে বললেন নাহিদ

মাকসুরা নূর সহ সকল উর্ধতন কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

জাহিদ অমিত
  • Update Time : ০৮:০৯:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৬০ Time View

নার্সিং পেশা ও নার্স কর্মকর্তাদের নিয়ে কটুক্তি করায় মহাপরিচালক মাকসুরা নূর সহ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের সকল নন-নার্সিং প্রশাসন ক্যাডারদের অপসারণ এবং উচ্চ শিক্ষিত, দক্ষ, ও অভিজ্ঞ নার্স কর্মকর্তাদের পদায়ন নিশ্চিত করা ও এক দফা দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করে নার্সিং সংস্কার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেডিকেল এর সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন তারা।

নার্সিং সংস্কার পরিষদ কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ডঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, নার্সিং একটি আন্তর্জাতিক মহৎ পেশা। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্তৃক নিবন্ধিত রেজিস্ট্রার্ড নার্স, মিডওয়াইফ ও নার্সি শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহন করে এবং এই সংগ্রামে গুলিবিদ্ধ ও গ্রেফতার হয় নার্সরা। আন্দোলনকারী আহত শিক্ষার্থীদের সেবায় সম্মুখ ভূমিকা পালন করেছে নার্সরা। হাসপাতালে যখন শুরু থেকে আওয়ামী মদদপুষ্ট কর্তারা সেবাদানে বাধা প্রদান করে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরন সরবারহ বন্ধ করে দেয় ঠিক তখনি নার্সরা জীবনের ঝুকি নিয়ে ছাত্রদের জীবন বাঁচিয়েছে। হাসপাতালে নার্সদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা না থাকলে মৃত্যু সংখ্যা হয়তো দ্বিগুন হতো। ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও করোনা মোকাবিলা, শতভাগ ভ্যাকসিন প্রদান, ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া প্রকোপের মতো দেশের যেকোনো সংকটকালে নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নার্সদের এই অসামান্য ও কঠোর পরিশ্রমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত আজ বিশ্বের দরবারে প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, নার্সিং এর বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন এবং সেবার মান অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে পৃথক সেবা পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নার্সিং একটি স্বতন্ত্র পেশা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেবা পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর হতে পরিচালকসহ সকল প্রশাসনিক পদে যোগ্য ও অভিজ্ঞ নার্স কর্মকর্তাদেরকেই পদায়ন করা হতো। কর্মরত নার্সদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ২০১৬ সালে সেবা পরিদপ্তরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিপ্তরে উন্নীত করা হয়। আধদপ্তরে উন্নীত হওয়ার পর থেকে মহাপরিচালক পদে সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবকে পদায়ন করা হয় এবং পরিচালক পদগুলোতে যোগ্য ও দক্ষ নার্সগণকে পদায়নের কথা থাকলেও জবরদখলের মাধ্যমে সরকারের উপসচিবদের পদায়ন করার মাধ্যমে নার্স সমাজকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।

ডঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে বাক স্বাধীনত না থাকায় কোন প্রতিকার বা অভিযোগ উত্থাপন করার কোন পরিবেশ না থাকায় সাধারণ নার্সগণ বিভিন্ন হয়রানি, অপমান, লাঞ্ছনা নীরবে সহ্য করে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) হয়েও গত ০৮/০৯/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মাকসুরা নূর নার্সিংকে একটি নিম্নমানের চাকুরী/পেশা হিসাবে হেয় পতিপন্ন করেন এবং শেখ হাসিনা আপনাদের ২য় শ্রেনির পদমর্যাদা প্রদান করে ভুল করেছেন বলে উপহাস ও কটূক্তি করেন। যার ফলে সর্বস্তরের নার্স, মিডওয়াইফ এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এহেন গর্হিত আচরনের জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানায়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের নার্সিং পেশা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার পর থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন দক্ষ নার্সিং কর্মকর্তা কর্তৃক নার্সিং সার্ভিস ও শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। নার্সিং ও ফিওয়াইফারি অধিদএর প্রতিষ্ঠার পর হতে বিগত প্রায় এক দশক যাবৎ অত্র অধিদপ্তর (পূর্বের সেবা পরিদপ্তর) এর যাবতীয় কার্যাবলী প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় নার্সিং পেশা সম্পর্কে অপ্রতুল অভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাবে নার্সিং পেশাজীবিদের নিয়মিত পদোন্নতিসহ সকল উন্নয়নমূলক কাজের স্থবিরতা প্রতিফলিত হয়। এমতাবস্থায় নার্সিং পেশার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মহাপরিচালকসহ সকল প্রথম শ্রেণীর পদে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নার্সদের পদোন্নতি পূর্বক পদায়ন করা অতীব জরুরী। আরও উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল বাংলাদেশ নার্সিং পেশার একমাত্র Regulatory Body এবং প্রতিষ্ঠনটি সৃষ্টিলগ্ন হতে বিভিন্ন সময়ে একজন রেজিস্ট্রার্ড নার্স উক্ত কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আসছেন। বিশ্বেও সকল দেশেও নার্সিং কাউন্সিল গুলোতে রেজিস্ট্রার পদে রেজিস্টার্ড নার্সদেরই পদায়ন করা হয়। বিএনএনসি নার্স ও মিডওয়াইফদের নিবন্ধন প্রদান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন, কারিকুলাম প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর মান নিয়ন্ত্রনে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে আসছেন। কিন্তু রেজিস্ট্রার পদের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন নার্সিং কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও উক্ত পদে রেজিস্ট্রার্ড নার্স নিয়োগ প্রদান না’ ‘করে একজন নন-নার্স প্রশাসন ক্যাডারকে পদায়ন করা হয়। যা দেশের নার্স সমাজকে যেমন ব্যথিত করেছে তেমনি আন্তর্জাতিক ভাবেও বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যাহা খুবই হতাসাব্যঞ্জক ও পরিতাপের বিষয়।

এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবৎ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এর প্রেসিডেন্ট পদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবকে মনোনীত করায় প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত গুরুত্ব ও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ও সতন্ত্রতা হারাচ্ছে। এমতাবস্থায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্ট্রার পদে দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন নার্স নিয়োগ/পদায়ন করা অত্যাবশ্যক।

তিনি বলেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর নার্সিং পেশা নিয়ে জঘন্য কটূক্তি ও হেয় প্রতিপন্ন করায় নার্সিং সমাজ বিক্ষুব্ধ হয় এবং এর প্রতিবাদে গত ০৯.০৯.২৪ খ্রি. তারিখ হতে এক দফা দাবি (নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর, সকল পরিচালক, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্ট্রার এর অপসারন এবং উক্ত সকলপদে উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ নার্স কর্মকর্তাগণকে পদায়ন করতে হবে) বাস্তবায়নে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে। ১১.০৯.২৪ খ্রি. তারিখে নার্সিং প্রতিনিধিবৃন্দকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত সভায় দাবী পূরনের আশ্বাস প্রদান করার পরেও গত ১২.০৯.২৪ খ্রি. তারিখে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে রেজিস্টার পদে পুনরায় নন-নার্সিং প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে, যা চলমান আন্দোলনকে উস্কে দেয়ার শামিল এবং নার্সিং সমাজ তা ঘৃণা সহকারে প্রত্যাখ্যান করে।

তিনি আরও বলেন, “পুনঃনির্ধারিত কর্মসূচি মোতাবেক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালিত হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ ১৪/০৯/২০২৪ খ্রি. রোজ শনিবার দেশব্যাপি বাংলাদেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান (মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) ও সকল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

এক দফা যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীকাল ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহৎ কর্মসূচি ও প্রয়োজনে কর্মবিরতি ঘোষণা করা হবে বলে জানান ডঃ শরীফুল ইসলাম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নার্সিং সংস্কার পরিষদ ঢাকা মেডিকেল কলেজের সমন্বয়ক মোঃ নিজাম উদ্দিন, তমাল মাহমুদ, ড. শরিফুল ইসলাম, ড. নূরুল আনোয়ার, রওশন আক্তার, মর্জিনা আক্তার, তমাল মাহমুদ, সাব্বির মাহমুদ তিহান, মাসুদ, পারভেজ, নিজাম উদ্দিন, ফেরদৌস জাহান, ড. ফাহিমা খাতুন, ড. সানজিদা, পারিয়া মিনি, তৌকির আহমেদ, হাফিজুল বারি, আজমল হক রনি সহ সকল সমন্বয়ক ও সকল সাধারন নার্সরা।

Please Share This Post in Your Social Media

মাকসুরা নূর সহ সকল উর্ধতন কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

জাহিদ অমিত
Update Time : ০৮:০৯:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নার্সিং পেশা ও নার্স কর্মকর্তাদের নিয়ে কটুক্তি করায় মহাপরিচালক মাকসুরা নূর সহ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের সকল নন-নার্সিং প্রশাসন ক্যাডারদের অপসারণ এবং উচ্চ শিক্ষিত, দক্ষ, ও অভিজ্ঞ নার্স কর্মকর্তাদের পদায়ন নিশ্চিত করা ও এক দফা দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করে নার্সিং সংস্কার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেডিকেল এর সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন তারা।

নার্সিং সংস্কার পরিষদ কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ডঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, নার্সিং একটি আন্তর্জাতিক মহৎ পেশা। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্তৃক নিবন্ধিত রেজিস্ট্রার্ড নার্স, মিডওয়াইফ ও নার্সি শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহন করে এবং এই সংগ্রামে গুলিবিদ্ধ ও গ্রেফতার হয় নার্সরা। আন্দোলনকারী আহত শিক্ষার্থীদের সেবায় সম্মুখ ভূমিকা পালন করেছে নার্সরা। হাসপাতালে যখন শুরু থেকে আওয়ামী মদদপুষ্ট কর্তারা সেবাদানে বাধা প্রদান করে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরন সরবারহ বন্ধ করে দেয় ঠিক তখনি নার্সরা জীবনের ঝুকি নিয়ে ছাত্রদের জীবন বাঁচিয়েছে। হাসপাতালে নার্সদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা না থাকলে মৃত্যু সংখ্যা হয়তো দ্বিগুন হতো। ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও করোনা মোকাবিলা, শতভাগ ভ্যাকসিন প্রদান, ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া প্রকোপের মতো দেশের যেকোনো সংকটকালে নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নার্সদের এই অসামান্য ও কঠোর পরিশ্রমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত আজ বিশ্বের দরবারে প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, নার্সিং এর বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন এবং সেবার মান অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে পৃথক সেবা পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নার্সিং একটি স্বতন্ত্র পেশা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেবা পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর হতে পরিচালকসহ সকল প্রশাসনিক পদে যোগ্য ও অভিজ্ঞ নার্স কর্মকর্তাদেরকেই পদায়ন করা হতো। কর্মরত নার্সদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ২০১৬ সালে সেবা পরিদপ্তরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিপ্তরে উন্নীত করা হয়। আধদপ্তরে উন্নীত হওয়ার পর থেকে মহাপরিচালক পদে সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবকে পদায়ন করা হয় এবং পরিচালক পদগুলোতে যোগ্য ও দক্ষ নার্সগণকে পদায়নের কথা থাকলেও জবরদখলের মাধ্যমে সরকারের উপসচিবদের পদায়ন করার মাধ্যমে নার্স সমাজকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।

ডঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে বাক স্বাধীনত না থাকায় কোন প্রতিকার বা অভিযোগ উত্থাপন করার কোন পরিবেশ না থাকায় সাধারণ নার্সগণ বিভিন্ন হয়রানি, অপমান, লাঞ্ছনা নীরবে সহ্য করে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) হয়েও গত ০৮/০৯/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মাকসুরা নূর নার্সিংকে একটি নিম্নমানের চাকুরী/পেশা হিসাবে হেয় পতিপন্ন করেন এবং শেখ হাসিনা আপনাদের ২য় শ্রেনির পদমর্যাদা প্রদান করে ভুল করেছেন বলে উপহাস ও কটূক্তি করেন। যার ফলে সর্বস্তরের নার্স, মিডওয়াইফ এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এহেন গর্হিত আচরনের জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানায়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের নার্সিং পেশা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার পর থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন দক্ষ নার্সিং কর্মকর্তা কর্তৃক নার্সিং সার্ভিস ও শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। নার্সিং ও ফিওয়াইফারি অধিদএর প্রতিষ্ঠার পর হতে বিগত প্রায় এক দশক যাবৎ অত্র অধিদপ্তর (পূর্বের সেবা পরিদপ্তর) এর যাবতীয় কার্যাবলী প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় নার্সিং পেশা সম্পর্কে অপ্রতুল অভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাবে নার্সিং পেশাজীবিদের নিয়মিত পদোন্নতিসহ সকল উন্নয়নমূলক কাজের স্থবিরতা প্রতিফলিত হয়। এমতাবস্থায় নার্সিং পেশার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মহাপরিচালকসহ সকল প্রথম শ্রেণীর পদে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নার্সদের পদোন্নতি পূর্বক পদায়ন করা অতীব জরুরী। আরও উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল বাংলাদেশ নার্সিং পেশার একমাত্র Regulatory Body এবং প্রতিষ্ঠনটি সৃষ্টিলগ্ন হতে বিভিন্ন সময়ে একজন রেজিস্ট্রার্ড নার্স উক্ত কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আসছেন। বিশ্বেও সকল দেশেও নার্সিং কাউন্সিল গুলোতে রেজিস্ট্রার পদে রেজিস্টার্ড নার্সদেরই পদায়ন করা হয়। বিএনএনসি নার্স ও মিডওয়াইফদের নিবন্ধন প্রদান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন, কারিকুলাম প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর মান নিয়ন্ত্রনে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে আসছেন। কিন্তু রেজিস্ট্রার পদের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন নার্সিং কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও উক্ত পদে রেজিস্ট্রার্ড নার্স নিয়োগ প্রদান না’ ‘করে একজন নন-নার্স প্রশাসন ক্যাডারকে পদায়ন করা হয়। যা দেশের নার্স সমাজকে যেমন ব্যথিত করেছে তেমনি আন্তর্জাতিক ভাবেও বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যাহা খুবই হতাসাব্যঞ্জক ও পরিতাপের বিষয়।

এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবৎ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এর প্রেসিডেন্ট পদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবকে মনোনীত করায় প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত গুরুত্ব ও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ও সতন্ত্রতা হারাচ্ছে। এমতাবস্থায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্ট্রার পদে দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন নার্স নিয়োগ/পদায়ন করা অত্যাবশ্যক।

তিনি বলেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর নার্সিং পেশা নিয়ে জঘন্য কটূক্তি ও হেয় প্রতিপন্ন করায় নার্সিং সমাজ বিক্ষুব্ধ হয় এবং এর প্রতিবাদে গত ০৯.০৯.২৪ খ্রি. তারিখ হতে এক দফা দাবি (নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর, সকল পরিচালক, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্ট্রার এর অপসারন এবং উক্ত সকলপদে উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ নার্স কর্মকর্তাগণকে পদায়ন করতে হবে) বাস্তবায়নে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে। ১১.০৯.২৪ খ্রি. তারিখে নার্সিং প্রতিনিধিবৃন্দকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত সভায় দাবী পূরনের আশ্বাস প্রদান করার পরেও গত ১২.০৯.২৪ খ্রি. তারিখে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে রেজিস্টার পদে পুনরায় নন-নার্সিং প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে, যা চলমান আন্দোলনকে উস্কে দেয়ার শামিল এবং নার্সিং সমাজ তা ঘৃণা সহকারে প্রত্যাখ্যান করে।

তিনি আরও বলেন, “পুনঃনির্ধারিত কর্মসূচি মোতাবেক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালিত হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ ১৪/০৯/২০২৪ খ্রি. রোজ শনিবার দেশব্যাপি বাংলাদেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান (মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) ও সকল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

এক দফা যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীকাল ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহৎ কর্মসূচি ও প্রয়োজনে কর্মবিরতি ঘোষণা করা হবে বলে জানান ডঃ শরীফুল ইসলাম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নার্সিং সংস্কার পরিষদ ঢাকা মেডিকেল কলেজের সমন্বয়ক মোঃ নিজাম উদ্দিন, তমাল মাহমুদ, ড. শরিফুল ইসলাম, ড. নূরুল আনোয়ার, রওশন আক্তার, মর্জিনা আক্তার, তমাল মাহমুদ, সাব্বির মাহমুদ তিহান, মাসুদ, পারভেজ, নিজাম উদ্দিন, ফেরদৌস জাহান, ড. ফাহিমা খাতুন, ড. সানজিদা, পারিয়া মিনি, তৌকির আহমেদ, হাফিজুল বারি, আজমল হক রনি সহ সকল সমন্বয়ক ও সকল সাধারন নার্সরা।